৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:৫১

কঠোর নিরাপত্তা জালে ঢাকা

বাস, লঞ্চ, রেলস্টেশন ও হোটেল-ছাত্রাবাসে নজরদারি

৮ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সর্বত্র চলছে কঠোর নজরদারি। সবমিলিয়ে কঠোর নিরাপত্তা জালে রাজধানী ঢাকা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চ স্টেশন, রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকার পথঘাট, হাইওয়ে, আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউজ, গেস্ট হাউজ, ছাত্রাবাসসহ সবখানে নজরদারি রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ দিকে রাজধানীতে যানবাহন চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় যানবাহন কম আসছে। গত এক দিনেই রাজধানীসহ সারা দেশে চার শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। রাজধানীতেই ২৬৮ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায়কে ঘিরে গোটা দেশে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে যেকোনো ধরনের জমায়েত ও মিছিল-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ রায়কে সামনে রেখে এক দিকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অপর দিকে দেশজুড়ে চলছে কড়া নজরদারি। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক দিন ধরে বিপুল পুলিশ মোতায়েন লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বিশেষ নজরদারির জন্য। গতকাল রাজধানীর সব বাস টার্মিনাল, লঞ্চ স্টেশন, রেলস্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন লক্ষ করা যায়। পুলিশ ছাড়াও গতকাল বিভিন্ন স্থানে র্যাব সদস্যদের দেখা গেছে। নয়া পল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনেও র্যাব সদস্যদের দেখা যায়।
গত ৩০ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে হাইকোর্টের সামনে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতা কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ ভ্যান থেকে তিন বিএনপি কর্মীকে মুক্ত করে নেয় দলীয় নেতাকর্মীরা। ওই দিন থেকেই শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযান আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য। ৮ ফেব্রুয়ারির পরিস্থিতি দেখে অভিযান সম্পর্কে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। দেশের কোথাও যাতে কোনো রূপ আন্দোলন দানা বাধতে না পারে সে জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর সে টার্গেট সামনে রেখেই চালানো হচ্ছে গ্রেফতার অভিযান। শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়; ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলের নেতাকর্মীরাও গ্রেফতার হচ্ছেন।

প্রথমে ঢাকায় গ্রেফতার অভিযান সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেদার গ্রেফতার শুরু হয়েছে। বর্তমানে যা গণগ্রেফতারে রূপ নিয়েছে। গত ৭ দিনে ১২ শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকালই গ্রেফতার হয়েছে চার শতাধিক। গতকাল রাজধানীতেই ২৬৮ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। যাদের বিনা কারণে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ সারিরও অনেক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী সোহেল গ্রেফতার হয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। মালিবাগ এলাকা থেকে ভোরে তিনি গ্রেফতার হন। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, নাজিম উদ্দিন আলম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ও আনিসুর রহমান খোকন গ্রেফতার হয়েছেন।

এ দিকে রাজধানীর গেস্ট হাউজ, রেস্ট হাউজ, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের কঠোর নজরদারি চলছে। রাজধানীর পথে পথে ব্যাপক তল্লাশির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। আজ এ অভিযান আরো জোরদার হবে বলে জানা গেছে। গাবতলীতে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বাইরে থেকে ঢাকায় আসতে মানুষকে নানা জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নজরদারি ও গ্রেফতার অভিযান চলছে। ঝালকাঠীর রাজাপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা গতকাল জানান, তাদের অনেকেই বর্তমানে এলাকায় নেই। যে যেভাবে পারছেন পুলিশের গ্রেফতার এড়িয়ে চলছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/291741