৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:৫০

সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাকস্বাধীনতায় আঘাত করবে

ডেইলি স্টার সেন্টারে গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে গতকাল সম্পাদক পরিষদের এক বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের প হতে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের হয়রানিমূলক ৫৭ ধারা বাতিল করে ওই ধারার বিতর্কিত বিষয়গুলো প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রেখে দেয়া এবং এর পাশাপাশি আরো নতুন কয়েকটি কঠোর ধারা সংযোজন করায় গভীর উদ্বেগ ও ােভ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের এই সংগঠন অবিলম্বে ৫৭ ধারাসহ আইসিটি আইনের বিতর্কিত সব ধারা বাতিল এবং প্রস্তাবিত নতুন আইনে যুক্ত ৩২ ধারাসহ বিতর্কিত ধারাগুলো খসড়া থেকে বাদ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ মনে করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি প্রসঙ্গে অপরাধের ধরন ও শাস্তির যে বিধান রাখা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনা এবং বাকস্বাধীনতায় আঘাত করবে। একই সাথে তা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করবে। প্রস্তাবিত এ আইনে কেউ কোনো সরকারি সংস্থার গোপনীয় তথ্য কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করলে তা কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি বলে সাব্যস্ত করে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যে শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড। একাধিকবার কেউ এই অপরাধ করলে তার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর মতো বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই সন্নিবেশিত ছিল। সে সবের ক্রমাগত অপপ্রয়োগ হতে থাকায় সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প থেকে আইনটি বাতিলের জোরালো দাবি ওঠে। সে আইন পরিমার্জনার নামে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সেই চারটি বিষয়ই চার ভাগ করে প্রতিটির জন্য আলাদা শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, পুরনো আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের সংশ্লিষ্ট রাখা প্রয়োজন।

এতে বলা হয়, আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্তি হবে। কিন্তু ৫৭ ধারার বিষয়বস্তুগুলো প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় সুকৌশলে রেখে দেয়া হয়েছে।
সম্পাদক পরিষদ মনে করে, প্রস্তাবিত এ আইন আরো কঠোর। এটি শুধু মুক্ত সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিসরকেও সঙ্কুচিত করবে। তাই তাড়াহুড়া না করে অংশীজনদের সাথে আলোচনা সাপেে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি চূড়ান্ত করার দাবি জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন : গোলাম সারওয়ার, সমকাল; মাহফুজ আনাম, ডেইলি স্টার; মতিউর রহমান চৌধুরী, মানবজমিন; রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, নিউজ টুডে; আলমগীর মহিউদ্দিন, নয়া দিগন্ত; এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস; খন্দকার মুনিরুজ্জামান, সংবাদ; নূরুল কবীর, নিউ এইজ; শ্যামল দত্ত, ভোরের কাগজ; নঈন নিজাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন; সাইফুল আলম, যুগান্তর; দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, বণিকবার্তা; এম শামসুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট; এম এ মালেক, আজাদী; এ এম এম বাহাউদ্দিন, ইনকিলাব; মো: মোজাম্মেল হক, করোতোয়া; জাফর সোবহান, ঢাকা ট্রিবিউন ও মতিউর রহমান, প্রথম আলো। বিজ্ঞপ্তি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/291772