৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৬

ইংরেজি প্রথমপত্রের প্রশ্নও ফাঁস!

বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্রের পর ইংরেজি প্রথমপত্রের প্রশ্নও ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার পরীক্ষা শুরুর প্রায় দু’ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ফাঁস করা হয়, যার সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, ‘পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পর একটি গণমাধ্যম থেকে আমাকে ফাঁসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউই আমলে নেবে না। যদি ফাঁস হয়েই থাকত, তাহলে তারা আমাদের ইমেইলে দিয়ে রাখতে পারত। এতে তারাও প্রমাণ করতে পারত।’

ঢাকার বাইরে থেকেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পটুয়াখালীর বাউফল প্রতিনিধি শিবলি সাদিক জানান, সকাল ৯টার কিছু পরে বাউফলের চারটি কেন্দ্রের একটিতে গিয়ে দেখা যায়, জটলা বেঁধে ৫-৬ জন ছাত্র কিছু একটা মোবাইল ফোনে দেখছে। তখন তিনিসহ দু’জন সাংবাদিক সেখান থেকে দুটি সেট প্রশ্ন নেন। পরীক্ষার পর মিলিয়ে দেখেছেন, কথিত ‘ক’ সেট প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের মিল রয়েছে। ওই ছাত্ররা ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রশ্নটি পেয়েছে, যা ঢাকা থেকে গেছে বলে দাবি করা হয়। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন দাবি করেছেন, সোমবার সকাল ৮টা ৪ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের ‘ঊহমষরংয ১ংঃ ঢ়ধৎঃ ২০১৮’ নামের একটি গ্রুপে ইংরেজি প্রথমপত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। এরপর ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নটি ছড়িয়ে পড়ে। বাউফল প্রতিনিধি আরও জানান, তিনি সকাল থেকে উপজেলা ট্রেজারির সামনে প্রশ্নপত্র বিলি থেকে কেন্দ্রে পৌঁছানো পর্যন্ত অনুসরণ করেন। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র ট্রেজারিতে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রহণ করেননি। তিনি তার প্রতিনিধি পাঠান। ওই প্রতিনিধি পুলিশ পাহারায় প্রশ্ন নিয়ে যান। কেন্দ্রে পৌঁছানোর কিছু সময় পর কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে প্রশ্নের প্যাকেট খোলার ব্যবস্থা করেন। এরপর প্রশ্ন বাহক-শিক্ষক বেরিয়ে যান। দূরে একটি বাসায় তিনি কিছু ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। অবশ্য ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ পরীক্ষার্থী ছিল না। পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নবাহকের এভাবে কেন্দ্রের বাইরে যাওয়া নিয়ে ফাঁসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একের পর এক প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠছে যে সময়, ঠিক এমন সময়ে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজে প্রশ্ন গ্রহণ না করে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

প্রশ্নফাঁস চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার ৪ : ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় চার শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি কেন্দ্র থেকে উপজেলার সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্লাবন ঘোষ, বোয়ালমারী গভর্মেন্ট গার্লস স্কুলের রইচ উদ্দিন ও সালমান মাহমুদ এবং জর্জ একাডেমির সহকারী শিক্ষক শাহিন ফকিরকে গ্রেফতার করা হয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব জর্জ একাডেমির প্রধান শিক্ষক এমএ আজিজ জানান, পরীক্ষা শুরুর পরপর ওই চার শিক্ষক পরীক্ষা কক্ষে না গিয়ে শিক্ষকদের রুমে বসে প্রশ্ন কেন্দ্রের বাইরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় কেন্দ্র পরিদর্শক সুদীপ বিশ্বাস বিষয়টি টের পেয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তল্লাশি করে চার শিক্ষকের কাছে দুটি প্রশ্নের কপি ও হাতে লেখা উত্তরপত্র পাওয়া যায়। ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে বলে জানান বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আরা পলি।
কেন্দ্র সচিব বহিষ্কার : রাজধানীর শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার দায়ে কেন্দ্র সচিব অলিউর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভুল প্রশ্ন বিতরণের দায়ে সংশ্লিষ্ট কক্ষের এক পরিদর্শককেও বহিষ্কার করা হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, নিয়মিত ছাত্রদের ২০১৮ সালের কারিকুলামের পরিবর্তে ২০১৭ সালের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা উত্তর লিখতে গিয়ে বিষয়টি শনাক্ত করে। এর মধ্যে চলে যায় ৩০ মিনিট। এরপর নতুন প্রশ্নপত্র দেয়া হয়। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা বেলা একটার পরিবর্তে দেড়টায় শেষ করা হয়।

১২৯ জন বহিষ্কার : সোমবার এসএসসি ও এসএসসি ভোকেশনালে ইংরেজি এবং মাদ্রাসায় দাখিলে আকাঈদ ও ফিকহ বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। এতে সারা দেশে ১২৯ জন শিক্ষক বহিষ্কার হয়েছেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী কেবল রাজশাহীতে তিন শিক্ষক বহিষ্কার হয়েছেন। অথচ ঢাকা বোর্ডের অধীন ফরিদপুরে ৪ শিক্ষকের বহিষ্কারের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি কমিটির প্রতিবেদনে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে এসএসসিতেই আছে ৭৫ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডেই ৩৮ জন। কারিগরি বোর্ডে ৩৪ এবং মাদ্রাসা বোর্ডে ২০ জন। বাকিরা অন্য বোর্ডের। এদিন ১৮ লাখ ৩ হাজার ৯৩২ জনের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু অংশ নেয় ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৮৮ জন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিল।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/14728