৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ১০:১৩

৪৭ কোটি টাকা পানিতে ফেলার আয়োজন

বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার এক্সেস সড়ক। জমে যায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার কাজের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী সড়কটি উঁচু করা হবে প্রায় এক ফুট। তবে চার ফুটেরও বেশি উঁচু করা প্রয়োজন যে সড়ক, তা মাত্র এক ফুট উঁচু করা শুধু টাকার শ্রাদ্ধ বলেই মনে করছেন এলাকাবাসীসহ সংশ্নিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও সিটি করপোরেশনের। এলজিইডিকে দায়ী করছে সিটি করপোরেশন। আর এলজিইডি বলছে, চসিকের চাহিদা অনুসারেই করা হয়েছে ওই নকশা।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা সমকালকে বলেন, 'এলাকাবাসীর দাবি এবং প্রস্তাবিত সড়ক সংস্কারের নকশার মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য। তবে এই ত্রুটি আমরা করিনি। এলজিইডি করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজন সাপেক্ষে নকশা সংশোধনের ব্যবস্থা করব।'

এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'আগ্রাবাদে সড়ক সংস্কারের এই প্রকল্পের নকশা করা হয়েছিল সিটি করপোরেশনের চাহিদা অনুযায়ী। তখন সাড়ে ১১ ইঞ্চি উঁচু করার কথা ছিল। এখন বেপারীপাড়াসহ সড়কের কিছু অংশে আড়াই থেকে চার ফুট উঁচু করে নকশা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চসিকের প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টি পুনর্বিবেচেনা করা হবে। তবে প্রকল্প সংশোধন করা হলে ব্যয়ও অনেক বেড়ে যাবে।'

চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ জানিয়েছেন, গত রোববারও প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। মেয়রের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নকশা সংশোধন করে পাঠাতে বলা হয়েছে। বর্ষায় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

চসিক প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, জাইকার অর্থায়নে 'সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ৯০ ফুট প্রস্থ ও দুই দশমিক ৩৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। চসিক গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কাজ করার সম্মতিপত্র প্রদান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিইএল-রয়েলকে। একই মাসের ২০ তারিখে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সড়ক উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। কাজ শেষ করার কথা আগামী বছরের মে মাসে।

গত রোববার সরেজমিন দেখা যায়, বেপারীপাড়া ও ছোটপুল এলাকায় সড়কের পাশের নালার কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কিছু গাছ কাটা হয়েছে সংস্কার কাজের জন্য। নালার মাটি রাস্তার ওপর রাখায় জন ও যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

সড়কটিতে প্রতিদিন যাতায়াতকারী হালিশহরের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তোফায়েল আহমদ সমকালকে বলেন, মাত্র এক ফুট উঁচু করলে তো দুর্ভোগ থেকেই যাবে, কারণ এখানে তো এর তিনগুণ পানিতে সয়লাব হয় বর্ষার শুরুতেই।

সিএনজিচালক রমিজ মিয়া বলেন, সড়কটি অধিকাংশ স্থানে জোয়ারের পানিতেই দুই ফুট ডুবে থাকে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানির উচ্চতা কোনো কোনো স্পটে তিন ফুট ছাড়িয়ে যায়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল সমকালকে বলেন, 'বৃষ্টি হলে আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কটির বেপারীপাড়া, গোল্ডেনটাচ কমিউনিটি সেন্টার ও ছোটপুল এলাকা বর্ষাকালে দুই থেকে আড়াই ফুট পানিতে ডুবে থাকে। তাই ভুক্তভোগীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের শেষ দিকে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে মেয়র যেখানে যতটুকু প্রয়োজন সেভাবে সংস্কার করতে বলেছেন; কিন্তু সেভাবে তা করা হচ্ছে না।'

 

http://samakal.com/todays-print-edition/tp-mohanagar/article/1802844