৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৯:৫১

ভারতীয় ট্রানজিট পণ্যে শুল্ক করারোপ নয়

দ্রুত চুক্তি চায় ভারত * সচিব পর্যায়ের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠক স্থগিত

চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের ওপর শুল্ক করারোপ না করার চিন্তা করছে বাংলাদেশ। জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্রাফিক অ্যান্ড ট্রেড (গ্যাট) অথবা ওয়ার্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) মূলনীতি অনুসরণ করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এক চিঠিতে ভারতীয় ট্রানজিট পণ্যের ওপর শুল্ক করারোপ না করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে দেয়া ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ট্রানজিট পণ্যের ওপর শুল্ক করারোপ না করার বিষয়ে একমত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর কর্মকর্তারা। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েই নেয়া হবে।
এদিকে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও ভারতের সচিব পর্যায়ের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য আমদানি-রফতানি চুক্তির বিষয়ে আলোচনাসহ ৫টি এজেন্ডা ছিল। বাকি এজেন্ডাগুলো হচ্ছে- দু’দেশের মধ্যে যাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে এসওপি স্বাক্ষর। দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অভ্যন্তরীণ নৌ-বাণিজ্য প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) সংশোধন, দু’দেশের দুই স্থলবন্দর ব্যবহারবিষয়ক আলোচনা এবং নৌ-বাণিজ্য সংক্রান্ত অন্যান্য আলোচনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুস সামাদ যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে শুল্ক কর আরোপের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর মতামত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাট ও ডব্লিউটিও’র মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়ার ওপর মতামত চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে কপি পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর এ চুক্তির বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনুমোদন নেয়া হবে। দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনে দ্রুত চুক্তি করতে চায় ভারত। খসড়া চুক্তিতে দুই বন্দরে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে ডেডিকেটেড জেটি চাওয়া হয়েছিল। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য চাপ বেশি থাকায় ডেডিকেটেড জেটি দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান তারা। এ দুই বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে ২০১৫ সালের ৬ ও ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
সূত্র জানায়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ২৩ জানুয়ারি এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এজেন্ডাগুলো নিয়ে মতামত দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের চিঠি নিয়েও আলোচনা হয়। চিঠিতে ট্রানজিট পণ্যের বিষয়ে গ্যাট বা ডব্লিউটিও’র নীতিমালা অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গ্যাট বা ডব্লিউটিও’র কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মূল নীতি হচ্ছে- ট্রানজিট কার্গোর ওপর শুল্ক আরোপযোগ্য নয়। ট্রানজিট পণ্যের ওপর এর আগে কখনও শুল্ক কর আরোপ করা হয়নি। এখন শুল্ক কর আরোপের উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে ঘোষিত সহযোগিতা নীতির পরিপন্থী হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ট্রানজিট পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে প্রশাসনিক ব্যয় হয়, তা আদায় করা যায়। ট্রানজিটের জন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করলে যুক্তিসঙ্গত মুনাফাসহ বিনিয়োগ আদায় করা যায়। এক্ষেত্রে লঘু অপরাধ বা অনিয়মের জন্য গুরুদণ্ডও দেয়া যেতে পারে।

বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় যেসব পণ্য আনা-নেয়া করা হবে, তা ট্রানজিট পণ্য হিসেবে গণ্য হবে। এসব পণ্যের ওপর শুল্ক করারোপ না করার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। তারা আরও বলেন, এর আগে ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আরেক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গ্যাট বা ডব্লিউটিও’র নীতিমালা সংযুক্ত করে বাংলাদেশ পক্ষের চূড়ান্ত চুক্তি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতে পাঠানো হয়েছে। সে বিষয়ে মতামত পাওয়ার পর তা ভেটিংয়ে পাঠানো হবে। এরপর তা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করলে মন্ত্রিপরিষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে। এরপরই দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হবে, যা এখনও সময়সাপেক্ষ বিষয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অভ্যন্তরীণ নৌ-বাণিজ্য প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) সংশোধনের ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের পানগাঁও ও ভারতের ধুবরীকে ‘পোর্ট অব কল’ভুক্তকরণ এবং ‘নো ম্যানস’ এলাকার সমস্যাবিষয়ক সংশোধনী আসবে। এছাড়া বাংলাদেশি ট্রাক, ট্রাক্টর ও ট্রেলার আখাউড়া সীমান্ত থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত যাওয়ার প্রস্তাব নৌ-প্রটোকল চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর নৌ বাণিজ্য প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরে ২০১৫ সালের ৬ জুন ওই চুক্তিটি পর্যালোচনা করে পুনঃস্বাক্ষরিত হয়।

 

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/14427