৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১১:৫৪

দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাংক আবার অর্থ পাবে

দেয়া হতে পারে ২০০০ থেকে ২২ শ’ কোটি টাকা

দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছরেও টাকা দেবে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। এই অর্থের পরিমাণ হতে পারে দুই হাজার থেকে ২২ শ’ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও বাজেটে এ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত রোববার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের একটি ব্যাংকের বিপর্যয়ও আমরা হতে দিতে পারি না। কারণ, একটি ব্যাংকের সামান্যতম বিপর্যয় পুরো খাতকে ধ্বংস করে দেবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের মূলধনের জন্য প্রতি বছর আমরা বাজেট থেকে কিছু অর্থ দিই। সামনের বাজেটেও (২০১৮-২০১৯) এ ব্যবস্থা রাখা হবে।
এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরেও এর ব্যতিক্রম হবে না। প্রাথমিক হিসাবে এ খাতে দুই হাজার থেকে ২২ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
এ দিকে, অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে গত ৯টি অর্থবছরে ১৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকাই দেয়া হয়েছে গত পাঁচটি অর্থবছরে। এই অর্থের মধ্যে সর্বাধিক পেয়েছে বেসিক ও সোনালী ব্যাংক। এ দু’টি সর্বাধিক দুর্নীতগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এক অর্থবছরে সর্বাধিক ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে এসব সরকারি ব্যাংককে। এর পুরোটাই দেয়া হয়েছে জনগণের করের টাকা থেকে। প্রতি অর্থবছর ‘রিক্যাপিটালাইজেশন’ বা পুনর্মূলধনের আওতায় এই ব্যাংকগুলোকে ঋণ হিসেবে অর্থ দেয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত ঋণের এই অর্থ এসব ব্যাংক থেকে ফেরত পাওয়া যায়নি।
সরকারি বাজেট ডকুমেন্ট ও অর্থ বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পুনর্মূলধন খাতে এক হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে দেয়া হয় এক হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে দেয়া হয় ৭০০ কোটি টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৪২০ কোটি টাকা এবং ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে দেয়া হয় ৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দেয়া হয় দুই হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে দেয়া হয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা এবং আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত চার অর্থবছরে শুধু সোনালী ও বেসিক ব্যাংককে পুনর্মূলধন খাত থেকে অর্থ দেয়া হয়েছে ৬ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। ২০১৩-২০১৪ ও ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক এ খাত থেকে অর্থ পেয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ও ৭১০ কোটি টাকা। ‘হলমার্ক’ কেলেঙ্কারির কারণে সোনালী ব্যাংকের খোয়া গেছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকাÑ যার একটি কানাকড়িও আদায় করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি।
একইভাবে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বেসিক ব্যাংককে ২০১৪-২০১৫ এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে পুনর্মূলধন খাতে দেয়া হয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ১৯০ কোটি এবং ১২ শ’ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংক থেকেও লুটে নেয়া হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর সাথে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাংককে বাঁচানোর জন্য জনগণের করের টাকা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছরেও একই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮ শ’ কোটি টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/290905