৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১১:৫২

বন্ধ হতে পারে স্মার্ট এনআইডি প্রকল্প

চাকরি স্থায়ীকরণ না হলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া)’ প্রকল্পের ৩২ কর্মকর্তা। তারা এরই মধ্যে তাদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি না করার জন্য প্রকল্প পরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন। টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট পদে চাকরিরত ওই ৩২ জন পদত্যাগ করলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট সব সেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন প্রকল্প পরিচালক। আমি ঘটনাটি শুনেছি। আইডিয়া প্রকল্পের লোকজন রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তরসহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়া দিয়েছে। প্রকল্প পরিচালকই বিষয়টি দেখার উপযুক্ত।
এনআইডি উইং সূত্র জানায়, আইডিয়া প্রকল্পে বর্তমানে ৫৪ জন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ও ২৪ জন টেকনিক্যাল সাপোর্ট পদে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া প্রায় এক হাজার ২০০ জনবল সারা দেশে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ‘ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সহায়তা প্রদান প্রকল্প (পিইআরপি)’-এ ২০০৭ সাল থেকে কাজ করছেন। চাকরি থেকে ইস্তফার ঘোষণা দেয়া ৩২ কর্মকর্তার মধ্যে ২০ জন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ও ১২ জন টেকনিক্যাল সাপোর্ট পদে কর্মরত। এসব কর্মকর্তা শুধু নির্দিষ্ট স্কেলে বেতন পান। কিন্তু কোনো ধরনের উৎসব ভাতা বা বোনাস পান না তারা। এমনকি ঢাকার বাইরে কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম বা ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে কোনো ধরনের ভাতা পান না তারা। এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা আন্দোলন করেও ফল পাননি আইডিয়া প্রকল্পে কর্মরতরা।
আইডিয়া প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১০ বছর জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার সাথে জড়িত ওই ৩২ কর্মকর্তাসহ বাকিরা সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার জন্য প্রকল্প পরিচালক বরাবর একাধিকবার আবেদন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে পিইআরপি কর্তৃপক্ষ প্রকল্প শেষে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান আইডিয়া প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করে ওই পদগুলোর জন্য সরকারি বেতন কাঠামো অনুযায়ী পদ সৃষ্টি অথবা সমমানের পদের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে নেয়া হবে মর্মে আশ্বাস দিয়েছিল। ২০১৩ সালের ১০ জুলাই নির্বাচন কমিশনের ৪৬তম সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। কিন্তু পরে একাধিকবার আইডিয়া প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করা হলেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি আইডিয়া প্রকল্পের ডিপিপির দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পদ ও বেতন সমন্বয় করার বিষয়টি বলা হলেও কোনো এক অজানা কারণে সেটি বাস্তবায়ন না করেই ওই ডিপিপি সংশোধন করা হয়। একাধিকবার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও ওই সব পদ পুনর্বহাল থাকায় এবং সরকারের বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন কাঠামো না হওয়ায় খোদ নির্বাচন কমিশনেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান আইডিয়া প্রকল্পের মেয়াদ চলতি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিশেষভাবে বর্ধিত করা হয়েছে। আর সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিতকরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কিন্তু ডিপিপিতে এসব কর্মকর্তাকে স্থায়ীকরণের বিষয়ে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলমান ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নিবন্ধিত নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই সেবা প্রদান, নাগরিকদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসিতে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি জরুরি। ইস্তফার ঘোষণা দেয়া ওই ৩২ কর্মকর্তা ডাটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিই করে থাকেন। তাদের নেতৃত্বেই নিবন্ধনকৃত ডাটা আপলোড, ডাটাবেজ সংশোধন, পরিমার্জন, আইটিসংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান, আইডি কার্ড তৈরি, প্রিন্ট, ভোটারদের তালিকা অনুযায়ী পুনর্বিন্যাস, স্থানান্তর, মৃত ভোটারদের কর্তন, সংশোধন, হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকার পিডিএফ তৈরি ভোটার তালিকা প্রিন্ট ও সিডি রাইট করার কাজ হয়ে থাকে। এ ছাড়া আঙুলে ছাপ যাচাইয়ের মাধ্যমে দ্বৈত ভোটার শনাক্ত ও মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিতের কাজটি করে থাকেন এ টিমের সদস্যরা। ফলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম। এমনকি ব্যাহত হতে পারে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/290904