৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১১:৫০

বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নও ফেসবুকে

এসএসসির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নও পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়েছে। এরপরই তা বিভিন্নজন শেয়ার করেন। রাজধানীর বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন দেখতে দেখা গেছে। বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনী) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরপত্রসহ প্রশ্নের ছবি পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সাথে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষার সময় যেভাবে প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া গিয়েছিল গতকালও একইভাবে প্রশ্ন মিলেছে ফেসবুকে। এ নিয়ে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। অনেক অভিভাবক নয়া দিগন্তের কাছে জানতে চেয়েছেন, ফেসবুকে পাওয়া প্রশ্নের সাথে মিল হওয়ার পরও অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলো বাতিল হবে কি না। হলে সে সিদ্ধান্ত কবে পাওয়া যাবে?

অভিভাবকদের এসব উদ্বেগ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: শাহেদুল খবির চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকেই আমরা অভিযোগগুলো পাচ্ছি। সব অভিযোগই আসছে, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর। পরীক্ষা শেষের অভিযোগ নিয়ে তো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। অভিযোগগুলো আমরা তাৎক্ষণিকভাবেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিটিআরসিকে অবহিত করেছি।
ভারপ্রাপ্ত বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, সব অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের নিয়মিত পর্যালোচনা হচ্ছে। আর পরীক্ষা বাতিলের বিষয় তো আপনিও বোঝেন, এর সাথে ২০ লাখ পরীক্ষার্থী জড়িত। এ ছাড়া পরীক্ষা বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। এ মুহূর্তে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা চলবে।
অভিভাবকদের উদ্বেগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এ উদ্বেগ তো স্বাভাবিক। আমরা সবাই এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আমরা তো কারিগরি বিষয়টি দেখেনি।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত দিনে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলেও তা বিটিআরসি কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সময়মতো জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষাসংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটিতে থাকা ওই দুই সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা জানতে চাইলে মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ড থেকে এ ধরনের তথ্য না জানানোর কথা জানান তারা। এবার অবহিত করা হচ্ছে। তবে অজ্ঞাত কারণে গতকাল পর্যন্ত বিটিআরসি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার কাছেও এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। কারো বিরুদ্ধে আপত্তিকর কোনো মন্তব্য বা ছবি ফেসবুকে দেয়া হলে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উক্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কেন নীরব ও নিষ্ক্রিয়?
গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই ১০০ শতাংশ মেলার নিশ্চয়তা দিয়ে দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁস করার বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছিল ফেসবুক গ্রুপে। শনিবার সকাল ৯টা ৩ মিনিটে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্রটি ফেসবুকে একটি গ্রুপে পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্রটি ওই গ্রুপে আপলোড হওয়ার সাথে সাথে মুহূর্তের মধ্যে অন্যান্য অনেক গ্রুপ ও পেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নের সাথে ওই প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ফেসবুকে ওই প্রশ্নপত্রটি ছড়িয়ে দিয়ে পোস্টকারীরা লিখেছেন, ‘দ্রুত প্রশ্নটি পড়ে নিন। যাদের যাদের লাগবে দ্রুত ইনবক্স করুন। পেজে লাইক দিয়ে অ্যাক্টিভ থাকুন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের পরীক্ষা শতভাগ ভালো হয়েছে। যেসব গ্রুপগুলোতে বিজ্ঞাপন আসছিল সেগুলো হলো, ‘SSC Question OutÕ, ÔPEC_JSC_SSC_HSC_Degree out question bank.(R)Õ,ÔQuestion OuT 100% Common All Board & Result Change 2018 + 19 + 20 All BD, ‘PEC JSC SSC HSC All Exam 100% Common Suggestion & Out Questions’। এ ছাড়া ফেইসবুক মেসেঞ্জারে সকাল ৯টা ১৬ তে ‘হিমুর ছায়া’ নামের একটি আইডি থেকেও উত্তরসহ ‘খ’ সেটের প্রশ্ন ইমেজ আকারে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, বহু নির্বাচনী প্রশ্নের সাথে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন একই কায়দায় পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলা প্রথমপত্রের বহুনির্বাচনী অভীক্ষার ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই তা ফেসবুকে পাওয়া যায়।
এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন বলেছিলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে ও পরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা বাতিল করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিবকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তিনি গতকালই একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে প্রশ্ন ফাঁস রোধে সব পদক্ষেপ যে ব্যর্থ হয়েছে তা স্বীকার করেন এবং এ নিয়ে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় দিনে অনুপস্থিত ১০২১০ জন : মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। অন্য দিকে ‘অসদুপায়’ অবলম্বনের কারণে ৮৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি জানায়, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের সাথে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ২১০ জন শিক্ষার্থী এ দিন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এর মধ্যে মাদরাসা বোর্ডে তিন হাজার ৪২৩ জন ও কারিগরি বোর্ডের এক হাজার ৭৩৮ জন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে মোট ১ হাজার ৪৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেনি। আর বহিষ্কৃত ৮৯ জনের মধ্যে ৪০ জন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৭৬৮ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, কুমিল্লায় ৫৪৩ জন, যশোর বোর্ডে ৬২৮ জন, চট্টগ্রামে ৪৩৮ জন, সিলেটে ৩৩৯ জন, বরিশালে ৩২৩ জন এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৫৪৯ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। স্কুলের এই সমাপনী পরীক্ষার জন্য এবার নিবন্ধন করেছিল ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৯ জন। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবার এসএসসিতে আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের হলে বসার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন সকাল ৯টার আগে থেকেই। তারপরও যানজট ঠেলে যাদের কেন্দ্রে পৌঁছাতে সামান্য দেরি হয়েছে, তাদের পরীক্ষা দিতে সমস্যা হয়নি বলে কেন্দ্র সচিবরা জানিয়েছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/290901