২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৫৪

এক কিলোমিটারে ব্যয় ১৮৩ কোটি টাকা

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের ব্যয় ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে

দশ হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের ব্যয়। দুই পাশে ধীরগতির লেনসহ ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের ব্যয় তিন হাজার ২৩২ কোটি বাড়িয়ে ১০ হাজার ৮৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি)।

এতে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াবে ১৮৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা সমাপ্ত ও চলমান এ ধরনের প্রকল্পগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। নির্মাণাধীন জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া একনেকে অনুমোদিত এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের বাস্তবায়নকাল দুই মাস বাড়িয়ে আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষের সিদ্ধান্ত হয় পিএসসি সভায়। ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান বলেছেন, প্রকল্পটিতে কাজের পরিধি ও জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণেই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলাকে সড়কপথে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করেছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে যুক্ত হবে এ মহাসড়ক। ২০১৬ সালে অনুমোদনের সময় এ মহাসড়কের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ছয় হাজার ২২৫ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কাজ শুরুর আগেই প্রকল্প ব্যয় ৬০০ কোটি টাকা বাড়ে।

প্রকল্পের অধীনে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩১ দশমিক ৭ কিলোমিটার, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু থেকে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার লিংক রোড, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়ক থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সর্বমোট ৫৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। মহাসড়কের দুই পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পাঁচ দশমিক পাঁচ মিটার প্রশস্ত পৃথক লেন থাকবে। মহাসড়কের মাঝ বরাবর থাকবে পাঁচ মিটার প্রশস্ত মিডিয়ান। এই মহাসড়ককে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে বলা হচ্ছে, যাতে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল করবে।

গত ৯ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলা হয়, প্রকল্পের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। গত বছরের ২১ মে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার আমিন এ প্রস্তাব করে সড়ক পরিবহন বিভাগে চিঠি দেন। এতে বলা হয়েছিল, প্রকল্পের নকশার চেয়ে কর্মপরিধি বেড়েছে। প্রকল্পের রেট সিডিউল ২০১৫ সালের; কিন্তু বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম ২০১৫ সালের তুলনায় বেশি।

প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হয় পিএসসি সভায়। সভায় সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডে মহাপরিচালক বলেন, সংশোধন প্রস্তাবে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। এতে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৪ দশমিক ২২ একর। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে জমির প্রয়োজন ৮১ দশমিক ৪৫ একর। অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ৬০ দশমিক ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণে ৭৫০ কোটি টাকা রয়েছে। বাড়তি ২১ দশমিক ১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াও নকশা পরিবর্তনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন বলে পিএসসি সভায় জানানো হয়।

সভায় জানানো হয়, পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রক্ষায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের সাব-বেইজ ২২৫ মিলিমিটারের পরিবর্তে ২৭৫ মিলিমিটার করা হয়েছে। ডিবিএস বেইজ কোর্স ১৪০ মিলিমিটারের পরিবর্তে ১৬০ মিলিমিটার করা হয়েছে। খনন কাজের পরিমাণ ১৬.২১-এর পরিবর্তে ১৯.১৬ ঘনমিটার করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ১৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। বালু ভরাট ৯০ দশমিক ৪৩ ঘনমিটারের পরিবর্তে ১৪৩ দশমিক ৩৯ ঘনমিটার করা হয়েছে। মাটির কাজে ব্যয় বেড়েছে ৭৮ শতাংশ, পেভমেন্টে ৫৪ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় বেড়েছে মহাসড়কের ভিত নির্মাণে। ২৫৭ শতাংশ খরচ বেড়েছে এ খাতে।

এ সময় আরও জানানো হয়, প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে অতিরিক্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতেও ব্যয় বেড়েছে।

সভায় ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়, কাজের পরিমাণ বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রদান করতে হবে। প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে দর সওজের রেট অব সিডিউলের তুলনায় বেশি। এর যৌক্তিকতাও প্রদান করতে হবে।

http://samakal.com/bangladesh/article/180252