২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৩৯

বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নিখোঁজ ও গুম আতঙ্ক

গ্রেফতারের সাথে সাথে নিখোঁজ ও গুম হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের পর স্বীকার করতে চান না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্নে থাকতে হয় গ্রেফতারকৃতদের পরিবার-পরিজনকে। গ্রেফতারের পর কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বীকার করতে চান না সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য মেলেনি। এ দিকে ঢাকা মহানগর এলাকায় এমন কোনো নেতা নেই যে নেতার বাড়িতে অভিযান চালায়নি পুলিশ। নেতা ছাড়াও অনেকের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে বিএনপি সূত্র জানায়।

গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের কারো কারো ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো তথ্য মিলছে না। পরিবারের কাছ থেকে তুলে নেয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অজ্ঞাত কারণে গ্রেফতারের বিষয়ে স্বীকার করতে চান না। নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই স্বীকার না করার বিষয়টিই আতঙ্কের। গত বুধবার মধ্য রাতে রাজধানীর শান্তিনগরের একটি বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে আটক করা হয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুনকে। কিন্তু আদালতে নেয়ার আগ পর্যন্ত তার পরিবারের সদস্যরা মামুনের কোনো সন্ধান পাননি। দুপুরের দিকে মামুনের ছোট মামা মিজানুর রহমান লিটন সাংবাদিকদের জানান, মামুনকে শান্তিনগরের এক বাসা থেকে মধ্যরাতে ডিবি পরিচয়ে আটক করা হয়। সকাল থেকে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছিল পরিবারের সদস্যরা। সাংবাদিকেরাও মামুনের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বিভিন্ন দফতরে ফোন দেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থাই মামুনের গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করেনি। পরে রাতে জানা যায় মামুনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

একই ঘটনা ঘটে ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকনের বেলায়। গত ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে আটক করা হয় খোকনকে। কিন্তু পরদিন বিকেল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থাই বিষয়টি স্বীকার করেনি। তাদের আটকের বিষয়ে যাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল তারাও বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরদিন সন্ধ্যার পর খোকনের আটকের বিষয়টি স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এর মধ্যে তার পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা চরম উদ্বিগ্নে ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে নিখোঁজ বা গুম হয়ে যেতে পারেন এ আশঙ্কা অনেকের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কর্মী গতকাল বলেন, গ্রেফতার হবেন সেটি কোনো বিষয় নয়। কিন্তু নিখোঁজ বা গুম হলে পরিবার কী করবেÑ এ আতঙ্কে ভুগছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, আতঙ্ক শুধু নিখোঁজ ও গুম হওয়ার; যে কারণে এখন বাসা ছাড়া।

এ দিকে বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ঢাকা মহানগর এলাকায় এমন কোনো নেতার বাড়ি নেই যে বাড়িতে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাননি। বুধবার রাতে বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হকসহ অনেকের বাড়িতেই পুলিশ তল্লাশি চালায়। কয়েক দিন ধরেই এ অভিযান চলছে। অভিযানে গ্রেফতারও হচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে দুই শতাধিক গ্রেফতার হয়েছেন বলে বিএনপি সূত্র বলেছে।
এ দিকে আটক করার পরও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বীকার করছেন না সে বিষয়ে জানতে পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কিছু বলতে রাজি হননি। আইজিপির সাথে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/290236