১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০১

রাস্তায় তল্লাশি, বাড়িতে বাড়িতে অভিযান

৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড় এবং বাড়িতে বাড়িতে অভিযানের পাশাপাশি রাস্তায়ও শুরু হয়েছে ব্যাপক তল্লাশি। কোনো কোনো এলাকায় এই তল্লাশিকালে পথচারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই রাস্তায় সন্দেহভাজনদের তল্লাশি চলছে।

রাজধানীর মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মিল্টন। মঙ্গলবার রাতে অফিস শেষে তিনি যাত্রাবাড়ীর বাসায় ফিরছিলেন। পথে দু’বার তিনি পুলিশি তল্লাশির শিকার হন। পুলিশ তার শরীর তল্লাশি করে। জামা-প্যান্টের পকেট তল্লাশি করে। তারপরেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপর কনস্টেবল থেকে এএসআই, আবার এএসআই থেকে এসআইÑ সবার জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হতে হয়। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে যাওয়ার পথে তিনি আবারো পুলিশের তল্লাশির শিকার হন। পুলিশ তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তার পরিচয় দেন। এরপর কার্ড দেখতে চায়। কার্ড প্রদর্শনের পর তাকে আবারো জানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। মিল্টন বলেন, এভাবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের কাছে কৈফিয়ত দিতে হলে তো আর রাস্তায় হাঁটা যাবে না!
কয়েক দিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। তবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, গ্রেফতার ও একই সাথে রাস্তায় পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আগের দিন ছাত্রদলের সাবেক নেতা আনিসুর রহমান খোকনকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার তাকে রমনা থানায় হস্তান্তর করে র্যা ব। এ দিকে মঙ্গলবার হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় বিএনপির তিন কর্মীকে পুলিশ আটক করার পর প্রিজনভ্যান থেকে তাদেরকে নামিয়ে নেয় দলটির নেতাকর্মীরা। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের ছবি দেখে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
তুষার নামের মতিঝিলের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গতকাল বলেন, মঙ্গলবার রাতে তিনি মতিঝিল থেকে বাসাবোর বাসায় যাওয়ার পথে চাবার পুলিশি তল্লাশির শিকার হন। প্রতিবার তাকে ১০-১২ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মোশাররফ নামের অপর এক পথচারী বলেছেন, পুলিশ মতিঝিলে পেছন থেকে ডেকে তাকে থামতে বলে। এরপরও দু’কদম সামনে গেলে পুলিশ তাকে ধমক দেয়। এটাও পুলিশের একধরনের হয়রানি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ি ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্ট হাউজ, মেস ও ছাত্রবাসে গত দু’দিন ধরে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। যাত্রাবাড়ী এলাকার এক ছাত্রাবাসের ছাত্ররা বলেছে, দু’রাতই তাদের ছাত্রাবাসে তল্লাশি হয়েছে।
এ দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কোথাও কেউ হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন কোনো অভিযোগ জানা নেই। তিনি বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সব সময়ই এই দায়িত্ব পালন করে থাকে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/290096