১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:২৫

প্রয়োজন জ্ঞানের সমন্বয় সাধন

জঙ্গিবাদ নিয়ে নানা আলোচনা, প্রপাগান্ডা ও পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বর্তমান বিশ্বে। জঙ্গিবাদ-প্রপাগান্ডার প্রথম ঝড়টা বয়ে গেছে ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর দিয়ে। তবে ঝড়ের সেই বেগ এখন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং তার বাস্তব কারণও আছে। ঘটনা প্রবাহে এবং বিভিন্ন গবেষণায় এখন বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা হয়নি। বরং যারা ইসলাম ধর্মের ইমেজ নষ্ট করতে চায় এবং মুসলমানদের ধ্বংস করতে চায়, মূলত তারাই জঙ্গিবাদের স্রষ্টা। এই প্রসঙ্গে কোনো কোনো পরাশক্তির পাশাপাশি চলে এসেছে ইসরাইলের নামও। আর এই বিষয়টিও এখন বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, জঙ্গিবাদের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলিম দেশগুলোই। প্রসঙ্গত এখানে পার্স টুডে ও সানা পরিবেশিত একটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা যায়। রিপোর্টে বলা হয়, সিরিয়ার দেইর আযযৌর প্রদেশে আইএস-এর ঘাঁটি থেকে ইসরাইলের তৈরি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, প্রদেশটির তিনটি ঘাঁটি থেকে শুক্রবার (২৬/০১/২০১৮) ইসরাইলের তৈরি স্থল মাইন, বিস্ফোরক ও বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আইএস সদস্যরা পালানোর সময় এসব অস্ত্র ফেলে গেছে। সিরিয়ার এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, এসব অস্ত্রই প্রমাণ করে বাইরের বিভিন্ন দেশ আইএসকে সরাসরি অস্ত্র দিচ্ছে।
জঙ্গিবাদের গোমড় আসলে ফাঁস হয়ে গেছে। প্রাথমিক বিভ্রান্তির পর মুসলিম দেশগুলোর নেতারাও এখন জঙ্গিবাদের রহস্য উপলব্ধি করতে পারছেন। অনেকে স্পষ্টভাবে কথা বলতেও শুরু করেছেন। গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মাদরাসার সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষকদের মহাসমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মুসলমানরা কখনো জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না, তাদের কেউই এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। কুরআনকে যারা ধারণ করে তারা কখনো জঙ্গি হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, প্রথমে বলা হতো মাদরাসার ছেলেরা জঙ্গি। কিন্তু আমি প্রথম থেকেই বলেছি মাদরাসার সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মাদরাসার আলেমরা শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেন। একটা শ্রেণি ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর কালিমা লেপন করতে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে। আমি বলতে চাই, ইসলাম এবং মুসলমানরা কখনোই জঙ্গিবাদ বিশ্বাস করে না। তাদের কেউই এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না।

স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এখানে আরো বলা প্রয়োজন যে, বর্তমান সভ্যতায় মুসলমানরা জঙ্গি নয়, এতটুকুতেই থেমে থাকলে চলবে না। বরং পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আলাক এর ৩ ও ৪ নম্বর আয়াতের মর্মানুযায়ী কালাম এবং কলম চর্চার তাৎপর্যও আমাদের ব্যাখ্যা করতে হবে। আসলে আমাদের একই সাথে মহাগ্রন্থ আল কুরআন অধ্যয়নের পাশাপাশি মহাবিশ্বকেও অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআনের জীবন-দর্শনের আলোকে যদি আমরা বিজ্ঞান চর্চা করতে পারি অর্থাৎ জ্ঞানের সমন্বয় সাধন করতে পারি, তাহলে তো সভ্যতার সঙ্কট কেটে যায়। আর সভ্যতার সঙ্কট কেটে গেলে তো জঙ্গিবাদের সঙ্কটও দূর হবে। দূর হবে মানবজাতির আরো বহু সঙ্কট। বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করি কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আমাদের উপলব্ধির ভুবনটা তেমন গভীর নয়। জ্ঞানের সমন্বয় সাধন নিয়েও আমাদের নেতারা ভাবেন না। জনগণকে নিয়েও খুব একটা ভাবেন কী?

এমপি তো জনপ্রতিনিধি। জনগণের সুখ-দুঃখের খবর নেয়া তাদের প্রধান দায়িত্ব। আর নির্বাচনের সময়তো জনসেবার কথা বলেই তারা ভোট চেয়ে থাকেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের অনেকের কর্মকা- দেখে তাদের জনপ্রতিনিধি ভাবতে কষ্ট হয়। এমন একজনের নাম মোতাহার হোসেন। ২৯ জানুয়ারি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিপাহি থেকে এমপি হয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মোতাহার হোসেন। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, চোরাচালান, মাদক, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সবকিছুই এখন তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি ক্ষমতার দাপটে নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে। এমপি হয়ে তিনি যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন। স্ত্রী-সন্তান (নির্ভরশীল) এবং নিজের নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মূলত অষ্টম সংসদে লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি হওয়ার পর থেকেই পাল্টাতে থাকে তার সম্পদের চিত্র। পরপর তিনবার এমপি থাকার সময় ফুলেফেঁপে ওঠে মোতাহারের সম্পদ। যদিও সেই সম্পদ অর্জনের তেমন কোনো তথ্যই তিনি (নবম ও দশম) সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেননি। নির্বাচনের হলফনামায় নিজের, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের (সন্তান) আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণী দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেখানে তিনি অনেক তথ্য গোপন করেছেন। এমন কি নবম সংসদের হলফনামায় তিনি নির্ভরশীলদের আয় এবং স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ দেখালেও দশম সংসদের হলফনামায় স্ত্রী এবং নির্ভরশীলদের (সন্তান) নামে কোনো সম্পদের তথ্য দেখাননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, হলফনামায় তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে যে কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। এ কারণে তার এমপি পদও চলে যেতে পারে।
ভাবতে অবাক লাগে, এমন একজন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের মত একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন কী করে বারবার এমপি পদে মনোনয়ন দিলো? শুধু তথ্য গোপন কিংবা মিথ্যা তথ্য নয়, চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে আমরা আশা করি। আর আগামী নির্বাচনে এ ধরনের ব্যক্তিরা এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন পায় কিনা সেটিও দেখার মতো একটি বিষয় হবে। একই সাথে শীর্ষ নেতাদের উপলব্ধির বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

http://www.dailysangram.com/post/317414