৩১ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১:০৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদন

‘গুপ্তচরবৃত্তি’র ভয়ে সাংবাদিক, সব মহলে উদ্বেগ

মন্ত্রীরা বলছেন, অপসাংবাদিকতা রোধ হবে

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিলের খবর গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সুখবর আনেনি। ৫৭ ধারার বদলে আরো কঠোরভাবে ৩২ ধারায় ফিরে আসায় উল্টো আতঙ্কিত সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা বলছেন, নথি কপি করাকে গুপ্তচরবৃত্তি ধরলে সাংবাদিকদের কাজের পরিধি সংকুচিত হবে—এই সুযোগে বাড়বে সরকারি অফিসে দুর্নীতি। আইনবিশেষজ্ঞরাও একই ধরনের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। তবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, এ ধরনের উদ্বেগের কোনোই কারণ নেই; সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে আইনটি বাধা হবে না। তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রী আইনটির উপযোগিতা বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, এটি অপসাংবাদিকতা রোধে সহায়ক হবে।
‘অপসাংবাদিকতা’ রোধ হবে : কিছু ছাড়ও দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, ৫৭ ধারায় আগে ন্যূনতম সাজা ছিল, বর্তমান আইনে তা নেই। বিচারক অপরাধ অনুযায়ী সাজা দেবেন। সর্বোচ্চ সাজাও কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ৫৭ ধারা ২০০৬ সালেও ছিল, তখন কেউ কিছু বলেনি। ২০১৩ সালে ৫৭ ধারা সংশোধন করে অজামিনযোগ্য করে ন্যূনতম সাজা সাত বছর করার পর অপপ্রয়োগের প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এখন ৫৭ ধারাকে চার ভাগে চারটি অপরাধে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ অপরাধ আর রাষ্ট্রীয় অপরাধের সাজা এক হবে না—এটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে মনে হয়নি, কোথাও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। বরং অপসাংবাদিকতা রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা কোনোভাবে অপসাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করতে পারি না। জনগণকে নিরাপদ করতে অপসাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। অহেতুক ভীতি সৃষ্টি করার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী চান না কেউ অহেতুক হয়রানির শিকার হোক।’‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা গত সোমবার। গতকাল সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্যের বিষয়ে নিয়মের কথা সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অতিগোপনীয় জিনিসটা যদি সঠিক হয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি অতি গোপনীয়ই রাখতে চায়, সেটা তো আপনাদের প্রকাশ করা ঠিক হবে না।’
সাংবাদিকদের কোনো কোনো কার্যক্রম গুপ্তচরবৃত্তির মধ্যে পড়বে না—এ আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধ করার জন্য যদি গোপন কোনো ষড়যন্ত্র হয়, আর সাংবাদিকরা যদি তা প্রকাশ করে দেয় সেটা অপরাধ হবে কেন’?
দুর্নীতির কোনো খবর প্রকাশ করা হলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তি আগে থেকেই আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আমরা যেটা করেছি, ওই যে কম্পিউটার সিস্টেম বা ইনফরমেশন টেকনোলজির মধ্যে কেউ যদি গুপ্তচরবৃত্তি করেন, তাহলে সেটাকে অপরাধ বলে ধরা হয়েছে। সেটার সঙ্গে সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হয়, এটা অহেতুক ভীতি আর সমালোচনার জন্য সমালোচনা করা হচ্ছে।’ মন্ত্রী বলেন, নতুন আইনের ৩২ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গুপ্তচরবৃত্তির শাস্তিও এই ধরায় উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ৫৭ ধারার বিষয়বস্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুক্ত করা হলেও বাক্ বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের সুযোগ রাখা হয়নি। তার আশা, ৫৭ ধারার যে ‘অপপ্রয়োগ’ হচ্ছিল তা নতুন আইন হলে বন্ধ হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, দেশের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান রক্ষার স্বার্থেই আইনটি করা হয়েছে। ভেবেচিন্তে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে একেকজন এমপির চরিত্র উদ্ঘাটন করে গণমাধ্যমে যেভাবে রিপোর্ট হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সে কোথায় গিয়েছে, কী করছে—যেভাবে সব ছবিটবি দিয়ে সাজানো হচ্ছে, তাতে তার ব্যক্তিজীবনের কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এতে তাদের মান-ইজ্জত থাকে না। সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। তাদের সম্মান রক্ষার্থেই এ আইন করা হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) দেশের জন্য কাজ করেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও তো দেশের জন্যই কাজ করেন। তাঁরা কাজ না করলে তো দেশের এত উন্নয়ন হতো না। আর কাজ করতে গেলে ভুল হয়ই।’
বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা আপনাদের মতো লিখে যান, কিন্তু সঠিকভাবে লেখেন। ঘটনা সত্য হলে আমরা এই আইন করেও আপনাদের থামাতে পারব না। আমার এখানে আইসেন, আপনারা কোনটা জানতে চান—আমি দেখিয়ে দেব। শঙ্কার কোনো কারণ নেই।’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ধরেন, ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করেনি, কিন্তু আপনারা যদি লেখেন যে ভারত বন্ধ করেছে এবং এ খবরে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয় এবং জনগণ কষ্ট পায়—তাহলে আমরা কী করব?’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগের আইসিটি অ্যাক্ট বিএনপির সময়ে করা ছিল। যেখানে অনেক বিষয় অস্পষ্ট ছিল। নতুন আইনে বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট করা হয়েছে। তাই আমি মনে করি না, এতে সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতার খর্ব হবে কিংবা তাঁদের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে।’

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ : বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইসিটি আইনটি নতুন মোড়কে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। শুনেছি নতুন আইনে ৩২ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধের কথা বলা হয়েছে। আসলে এটিকে গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে। আইসিটি আইনে এত দিন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকে সরাসরি ধরার ব্যবস্থা ছিল। এখন একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই ব্যবস্থাকে আরো জোরালো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নতুন এ আইনের খসড়া তৈরির সময় কোনো গণমাধ্যমকর্মীর মতামত নেওয়া হয়েছে কি না, সন্দেহ আছে। আর খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে গণমাধ্যমকর্মীরা কেন খসড়াটি দেখার জন্য জোরালো দাবি জানালেন না, এটিও আমার প্রশ্ন।’
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক ও বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক আমানুল্লাহ কবির বলেন, ‘আইনটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। তাই এই আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল করতে হবে। সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতা থাকবে না, তা বলব না। কিন্তু এমন আইন করা ঠিক হবে না, যেটা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সাংবাদিকরা গুপ্তচরবৃত্তি করে না। বিভিন্ন উৎস থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা তাদের পেশাগত অধিকার। নতুন আইনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। সামনে নির্বাচন আছে, নতুন আইন সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক, ভয়-ভীতি তৈরি করবে। আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পুলিশকে দেওয়া হলে অপব্যবহার হবেই।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি অফিসের ডকুমেন্ট কপি করলে ১৪ বছরের জেল হতে পারে, এটা কোনো সভ্য সমাজের জন্য কাম্য হতে পারে না। যখন দুর্নীতি হয় তখনই কেবল সাংবাদিকরা সরকারি ডকুমেন্ট সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এই আইনের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একধরনের ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করেন, খসড়ায় ৩২ ধারা নতুন করে যোগ করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন দুর্নীতি সংক্রান্ত গোপনীয়তা ফাঁসের হাত থেকে বাঁচতে সরকার এ রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ৩২ ধারা বড় ধরনের বাধা হবে। অনেক সাংবাদিক এই ধারার শাস্তির ভয়ে বড় কোনো খবরের তথ্য সংগ্রহ অনেক সময় এড়িয়ে যেতে চাইবেন।’

ব্যারিস্টার নূর-উল-মতিন জ্যোতি বলেন, ৫৭ ধারায় মানহানিকর কোনো কিছু প্রচার বা প্রকাশ করলে শাস্তির বিধান ছিল। আর গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করে নতুন ডিজিটাল আইন যা করা হচ্ছে তা রীতিমতো ভয়ানক। তথ্য সংগ্রহের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার মতোই আইন করা হয়েছে। এতে সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার বৈধতা নষ্ট করা হয়েছে বলে মনে হয়। তিনি বলেন, গুপ্তচরবৃত্তি সংবাদকর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না আইনে এমন একটি ক্লজ রাখা উচিত। কারণ সংবাদকর্মীরা যেটা করে থাকেন তা হলো জনস্বার্থে। সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অফিসের দুর্নীতিবাজদের তথ্য প্রকাশ করা উচিত জনস্বার্থেই। তা বন্ধ হলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
পোলারিস ফরেনসিক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘আমাদের দেশে গুপ্তচরবৃত্তি, রাষ্ট্রদোহের জন্য আলাদা আইনে বিভিন্ন ধারা রয়েছে। সেসব ধারাগুলোর সংজ্ঞায়ন থাকা সত্ত্বেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কেন আনা হলো তা বোধগম্য নয়। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সঠিক সংজ্ঞায়ন প্রয়োজন। আমরা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ডকুমেনটেশন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে রাখি। প্রয়োজনে আমরা তা ভাইবার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাই। এখন বেশির ভাগ তথ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে থাকে। এখন এটা যদি গুপ্তচরবৃত্তির আওতায় আনা হয় তাহলে শুধু সাংবাদিক নয়, অনেকের জন্য সমস্যা হবে। যদি সেটা হয় তাহলে এটি অনেকের দুর্নীতিকে উৎসাহিত করতে পারে।’

আইনটিতে অন্যরকম দুর্বলতাও দেখছেন বিশ্লেষকরা। তথ্য-প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের সংগঠন সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি তপন কান্তি সরকার মনে করেন, ‘নতুন আইনে অপরাধের মাত্রাগুলো সব একই রকম ধরা হয়েছে। এই মাত্রাগুলো আরো সংজ্ঞায়িত করা দরকার।’ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি চূড়ান্ত করার মত দেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হলে তা হবে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিপন্থী। সাংবাদিকরা যত সহজ ও কম সময়ে তাঁর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন সেটি তাঁর জন্য তত সহায়ক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারার অপপ্রয়োগ হলে তা সাংবাদিকদের ওপর খড়গ হিসেবে আবির্ভূত হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার সাংবাদিকবান্ধব সরকার। তাই এটি পাসের আগে বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হবে বলে আমার বিশ্বাস। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে বলে আমরা আশা করি।’

যা আছে ৩২ ধারায় : ৫৭ ধারায় যেসব কাজ করলে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো সেসব কাজ করলে ডিজিটাল আইনেও অপরাধ হবে বলে উল্লেখ আছে। শুধু ১৭ থেকে ৩২ নম্বর ধারায় অপরাধের সংজ্ঞা বিন্যস্ত করা হয়েছে। ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে।’ আইনটিতে এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৫৭ ধারায়ও শাস্তির মেয়াদ ছিল ১৪ বছরের কারাদণ্ড। তবে নতুন আইনে দ্বিতীয়বার অপরাধের শাস্তির পরিমাণ করা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সঙ্গে এক কোটি টাকা জরিমানা।
সংবাদকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করতে এসব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে থাকেন। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির সংবাদ সংগ্রহ করাই সংবাদকর্মীদের কাজ। ছবি সংগ্রহ করা কাজ। এসব কাজকে নিরুৎসাহ করতে এই আইনের প্রয়োগ হতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিষয়টি প্রচলিত রয়েছে। নতুন আইনের ৩২ ধারায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বাদ হতে যাওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত-২০১৩)-এর ৫৭ ধারায় বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ফরম বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন কিংবা যার মাধ্যমে মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এই ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে অপরাধ।’ ৫৭ ধারার সংজ্ঞায় অনলাইন নিউজপোর্টাল বা গণমাধ্যমের কথা সরাসরি উল্লেখ নেই। নেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায়ও।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/01/31/596261