৩১ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১:০০

এলএনজি আমদানি অর্থায়ন সংকটে


এপ্রিলে গ্যাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কা * বিশ্বব্যাংক-এডিবির কাছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ চাওয়া হচ্ছে * পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের সম্ভাব্যতা যাচাই হবে * যন্ত্রপাতির শুল্ক মওকুফ চাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ

আগামী এপ্রিলে তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে চায় সরকার। আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি গুটিয়ে আনলেও এখন পর্যন্ত অর্থ সংস্থান করতে পারেনি রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে স্বল্পমেয়াদে অর্থ সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত না হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এলএনজি আমদানি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে আমদানি করা এলএনজির দাম কম রাখতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে যন্ত্রপাতির আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বা ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হতে পারে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং এলএনজির অর্থায়ন বিষয়ে গঠিত কমিটির অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির মধ্যপ্রাচ্য-১ শাখার সহকারী প্রধান আছাদুল হক মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে অর্থ সহায়তা চাইতে সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও জবাব পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।

সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরে শিল্পকারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। এতে উৎপাদন ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া গ্যাসের অভাবে নতুন শিল্পকারখানার অনেকগুলোয় উৎপাদন শুরু করাই সম্ভব হয়নি। এমনকি সরকার ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোও গ্যাস সংকটে থমকে আছে। এ সংকট সমাধানের জন্য শুরুতে মহেশখালীতে নির্মাণাধীন টার্মিনাল থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এলএনজি আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরে তা বদলে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ এবং সর্বশেষ তা এপ্রিলে নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০১৮ সাল থেকে গ্যাস দেবেন বলে বাজেট বক্তব্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এজন্য এলএনজি আমদানির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে এলএনজি টার্মিনাল ও পাইপলাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু শেষ সময় এসে দেখা দিয়েছে অর্থায়নের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে ২৩ জানুয়ারি ইআরডির অনুবিভাগ-১ থেকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অনুবিভাগ প্রধানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড আগামী এপ্রিল থেকে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনা ও এলএনজি আমদানির জন্য সংস্থাটির মাসভিত্তিক ও খাতভিত্তিক অর্থের প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য বিভিন্ন বৈদেশিক উৎস থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করে ইআরডিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক বা এডিবি অর্থায়ন করতে রাজি হলে ওই ঋণের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনসহ সব তথ্য উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে এলএনজির অর্থায়ন বিষয়ে গঠিত কমিটির ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, এলএনজি আমদানির জন্য দেশি-বিদেশি সম্ভাব্য উৎস নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থায়নের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থের উৎস পরীক্ষার জন্য কমিটি কাজ করছে। কিন্তু সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। তবে ইনভেসমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) জ্বালানি তেল আমদানিতে ঋণ দিয়ে থাকে। তাই এলএনজি আমদানির জন্য ওই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নেয়ার জন্য যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়। আরপিজিসিএল ও পেট্রোবাংলার বার্ষিক রিটার্ন বিবেচনায় পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন হবে বলে সভায় মতামত দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধিরা।

সভায় বিদেশি সংস্থা থেকে অর্থায়ন চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে এলএনজি সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ জানাতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে প্রতিবেদন দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়। সভায় এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন কাজে আমদানি করা মালামালের শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে জানানো হয়, আমদানিকারককে এ ধরনের শুল্ক বা ভ্যাট মওকুফ করলেও তা জ্বালানি বিভাগ কিংবা পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করতে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এলএনজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে। তাই এ ধরনের শুল্ক বা ভ্যাট পুরোপুরি মওকুফের জন্য এনবিআরে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে প্রাকৃতিক গ্যাস। শীতলকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়। এ তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে এলএনজি বলা হয়। পরিবহনের সুবিধার্থে বায়ুমণ্ডলীয় চাপে একে এলএনজিতে পরিণত করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরল করে ফেললে এর আয়তন প্রায় ৬০০ গুণ কমে যায়। অর্থাৎ ৬০০ লিটার গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তরিত করে মাত্র এক লিটারের ছোট্ট একটা বোতলে ভরে ফেলা যায়। এই এলএনজি আমদানির পর তা বিশেষ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তর করে দেশের অভ্যন্তরে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/12925