৩১ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১২:৫৭

ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ জন পরীক্ষকরাই এখন মৌখিক পরীক্ষার প্রার্থী!

তারা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। গতকাল তারাই হলেন পরীক্ষার্থী(!)। সে পরীক্ষা যেনতেন পরীক্ষা নয়, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হওয়ার পরীক্ষা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক পাঁচ নির্বাহী পরিচালক ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডিএমডি ডেপুটি গভর্নর হওয়ার জন্য মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী ফোরে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের যেমন ব্যতিব্যস্ত হতে দেখা যায়, তেমনি কারো কারো মধ্যে উৎকণ্ঠাও দেখা যায়। যদিও এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো শঙ্কা ছিল না।

এমনি একজন কর্মকর্তাকে উৎকণ্ঠ হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাওয়া যায় অনেকটা আধাআধি। তিনি বলেন, স্যার পরীক্ষা দেবেন। যেকোনো সময় ডাক... এ বলেই তিনি একজন নির্বাহী পরিচালকের রুমে প্রবেশ করলেন। তবে এ প্রতিবেদক আরেক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রশ্নের বাকি উত্তর পেলেন। জানা গেলো, একজন নির্বাহী পরিচালক পরীক্ষার রুমে প্রবেশ করেছেন। তিনি বের হওয়ার সাথে সাথেই ওই কর্মকর্তার স্যারের ডাক পড়বে। এ কারণেই ওই কর্মকর্তা ব্যতিব্যস্ত।
পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েছেন এমন একজন নির্বাহী পরিচালকের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়, কী প্রশ্ন ধরেছিলেন পরীক্ষকরা, আর আপনি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে একগাল হেসে তিনি উত্তর দিলেন, জীবনের শেষ পরীক্ষা কবে দিয়েছিলেন তা মনে নেই। তবে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। গতকাল তিনিই হলেন নিয়োগপ্রার্থী। তবে যাই হোক নতুন অভিজ্ঞতা হলো।

জানা গেছে, আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দেয়া হতো সিনিয়র নির্বাহী পরিচালকের ভেতর থেকে। কিন্তু ২০০৭ সালে একটি প্রেক্ষাপটে ডেপুটি গভর্নর পদে পরীক্ষা নেয়ার পদ্ধতি চালু করে অর্থমন্ত্রণালয়। এর পর দুই দফায় এ পদ্ধতিতে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দেয়া হয়। চাকরির শেষ প্রান্তে বা অবসর নেয়ার পর পরীক্ষা দেয়াটা দেখতে একটু দৃষ্টিকটু হলেও কিছুই করার নেই বলে জানালেন একজন প্রার্থী।
গতকাল ডেপুটি গভর্নর হওয়ার জন্য মৌখিক পরীক্ষা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল, আব্দুর রহিম, মাসুম কামাল পাটোয়ারী, মিজানুর রহমান জোদ্দার, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এবং কর্মসংস্থান ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি কাজী আলমগীর।

মৌখিক পরীক্ষা শেষে সার্চ কমিটির প্রধান পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, আমরা যত দ্রত সম্ভব সরকারকে তালিকা চূড়ান্ত করে দেবো।
বর্তমানে তিনজন ডেপুটি গভর্নর রয়েছেন। এদের মধ্যে এস কে সুর চৌধুরীর চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ বুধবার। গত ৪ জানুয়ারি ডিজি পদে আবেদন আহ্বান করা হয়।
বিজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশ-বিদেশের পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টারস ডিগ্রি থাকতে হবে আবেদনকারীর। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রশিণ ও অভিজ্ঞতাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবার।
এ ছাড়া প্রত্যেক আবেদনকারীর দেশী-বিদেশী কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে শীর্ষপর্যায়ের পদে কাজ করার। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ডিএমডিরা আবেদন করতে পারবেন। প্রার্থীর বয়সসীমা ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬০ বছর অতিক্রম করতে পারবে না। দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক এ নিয়োগ দেয়া হবে।

আবেদন গ্রহণ, প্রার্থী বাছাই, প্রাথমিক তালিকা তৈরি এবং মৌখিক পরীা গ্রহণ শেষে তিনজনের নামের তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে সার্চ কমিটি।
ড. কাজী খলীকুজ্জমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক। বর্তমান কমিটির সবাই আগের কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেন। তবে আগের কমিটির গকুল চাঁদ দাসের স্থলে এবার যোগ হয়েছে ফজলুল হকের নাম।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/289790