৩০ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫৩

ক্ষমতার জন্য প্রয়োজন নতুন কোনো দর্শন

আমাদের দেশে ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক আলোচনার প্রধান উপজীব্যে পরিণত হয়েছে। এসব আলোচনায় ক্ষমতার বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয়। চিন্তা-ভাবনাটা এরকম যে, ক্ষমতায় থাকার প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার প্রয়াস উভয়ই নিন্দনীয় কাজ। কিন্তু ক্ষমতার শবব্যবচ্ছেদ করলে দেখা যাবে উভয় রকম প্রয়াসই যতটা খারাপ মনে করা হয়, ততটা খারাপ নয়। সমস্যার সৃষ্টি হয় ক্ষমতার ব্যবহার থেকে। মানবকল্যাণের জন্য ক্ষমতা ব্যবহৃত হলে একে খারাপ দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ খুবই কম। আমাদের দেশে এরকম নেতিবাচক মনোভাবের মূলে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার। যদি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতার ব্যবহার কল্যাণধর্মী হতো, তাহলে ক্ষমতায় থাকার কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার প্রয়াস কোনোটিকেই নেতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হতো না। আজ থেকে বহু বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন কেনেথ গলব্রেইথ ঞযব অহধঃড়সু ড়ভ চড়বিৎ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থটি ১৯৮৪ সালে প্রথম ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থের লেখক বিপুল ও বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ছিলেন। তিনি ছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি আমেরিকান অর্থনীতি সমিতির সভাপতিও ছিলেন এবং ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার সৃষ্টিধর্মী অবদানের জন্য আমেরিকান একাডেমি অব আর্ট অ্যান্ড লেটার্সের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার রচিত অনেক মূল্যবান ও জনপ্রিয় গ্রন্থ রয়েছে। প্রায় সব কটি গ্রন্থেই তিনি মার্কিন রাজনীতি ও অর্থনীতির শবব্যবচ্ছেদ করেছেন। এ গ্রন্থগুলো পাঠ করে মার্কিন পুঁজিবাদের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম, তখনই এ মহানপণ্ডিত ব্যক্তির রচনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে একটি কোর্সে কোর্স টিচার অধ্যাপক লিরয় জোনস ক্লাসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমরা কি কেউ গলব্রেইথের লেখা বই পড়েছ? আমরা দু-চারজন হাত তুলেছিলাম। অবাক বিস্ময়ে প্রফেসর জোনস বলেছিলেন, আশ্চর্য! গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টরা বলছে ওরা গলব্রেথ পড়েছে। কারণ গলব্রেথের চিন্তা-ভাবনার ধারা মূল ধারার অর্থনীতিশাস্ত্রের তুলনায় ব্যতিক্রমী ছিল। তিনি অর্থনীতিশাস্ত্রের যে ইতিহাস রচনা করেছিলেন, তা ছিল মানবসমাজের বিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অর্থনীতিকে সমাজকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত করে দেখার প্রয়াস পাশ্চাত্যের মূল ধারার অর্থনীতিতে বিরল।
ইতিহাস, সমাজ ও রাজনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও উপলব্ধি না থাকলে এরকম বিশ্লেষণ হাজির করা সম্ভব নয়। আজকের এ আলোচনায় গলব্রেথের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আলোচনার শুরুতে তিনি দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। রাসেল বলেছেন, ক্ষমতা ও গৌরব মানবজাতির সর্বোচ্চ আকাক্সক্ষা এবং সর্বোচ্চ পুরস্কার। কোনো আলোচনাই ক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ না করে হয় না। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা এটি কাক্সিক্ষত মাত্রায় পেতে পারেন অথবা না-ও পেতে পারেন। অন্যান্য রাজনীতিক ক্ষমতার কাছাকাছি যেতে পারেন অথবা তা হারাতে পারেন। কর্পোরেশন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে ক্ষমতাবান মনে করা হয়। অন্যদিকে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো বিপজ্জনকভাবে ক্ষমতাবান। সংবাদপত্রের মালিক ও প্রকাশক, ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্কের প্রধান, কলাম লেখক এবং ধারা বর্ণনাকারীরাও ক্ষমতাবান। মার্কিন সমাজে দেখা গেছে, সময়ে সময়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মন্তব্যকারীরা শক্তিশালী কণ্ঠে পরিণত হন। এদের মধ্যে কেউ কেউ নৈতিকতার নেতা হিসেবে বরিত হলেও, অনেকের কাছে তারা নৈতিকতাকে বদনামের মধ্যে ফেলেছেন।
জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার ক্ষমতার বিষয়টির জটিলতা উপলব্ধি করে এটির বিশ্লেষণের জন্য আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তার মতে, ক্ষমতা হল অন্য মানুষের আচরণ প্রভাবিত করার জন্য নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা। যত বেশি এরকম ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়া সম্ভব হয়, ততই ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রশ্ন হল, কীভাবে এই ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়া হয় এবং কীভাবে অন্যদের এটি মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। এটি হতে পারে দৈহিক শাস্তির ভয়, আর্থিক পুরস্কার প্রদানের অঙ্গীকার, বুঝিয়ে-সুজিয়ে রাজি করানো, অথবা অন্য কিছু। যেমন- গভীর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ ত্যাগ করতে বাধ্য করা। আমাদের জানতে হবে, ক্ষমতার উৎস কী? জানতে হবে কতিপয় ব্যক্তি বিশাল কিংবা অল্প মাত্রায় শাসন করার লাইসেন্স পায়। কীভাবে অন্যরা শাসিত হয়। এসব প্রশ্নের মূলকথা হল ক্ষমতা কীভাবে বলবৎ হয়, কীভাবে বলবৎ করার পদ্ধতি হস্তগত হয়।

কিছু ক্ষমতার ব্যবহার নির্ভর করে এটি লুকিয়ে রাখার মাধ্যমে। যাদের ওপর এভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাথা নত করে এবং বুঝতে পারে না, কারা এটি করছে। আধুনিক শিল্পায়িত সমাজে অন্যের ইচ্ছার ওপর কিছু মানুষকে অধস্তনে পরিণত করা হচ্ছে এবং এ কাজে সক্ষমতার উৎস দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। পাণ্ডিত্যের একটি ধরন আছে, যার উদ্দেশ্য জ্ঞানের বিস্তার নয়, বরং অজানাকে বারিত রাখা। কারোরই উচিত নয়, এর কাছে আত্মসমর্পণ করা। ক্ষমতাকে ৩টি উপায়ে দেখানো যেতে পারে অথবা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। গলব্রেথের মতে, ক্ষমতা ৩ ধরনের। এগুলো হল- শাস্তি, প্রতিশোধ ইত্যাদির মাধ্যমে কঠোরভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ, ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ এবং অভ্যস্ত করে ক্ষমতা প্রয়োগ। জোরজবরদস্তি অথবা কঠোর শাস্তি ও প্রতিশোধের মাধ্যমে অন্যদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে পরিবর্তন করা ক্ষমতা প্রয়োগের সবচেয়ে অপ্রীতিকর অথবা কষ্টকর পদ্ধতি। দাস সমাজে এরকম ক্ষমতা প্রয়োগ করেই দাসদের কাজ করতে বাধ্য করা হতো। চাবুকের ভয়ে দাসরা প্রভুর হুকুম মেনে চলত। এভাবে যখন ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়, তখন মানুষ মন খুলে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা ব্যক্ত করতে পারে না। কারণ তাতে পরিণতি হয় অত্যন্ত ভয়াবহ। ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে এর বিপরীতে যে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় এবং আনুগত্য আদায় করা হয়, সেটি ঘটে মূলত ইতিবাচকভাবে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে। যে ব্যক্তি অনুগত হবে তাকে মূল্যবান কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাথমিক স্তরে বিশেষ করে গ্রামভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নানাভাবে ক্ষতিপূরণ করার পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যেমন- পণ্যে প্রাপ্য শোধ করা এবং এক খণ্ড জমি চাষ করার জন্য ভূমি মালিকের কাছ থেকে ফসলের একটি অংশ পাওয়া। ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে প্রশংসারও ব্যবহার করা হয়। আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগের হাতিয়ার হল আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা। কোনো সেবা প্রদানের বিনিময়ে এ ব্যবস্থায় অর্থ প্রদান করা হয়। এটি আসলে অন্যের অর্থনৈতিক অথবা ব্যক্তিগত স্বার্থে অনুগত হওয়ারই এক ধরনের পুরস্কার।

জবরদস্তি অথবা শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এবং ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়, সে সম্পর্কে আনুগত্য প্রদানকারী ব্যক্তি বুঝতে পারে। একটি ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে এবং অন্য ক্ষেত্রে প্রাপ্তির আশায়। অভ্যস্ত করার মাধ্যমে যে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়, তা করা হয় মূলত মানুষের বিশ্বাসের জগতে পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে। প্ররোচনা, শিক্ষা অথবা সামাজিক অঙ্গীকার, যা দৃশ্যত স্বাভাবিক, সঠিক অথবা ন্যায়সঙ্গত মনে হয়, সেগুলো ব্যক্তিকে অন্যের ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পিত করে দেয়। বাহ্যিকভাবে মনে হবে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় পছন্দ করে কাজটি করছে; কিন্তু এর ভেতরে আত্মসমর্পণের বা অনুগত হওয়ার যে উপাদান রয়েছে তা অনেক সময় বোঝা যায় না। আধুনিক জমানার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা প্রয়োগ ও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগের তুলনায় মানুষকে অভ্যস্ত করে ক্ষমতা প্রয়োগের কৌশল প্রাধান্য অর্জন করেছে।

উপর্যুক্ত তিন ধরনের ক্ষমতার উৎসের পেছনে রয়েছে তিন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা বৈশিষ্ট্য, যা একটিকে অন্যটি থেকে পৃথক করে। এ তিনটি উৎস হল- ব্যক্তিত্ব, সম্পত্তি এবং সংগঠন। ব্যক্তিত্ব বলতে আমরা সাধারণভাবে নেতৃত্বকেই বুঝে থাকি। ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে দৈহিক সৌন্দর্য, মানসিকতা, বক্তৃতা, নৈতিক নিশ্চয়তা অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিগত গুণাবলির মাধ্যমে একজন অন্যজনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষমতাশালী হওয়ার মধ্য দিয়ে। আদিম সমাজে দৈহিক বলের মাধ্যমে এর প্রকাশ ঘটত। আদিম সমাজে দৈহিক বলই ছিল জবরদস্তিমূলক ক্ষমতার উৎস। আজকের দিনে পুরুষরা নারীর ওপর পেশিশক্তির কারণেই প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম। তবে আধুনিক সমাজে ব্যক্তিত্ব বলতে বোঝায় অন্যদের সম্মত হতে রাজি করানো। অর্থাৎ আধুনিক সমাজে ব্যক্তিত্বের ব্যবহার করে অন্যদের মেনে নিতে অভ্যস্ত করানো হয়। আধুনিক সমাজে ব্যক্তিত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে এক ধরনের অভ্যস্ত করার ক্ষমতা।

সম্পত্তি অথবা সম্পদ কর্তৃত্ব অর্জনের সুযোগ করে দেয় এবং উদ্দেশ্য অর্জনকেও সম্ভব করে তোলে। এর ফলেও অভ্যস্ত করার মাধ্যমে মানুষের আনুগত্য অর্জন করা হয়। তবে সম্পত্তি বা সম্পদের মাধ্যমে স্পষ্টত ক্ষতিপূরণকারী ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হয়। টাকা-পয়সার বদৌলতে আধুনিক সমাজে আনুগত্য ক্রয় করা হয়।
আধুনিক সমাজে সংগঠন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার উৎস। অভ্যস্ত করার ক্ষমতার সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ক্ষমতা চাইলে অথবা ক্ষমতার প্রয়োজন হলে সংগঠন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। সংগঠন ব্যবহার করে নির্ধারিত মাত্রায় মানুষের সম্পত্তি আদায় করা সম্ভব হয়। সম্মতির মাধ্যমে আনুগত্য অর্জন সংগঠনের মূল লক্ষ্য। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংগঠনের রয়েছে জবরদস্তি অথবা শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতা। একটি সংগঠিত দল বেশি অথবা কম মাত্রায় ক্ষতিপূরণ করার ক্ষমতা অর্জন করে তার সদস্যদের মালিকানায় থাকা অর্থ ও সম্পদের মাধ্যমে। ক্ষমতা প্রয়োগের হাতিয়ারগুলোর বিভিন্ন মাত্রায় মিশ্রণ করেই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। ব্যক্তিত্ব, সম্পত্তি এবং সংগঠন- আধুনিক সমাজে বিভিন্ন মাত্রার মিশ্রণ ঘটিয়ে ক্ষমতার প্রয়োগ করা হয়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আলোচিত তিন ধরনের ক্ষমতারই প্রয়োগ আমরা লক্ষ করি। প্রতিপক্ষকে দমন-পীড়ন করে এ দেশে জবরদস্তিমূলক ক্ষমতার প্রয়োগ করা হয়। নানা রকম পুরস্কার ও আর্থিকভাবে লাভবান করার প্রলোভন দিয়ে সমর্থন ও আনুগত্য ক্রয় করা হয়। অন্যদিকে মিডিয়া, প্রচার মাধ্যম এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন ঘটিয়ে সমর্থন ও আনুগত্যও প্রদান করতে মানুষ নিজের অজান্তে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এ তিন ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগপ্রণালির মধ্যে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, কোনটি প্রধান এবং কোনটি অপ্রধান। যে গণতন্ত্রের কথা আমরা বলি, সেটি আসলে মানুষকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তার লালিত মত বদলে একটি নির্দিষ্ট পক্ষে হেলে পড়াকেই বোঝায়। ক্ষমতার কবলে পড়া খুব সুখকর কিছু নয়। তবে অভ্যস্ত করে মানুষকে মেনে নিতে সম্মত করানো আপেক্ষিকভাবে সভ্য প্রক্রিয়া। কিন্তু এটিও আদর্শ ব্যবস্থা হতে পারে না। ক্ষমতা প্রয়োগ ছাড়া সমাজ চলে না। কিন্তু আদর্শরূপে ক্ষমতা প্রয়োগ ও পদ্ধতি অর্জনের জন্য আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। প্রয়োজন হবে নবতর কোনো দর্শনের।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ

https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/12606