২৮ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৭:৪৮

‘নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখছে না’ ঢাবি প্রশাসন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন 'নিরপেক্ষ ভূমিকা না রেখে' আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ শিক্ষক। এদিকে, ওই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দার পাশাপাশি এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আচরণকে 'দায়িত্বহীন' আখ্যায়িত করে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাবেক ৪৬ নেতা।গতকাল শুক্রবার পৃথক বিবৃতিতে শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রনেতাদের বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এসব বিবৃতিতে 'নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের' ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়।

শুক্রবার এক যুক্ত বিবৃতিতে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান তারা।

শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রশাসন যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না, সংবাদমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিই তার প্রমাণ। নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা এবং আন্দোলন দমাতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ভাবমূর্তিকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

“আমরা অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়ন ও হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই।”

এতে আরও বলা হয়, আমরা অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন ও হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই।

শিক্ষকরা বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায্য হলে তা মেনে নিয়ে, কিংবা দাবির যৌক্তিকতা না থাকলে সেখানে শিক্ষার্থীদের যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে ও ধৈর্যসহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশাসন সে পথে না গিয়ে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রক্টর কার্যালয় ও উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো 'প্রচলিত সাধারণ কর্মসূচি' ঠেকাতে বিভিন্ন ফটকে তালা দেওয়ারও সমালোচনা করেন বিবৃতিদাতা শিক্ষকরা। তারা বলেন, অথচ হামলার ঘটনার পরদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বকে বহিস্কারের দাবিতে ছাত্রলীগ ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করলে তখন উপাচার্যের কার্যালয়ের বাইরের ফটক কিন্তু উন্মুক্তই ছিল! এতে পুনরায় প্রমাণিত হলো যে প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না।

এই ধরনের 'দুঃখজনক ঘটনা' এড়াতে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ছাত্রদের নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান ওই শিক্ষকরা।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নেহাল করিম, এমএম আকাশ, গীতি আরা নাসরীন, কাবেরী গায়েন, ফাহমিদুল হক, তানজীম উদ্দিন খান, সামিনা লুৎফা, মোহাম্মদ আজম, মোশাহিদা সুলতানা, দেবাশীষ কু ু, সাজ্জাদ এইচ সিদ্দিকী, মুনাসির কামাল, অতনু রব্বানী, দীপ্তি দত্ত; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নাসিম আখতার হোসাইন, সৈয়দ নিজার আলম, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, আইনুন নাহার, রায়হান রাইন, মানস চৌধুরী, পারভীন জলি, হিমেল বরকত, খন্দকার হালিমা আখতার রিবন, রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, মোশরেফা অদিতি হক, মাহমুদুল হাসান সুমন, স্বাধীন সেন, সাঈদ ফেরদৌস, শরমিন্দ নিলোর্মি; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভী চৌধুরী, তানভীর আহসান, ফারহানা সুস্মিতা, সৌম্য সরকার, কাজী অর্ক রহমান; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম দত্ত; যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম; ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিল; বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক সুকান্ত বিশ্বাস, কাজী মশিউর রহমান, হাবিবুর রহমান; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভুঁইয়া, মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন; সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবুল কাশেম এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গাজী এমএ জলিল।

সাবেক ছাত্রনেতাদের বিবৃতি :সাবেক ছাত্রনেতাদের যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, উপাচার্যের কক্ষে, আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে গেটে তালা দিয়ে রাখতে হয়। আর 'নিজেকে রক্ষার' অজুহাতে সরকারি ছাত্র সংগঠনের আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয় প্রশাসনকে। যা স্বৈরাচারী শাসকদের আমলকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

http://www.dailysangram.com/post/316886