২৫ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৫:৩৬

ভাইরাল

পর পর দু’টি ঘটনায় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আলোচনায় এসেছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেত্রী। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজ বাতিল চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে হামলা, এরপর নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেত্রীদের ওপর হামলা ও হেনস্তার ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল। নিজে নারী হয়েও অন্য একজন আন্দোলনকারী নারীর জামা ছেঁড়া, মেঝেতে ফেলে মারধর করা, চুল ধরে টানা হেঁচড়াসহ মারমুখী আচরণ চারপাশে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ছাত্র রাজনীতির এ কদাকার রূপ দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে ঢাকার সাত কলেজকে বাদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ধারাবাহিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১৫ই জানুয়ারি ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করে তারা।

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা ঘটনাস্থলে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। ওইদিন আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মশিউর রহমান সাদিককে ভিসির কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগ। এছাড়াও আন্দোলনকারী অন্যদের হেনস্তা করে। এদের মধ্যে আন্দোলনে অংশ নেয়া নারী শিক্ষার্থীদেরকে উত্ত্যক্ত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আর সংগঠনটির নারী নেত্রীরা আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের ঘাড় ধরে টানা হেঁচড়া করে আন্দোলনের স্থান ত্যাগে বাধ্য করেন। এছাড়াও আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে ‘নির্যাতন’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজীর হোসেন নিশি, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান তন্বী ও কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সার্জিয়া শারমিন শম্পার বিরুদ্ধে।

এসব ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীদের আক্রোশের শিকার হন এনটিভি অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার মামুন তুষার। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঝড় উঠে সর্বত্র। বামসমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, সাত সরকারি কলেজকে অধিভুক্ত থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হওয়া ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত কয়েকদিন যাবৎ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন সময় প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীকে অবরুদ্ধ করা, ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান এবং বেশ কয়েকটি কলাপসিবল গেইট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে।

সর্বশেষ গত ২০শে জানুয়ারি সংহতি সমাবেশ থেকে মামলা প্রত্যাহারসহ ৪ দফা দাবি করে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’রা। দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গত ২৩শে জানুয়ারি বুধবার পর্যন্ত আলটিমেটাম দেয়া হয়। এদিন আলটিমেটাম শেষ হওয়ায় পুনরায় ভিসি কার্যালয় অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। ভাঙচুর করা হয় কার্যালয়ের ভেতরে ও বাইরের ৩টি ফটক। প্রশাসন নানা ধরনের আশ্বাস দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে বিকালে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারীরা। ঘটনা জানতে পেরে ছাত্রলীগ নেতারা এসে ভিসিকে আন্দোলনকারীদের থেকে উদ্ধার করে। পরের ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিত, চিত্রটা কুৎসিত। ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল থেকে নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। প্রশাসনিক ভবনের চারদিক ঘিরে আন্দোলনকারীদের মাঝখানে আটকে ফেলে। এরপর চলে ব্যাপক মারধর। আর এ মারধরে অংশ নেন ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা। এদিন প্রশাসনিক ভবনের পেছনের গেইটে (সোনালী ব্যাংকের সামনে) এক নারী আন্দোলনকারীর পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায় ছাত্রলীগের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লাকে। এছাড়াও নারী আন্দোলনকারীদের মারধরে অংশ নেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি, সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি ফরিদা পারভীন, শামসুন্নাহার হলের সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী, সাধারণ সম্পাদক জেয়াসমিন শান্তা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিশিতা ইকবাল নদীসহ অনেককে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন নিজ সংগঠনের নারী নেত্রীদের কর্তৃক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নারী নেত্রীদের ওপর যখন হামলা হয়, তখন তারা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে। তখন কি তারা আত্মরক্ষা করবে না?’ জাকির বলেন, ‘আমাদের নারী নেত্রীদের মারধর করা হয়েছে। আমাদের এক নেত্রীর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি আছেন। বাকিরাও ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি আছেন।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মৌখিক কথায় যদি যৌন হয়রানি হয়ে থাকে, তাহলে তো আমাদের মেয়েদের গায়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করা হয়েছে তো সেটি কি যৌন হয়রানি নয়! তারা যে আমাদের বোনদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়েছে তাহলে এটি কি?’