২৫ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৪:৫৩

৪২৩ কোটি টাকার চাল আমদানি করা হচ্ছে

বিদেশ থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের (ওপেন টেন্ডার) মাধ্যমে এক লাখ টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানি করা হচ্ছে। একই সাথে সোয়া লাখ টন সারও আমদানি করা হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে গতকাল সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চাল ও সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সর্বনিম্ন দরাদাতা হিসেবে কুষ্টিয়ার রশিদ অটোমেটিক রাইস মিলস লিমিটেড তিনটি প্যাকেজে ৪২২ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় এসব চাল সরবরাহ করবে। গত বছর হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর থেকে দেশে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। চালের সরকারি মজুদও সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। বাজারে চালে দাম বেড়ে হয় প্রকার ভেদে কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি শুল্ক কমিয়ে দুই শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। এ ছাড়া সরকারি মজুদ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে ১৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ধাপে ধাপে চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠকে মোট ১৫টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আওতায় রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে গ্রুড ক্রিমিকিউ তিউনিশিয়া ও বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে স্বারিত চুক্তির অধীনে প্রথম লটের ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। মোস্তাফিজ্রু রহমান সাংবাদিকদের জানান, প্রতি টন ২৯০ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলারে এসব সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কোটেশনের মাধ্যমে ৪৫ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি।

মেসার্স পোটন ট্রেডার্স ৭৩ কোটি ৮০ হাজার টাকায় ২৫ হাজার টন এবং মেসার্স হাইড্রোকার্বন ৫৮ কোটি ৪০ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় বাকি ২০ হাজার টন সার আমদানি করবে। রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে চুক্তির আওতায় দ্বিতীয় লটে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি টন ২৫০ মার্কিন ডলারে এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৫২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি ও বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে চুক্তির আওতায় প্রথম লটের ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি করা হবে। প্রতি টন ৩০৩ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার ব্যয়ে এতে মোট খরচ হবে ৬৩ কোটি সাত লাখ ৬০ হাজার টাকা। অতিরিক্ত সচিব জানান, ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও অ্যাকাডেমিক সুবিধা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ৩য় অ্যাকাডেমিক ভবন ও কেন্দ্রীয় গবেষণাগার নির্মাণ (১০ তলা ভিতে, ১০ তলা) কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ১৭৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নাধীন ‘উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় লেকের ওপর দুটি ব্রিজের অবশিষ্টাংশ নির্মাণ, একটি লেকের উন্নয়ন ও প্রটেকশন কাজ এবং সাতটি রাস্তা নির্মাণকাজের ১ম ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের অতিরিক্ত ৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার অতিরিক্ত কাজের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের বিদ্যমান পাসপোর্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পূর্বের চুক্তির ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত ৫০ লাখ এমআরপি বুকলেট ও ৫০ লাখ ৫০ হাজার লেমিনেশন ফয়েল সংগ্রহের পুনরাবৃত্ত ক্রয়াদেশ প্রদানের নিমিত্ত চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৩৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কালখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশীয়ানি-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া নতুন রেলপথ নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাইটেক পার্কের জন্য মির্জাপুর ও মৌচাক স্টেশনের মধ্যবর্তী কালিয়াকৈরে একটি ‘বি’ কাস স্টেশন নির্মাণ’ প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অভিহিতকরণ করা হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ কোটি ৮৪ রাখ টাকা। এ প্রকল্পে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৩ কোটি ১৭ টাকা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪১ হাজার ৯২১ কিলোমিটার কন্ডাক্টর ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ব্যয় হবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা।

এ ছাড়াও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদি চুক্তির আওতায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে জানুয়ারি-জুন, ২০১৮ সালের প্রান্তিকের প্রিমিয়াম ও মূল্য (রেফারেন্স প্রাইস অনুযায়ী) অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিভিন্ন দেশ থেকে এসব জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। জ্বালানি তেলের প্রিমিয়াম হিসাবে ব্যয় হবে ২৪৫ কোটি টাকা। মোট দাম নির্ধারণ করা হবে আন্তর্জাতিক দরের ওপর ভিত্তি করে। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ বিধি-বিধান অনুসরণ করে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ১০০০ পিএসআইজি চাপ সম্পন্ন ১৮১.০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণকাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ব্যয় হবে ৩৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

বৈঠকে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’এর আওতায় রূপকল্প-৯:২ডি সাইসমিক প্রকল্পের আওতায় ২ডি সাইসমিক কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহারের জন্য ২ডি সাইসমিক ডাটা প্রসেসিং সিস্টেম সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর আওতায় রূপকল্প-১ শীর্ষক প্রকল্পের খনন কাজে ব্যবহারের জন্য ড্রিল পাইপ ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/288031