জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের অনশন। ছবিটি গতকাল বুধবার তোলা
২৫ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৪:৫০

টানা ১০ দিন অনশনেও ইতিবাচক আশ্বাস পাননি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকরা

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘট চলছে। এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা গতকাল বুধবার পর্যন্ত টানা ১১ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।

বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব রোহান উদ্দিন জানান, আমরা জাতীয়করণের দাবিতে বুধবার পর্যন্ত টানা ১০ দিনের মতো অনশন কর্মসূচি পালন করছি। এছাড়া দেশে সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই দাবিতে তিন দিনের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন পালন করছি, আজ বৃহস্পতিবার তিন দিনের ধর্মঘট শেষ হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে। আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এই প্রাণের দাবি মেনে নেবেন। আন্দোলনকারী সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইদুল হাসান সেলিম জানান, ৩৮ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন হচ্ছে। ধর্মঘটের সঙ্গে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ১০ দিন ধরে আমরণ অনশন করলেও সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাইনি। খোলা আকাশের নিচে শীতের মধ্যে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আশাকরি প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেবেন।

শিক্ষকরা গত ১০ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে গত ১৫ তারিখ একই স্থানে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। এদিকে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে টানা ১৫ দিনের মত অতিবাহিত করছেন তারা। তবে মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু দাবির ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বার্তা না পাওয়ায় তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দুপুর ২টার দিকে দেখা যায়, জাতীয়করণের দাবিতে কয়েক শতাধিক শিক্ষক রাস্তায় বসে আছে এবং তাদের দাবির পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে নারীও রয়েছেন। অনশন করায় ১১৫ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মামুনুর রশিদ, চাঁদপুর জেলার আব্দুর রশিদ ও বরগুনার আনিছুজ্জামান গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (নজরুল), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (শাহ আলম-জসিম), জাতীয় শিক্ষক পরিষদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন সমন্বয়ে গঠিত ৬টি বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের ব্যানারে তারা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল খালেক বলেন, এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশের প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা সেসব প্রতিষ্ঠান চালালেও নামেমাত্র বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তা দিয়েই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অথচ ৩ শতাংশ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উচ্চমানের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এ কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে হবে। এ দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি।

এর আগে ৩১ ডিসেম্বর থেকে টানা ৬ দিন আমরণ অনশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দিলে শিক্ষকরা অনশন প্রত্যাহার করেন। এরপর ৯ জানুয়ারি থেকে টানা ৮দিন আমরণ অনশন শেষে ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়কারণের প্রক্রিয়ার আশ্বাস দিলে তারাও অনশন প্রত্যাহার করে ফিরে যান।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন।

এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করণে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টানা চতুর্থ দিনের মতো জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতীকী অনশন পালন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার তাদের পঞ্চম দিন। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান নিয়ে প্রতীকী অনশন করছেন তারা। টানা চার দিন ধরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাননি তারা।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। কিন্তু ৪ হাজার ১৬৯টি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ে যায়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না করতে পারায় জাতীয়করণ করা হয়নি।

বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বলেন, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন, তখন আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ পড়ে যায়। আমরা টানা চার দিন ধরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছি। কিন্তু সরকারের দিক থেকে কোনো সাড়া পাইনি।

তিনি বলেন, চার দিন ধরে অবস্থান করায় আমাদের ২১ জনের মতো অসুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, তারা বিভিন্ন ফেস্টুন-প্লে­কার্ড নিয়ে তারা আন্দোলন করছেন। এই প্লে­কার্ডের লেখাগুলো হচ্ছে- 'লক্ষ রোহিঙ্গা খাবার পায়, শিক্ষক সমাজ কেন অসহায়?', 'অর্ধাহারে অনাহারে আর কত দিন, আমাদেরকেও বাঁচতে দিন', 'মাগো তুমি দেখে যাও, আমাদের দাবি মেনে নাও', 'এসি বাড়ি, এসি গাড়ির প্রয়োজন নাই, মোটা ভাত মোটা কাপড়ের নিশ্চয়তা চাই', 'বিলাসিতা চাই না, মানুষের মতো তিন বেলা খাবার খেয়ে বাঁচতে চাই।'

সরেজমিন গিয়ে দুপুরে দেখা যায়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে অর্ধ-শতাধিক নারী রয়েছেন। অসুস্থ হওয়ায় সাতজনকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, 'তারা বিনা বেতনে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন।'

সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আ. স. ম. জাফর ইকবাল বলেন, জাতীয়করণের সকল শর্ত পূরণ করা হলেও জাতীয়করণ থেকে ৪ হাজার ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরণ অনশন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

http://www.dailysangram.com/post/316537