২৫ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৮

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না

ছাত্রলীগের হামলা

সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই সাত কলেজের অধিভুক্তি ছিল সরকারের অপরিণামদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর তারই প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা ঘটে, যার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ব্যর্থতাই মঙ্গলবারের সহিংস প্রতিবাদকে উসকে দিয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করা ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছিল না। উপাচার্য ছাত্রলীগের নেতাদের ফোন করে ডেকে এনেছেন, এই অভিযোগ সত্য হলে তা খুবই ন্যক্কারজনক।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। শিক্ষকনেতা বা শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেত। এসবে কাজ না দিলে প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও নিতে পারত। কিন্তু সেসব আইনানুগ পথে না গিয়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যে সন্ত্রাসী ঘটনার জন্ম দিলেন, তা খুব খারাপ নজির হয়ে থাকবে। কেউ আইন ভাঙলে আইনের পথেই প্রতিকার খুঁজতে হবে। গায়ের জোর খাটানো কিংবা দুর্বল প্রতিপক্ষের ওপর শক্তি প্রদর্শন মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির কথাই মনে করিয়ে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কৈফিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। উদ্ধার-নাটকের সফল মহড়ায় সমস্যার সমাধান দেবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সংগঠনবিশেষের ওপর আস্থা না রেখে দলমত-নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর ওপর ভরসা রাখা। ১৫ জানুয়ারির আন্দোলনের সময়ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অব্যাহত নীরবতাও দুঃখজনক।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া ও ফলাফল প্রকাশ জরুরি। বর্তমান উপাচার্য যদিও স্বীকার করেছেন, অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশ করার অবকাঠামো তাঁদের নেই। সে ক্ষেত্রে সাত কলেজের দায়িত্ব অবিলম্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ফের ন্যস্ত করাই সংগত কি না, তার দ্রুত ফয়সালা দরকার। সমস্যাটি যত বেশি দিন ঝুলিয়ে রাখা হবে, ততই সংকট ঘনীভূত হবে। মঙ্গলবারের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করেছে। আশা থাকবে, কমিটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পথ পরিষ্কার করবে। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের জায়গা, হানাহানির জায়গা নয়।

http://www.prothomalo.com/opinion/article/1416536