২৪ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১০:১২

যশোরে দীর্ঘ হচ্ছে বেওয়ারিশ লাশের মিছিল, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

যশোরে বেওয়ারিশ লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়ছে বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের ঘটনা। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের বেশির ভাগেরই কোনো নাম পরিচয় না মেলায় লাশ পড়ে থাকছে হাসপাতালের মর্গে। নাম উঠছে বেওয়ারিশ লাশের খাতায়। তারপর ঠিকানা নির্ধারণ করছে আনজুমানে মুফিদুল ইসলাম। শেষ ঠিকানা যশোরের কারবালা কবরস্থান।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে এই বেওয়ারিশ লাশের খাতায় যুক্ত হয়েছে ৯টি লাশ। যেগুলো এখনো পড়ে আছে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। স্থানীয় পত্রপত্রিকায় এসব লাশের ছবি ছাপা হলেও কারো
নাম ঠিকানা বা পরিচয় মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে নিহতদের সকলের বাড়ি যশোরের বাইরে।
সম্প্রতি যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পুলিশ ৯টি লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে শনিবার ভোরে যশোর সদর উপজেলার নঙ্গরপুর কেন্দুপুকুর পাড় থেকে ২ জন ও ঝিকরগাছা উপজেলার চাপাতলা মাঠ থেকে আরো ২ জন গুলিবিদ্ধ যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ বেওয়ারিশ হিসেবে এসব লাশ পাঠায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। পোস্ট মর্টেমের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ ৪টি বেওয়ারিশ খাতায় এন্ট্রি করে মর্গেই রেখে দিয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোববার ভোরে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে আরো ৫টি লাশ। এর মধ্যে সদর উপজেলা রঘরামপুর মাঠ থেকে ১ জন, মান্দারতলা রাস্তার মোড় থেকে ১ জন, বাঘারপাড়ার ভাঙ্গুরা ব্রিজের নিচ থেকে ১ জন, শার্শার চারাতলা এলাকা থেকে ১ জন ও বাঘারপাড়ার নারিকেল বাড়িয়া বাজারের পূর্বপার্শ্ব হতে অপর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি লাশ উদ্ধারের স্থান থেকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি, ওয়ানশুটারগান, কাটা রাইফেল, বন্দুক, বোমা ইত্যাদি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় পুলিশ বাদী মামলা হচ্ছে। আর সেসব মামলায় সরকারি দলের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গড়ে আসামি করা হচ্ছে। এদিকে এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপিসহ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে পুলিশ ব্যতিব্যস্ত হলেও লাশের সৎকারে কোনো উদ্যোগ নেই কোনো মহলেরই। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মর্গের ডোম সখি চান বলেন, কি আর করুম। মর্গে লাশ রাখার জায়গা হচ্ছে না। একটার পর একটা লাশ তুলে রেখে দিয়েছি। কিন্তু নাম পরিচয় না থাকায় কারো স্বজন আসছে না। পোস্ট মর্টেম করে স্যাররা লাশ রেখে চলে গেছে। পুলিশও তার কাজ শেষ করে চলে যাচ্ছে। মর্গের যে অবস্থা তাতে নতুন লাশ আসলে বাইরে রাখতে হবে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার কামরুল ইসলাম বেনু বলেন, বেওয়ারশি লাশের দাফন কাপনের ব্যবস্থা করে আনজুমানে মফিদুল ইসলাম। আমরা আরো কয়েক দিন দেখবো এসব লাশের কোনো পরিচয় মেলে কিনা। বিধান অনুসারে আমরা এগোচ্ছি। শেষ পর্যন্ত এসব লাশের কোনো পরিচয় না মিললে লাশ বহনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে এভাবে বেওয়ারিশ লাশের মিছিল দীর্ঘ হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন যশোরের সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার রঘুরামপুরে উদ্ধারকৃত বেওয়ারিশ লাশের বিপরীতে কোতোয়ালি থানায় পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে। এসআই নুর উন নবী বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় বিএনপি-জামায়তের ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি নেতা মুনির আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, বিল্লাল মেম্বর, আনসারুল হক রানা, বদিউজ্জামান ধনি, ফারুক হোসেনজাকির হোসেন, সুমন হোসেন, মিল্টন, সোহাগ মুন্না, কবির হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন গোলাম রসুল, মোস্তফা আমির ফয়সাল, নুরুন্নবী, বিল্লাল হোসাইন প্রমুখ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। পুলিশ বলছে বাকি লাশের বিষয়ে পুলিশ পর্যায়ক্রমে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=101837