২৪ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:৩১

ফাঁড়া কাটল শর্ত ভাঙলে ফের অচল

৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ নির্বাহে বিল পাস * অক্টোবরে অর্থবছর শুরুর পর এ নিয়ে টানা চারবার স্বল্পমেয়াদি বাজেট * দীর্ঘমেয়াদি বাজেট পাসে আবারও আশাবাদী রিপাবলিকান শিবির

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের অচলাবস্থা কাটল। টানা ৩ দিন ধরে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। ডেমোক্রেটদের মন পাননি ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা। কোনো মন্ত্র কাজে আসেনি। আলোচনা-পর্যালোচনা, প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাবের পর শেষমেশ ড্রিমার্স প্রকল্পকেই প্রধান শর্তের তালিকায় রেখেছে রিপাবলিকান দল। সব মিলিয়ে বাজেট পাস নয়, যেন এক চুক্তি সেরে ফেলল ডেমোক্রেট-রিপাবলিকান। সোমবার রাতে কংগ্রেসের উভয়কক্ষের ভোটাভুটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের স্বল্পমেয়াদি বাজেট বিল পাস হয়। এতে অচলাবস্থার নিরসন হয়। কিন্তু এখনও ফাঁড়া কাটেনি। ‘চুক্তির’ শর্ত ভাঙলে ফের সরকার অচল হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। খবর বিবিসি ও এফপির।
বিবিসি জানায়, সোমবার রাতে স্বল্পমেয়াদি বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজেট বাড়ানো সংক্রান্ত একটি বিলে সিনেটররা একমত হতে না পারায় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেলের কাছ থেকে অবৈধ তরুণ অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর ডেমোক্রেটরা বিল পাসের পক্ষে ভোট দিতে সম্মত হন। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে সরকারের ব্যয় নির্বাহের বিলটি সিনেটে ৮১-১৮ ভোটে এবং প্রতিনিধি পরিষদে ২৬৬-১৫০ ভোটে পাস হয়। এ বিলের বদৌলতে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় নির্বাহের অর্থ নিতে পারবে সরকার। তবে এ সময়ের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাজেট পাস হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী রিপাবলিকান শিবির। গত অক্টোবর মাস থেকে চতুর্থবারের মতো স্বল্পমেয়াদি বাজেট বিল পাস হল। কারণ দীর্ঘমেয়াদি বাজেট পাস করতে সম্মত হতে পারেনি ক্যাপিটল হিল (কংগ্রেস)।

বাজেট সংকটের কারণে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটিতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের লাখ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী বিল পাসের খবরে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। তাদের জন্য এ অভিজ্ঞতা নতুন নয়। বারাক ওবামার আমলেও সরকার পরিচালনার বাজেট আটকে দিয়েছিল রিপাবলিকানরা। সে সময় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ কর্মচারীকে ছুটিতে যেতে হয়েছিল। রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, অভিবাসন চুক্তি নিয়ে ডেমোক্রেটদের সঙ্গে সমঝোতায় সম্মত হয়েছে দল। ডেমোক্রেটদের চাওয়া, শিশু বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসা যে ৭ লাখ অবৈধ অভিবাসী তরুণ ড্রিমার প্রকল্পের আওতায় পড়াশোনা ও চাকরি করছে, তাদের যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা না হয়। আর এই চুক্তি বাজেট পাস হওয়ার আগেই করতে হবে। কিন্তু রিপাবলিকানরা দাবি করছিল, সরকারের সেবা বন্ধ থাকলে কোনো চুক্তিতেই আসা সম্ভব নয়। পরে দু’পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে সরকারের ব্যয় নির্বাহের বিল পাস করে।
রোববার রাতে ডেমোক্রেটদের রাজি করাতে ড্রিমার্স প্রকল্প নিয়ে সিনেটে উন্মুক্ত বিতর্কের প্রতিশ্রুতি দেন ম্যাককনেল। এমনকি এ নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে ভোটাভুটি হবে বলেও জানান তিনি। এমন প্রস্তাবে বশে আসে ডেমোক্রেটরা। ভোটাভুটির আগে সিনেটের সংখ্যালঘু ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার জানান, রিপাবলিকানদের সঙ্গে অভিবাসন নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রেক্ষাপটে সরকার সচলে আমরা প্রস্তাব পাসে ভোট দিতে রাজি হয়েছি।

বিল পাসের পর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি খুশি, কারণ ডেমোক্রেটরা তাদের সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে।’ এতে তিনি আরও বলেন, ‘যদি এবং সত্যিই যদি আমাদের দেশের জন্য ভালো হয়, তাহলে অভিবাসন নিয়ে আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করব।’ এ সংকট নিরসনকে ‘বড় বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পরে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লেখেন, ‘শাটডাউন ইস্যুতে রিপাবলিকানের জন্য বড় জয় হয়েছে এবং গর্তে পড়েছে ডেমোক্রেট। যদিও আমি এখানে সবার জয় দেখছি- রিপাবলিকান, ডেমোক্রেট ও ডাকা (ড্রিমার্স প্রকল্প)। কিন্তু বিশেষভাবে আমাদের মহান সেনা সদস্য ও সীমান্তরক্ষীদের জন্য বিরাট জয় এটি। আপনাদের (ডেমোক্রেট) সঙ্গে আলোচনার টেবিলে দেখা হবে।’

তবে ডেমোক্রেটদের এ সিদ্ধান্তকে ‘চরম ভুল’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর হ্যারিস বলেন, এটা খুবই ‘দুঃসাহসিক’ কাজ হবে যে মিথচ ম্যাককনেলের (রিপাবলিকান সিনেট নেতা) প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করা। আগামী সপ্তাহে অভিবাসী ইস্যুতে আলোচনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার আরেক সিনেটর ডিয়ানে ফেইন্সটেইন বলেন, ‘রিপাবলিকানদের সঙ্গে এমন চুক্তিতে তিনি হতাশ হয়েছেন। এখানে কোনো বিশ্বাস নেই যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ড্রিমার্স প্রকল্প নিয়ে রিপাবলিকানরা আমাদের সাহায্য করবে।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/10373