২৩ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০২

পুলিশের চরম গাফিলতি ছিল

সাতক্ষীরার কুখরালীর শেখ মোখলেছুর রহমান জনির ‘নিখোঁজের’ ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হবে আজ। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে গতকাল জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। ২০১৬ সালের ৪ঠা আগস্ট জনি নিখোঁজ হন। জনি নিখোঁজের ঘটনা পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্ত করতে গত বছরের ১৬ই জুলাই নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রোববার এ প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনি নিখোঁজের ঘটনায় থানায় মামলা বা জিডি না নেয়ায় সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ দায়িত্ব পালনে চরম অদক্ষতা ও অবহেলা দেখিয়েছে।
একই সঙ্গে ওই থানার সংশ্লিষ্টরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়নি উল্লেখ করে ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে পিবিআই। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে দায় এড়াতে পারে না। কেননা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কর্তব্য যথাসময়ে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা। আর কোনো অপরাধী চক্র করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ভিকটিম ও অপরাধী চক্র উভয়কে খুঁজে বের করে আদালতে উপস্থাপন করা। অন্যথায় এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা কিংবা বানোয়াট হলে তা প্রমাণ করার দায়িত্বও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তায়। পিবিআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত, নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কোনো অপরাধী চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা প্রমাণ করা যায়নি। প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়, থানায় রক্ষিত সকল রেজিস্ট্রার পর্যালোচনাকালেও থানা হেফাজতে ভিকটিমকে রাখার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
জনির স্ত্রী জেসমিন নাহারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৪ঠা আগস্ট রাত সাড়ে নয়টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট এলাকা থেকে তার স্বামী মোখলেছুর রহমান জনিকে আটক করেন সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) হিমেল হোসেন। এরপর ৫, ৬ ও ৭ই আগস্ট থানায় গিয়ে তিনি (জেসমিন নাহার) স্বামীর সঙ্গে দেখা করে তাকে খাবার দিয়ে আসেন। পরে ৮ই আগস্ট থানায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি। থানা থেকে তাকে বলা হয়, মোখলেছুর রহমান জনি নামে থানায় কেউ নেই। এরপর জনির খোঁজ না পেয়ে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার গত বছরের ২রা মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে ৬ই মার্চ হাইকোর্ট রুল জারি করে। একই সঙ্গে নিখোঁজ জনির বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয় জনিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এরপর আদালত বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদ ঘটনার তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জনিকে গ্রেপ্তার ও তিন দিন পর্যন্ত থানায় আটকে রেখে পরবর্তীতে পুলিশের অস্বীকারের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। জনি নিখোঁজের ঘটনা পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্ত করতে গত বছরের ১৬ই জুলাই নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=101727