২২ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৮:৪০

অর্থনীতির ক্ষতি বাড়াচ্ছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভোগান্তি - শেষ

নূরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে সৃষ্ট যানজট অর্থনীতির ক্ষতি বাড়াচ্ছে। সময়ের অপচয় হচ্ছে, জ্বালানি পুড়ছে। বাড়ছে পরিবহন ব্যয়। যা বাড়িয়ে দিচ্ছে পণ্যমূল্য ও জীবন যাত্রার ব্যয়। আমদানি-রপ্তানি ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে যানজটের কারণে।

মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা ও কাঁচপুর সেতুতে সৃষ্ট যানজট প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। সরেজমিনে মেঘনা-গোমতীর টোলপ্লাজায় গিয়ে দেখা গেছে, আটটি টোল বুথের মধ্যে ৩/৪টি বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। এতে করে সেতুর উপরেই থমকে যাচ্ছে যানবাহন। পেছনে হচ্ছে দীর্ঘ গাড়ির সারি। আবার টোল বুথ থেকে বের হয়ে গাড়িগুলো আট লেনে ওঠার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। তাতেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মেঘনা-গোমতী সেতুর যানজট পেরিয়ে ঢাকার দিকে আসতে দ্বিতীয় যন্ত্রণার নাম কাঁচপুর সেতু। সেখানেও রাতদিন দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। এতে করে মালবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাসসহ সব ধরণের যানবাহনের জ্বালানী খরচ বৃদ্ধি, সময় নষ্ট এবং মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বিভিন্ন পরিবহনযান ও গণপরিবহনের যাত্রীদের মতে, দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব এবং উভয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে না থাকায় টোল প্লাজায় টোল দিতে সময় বেশি লাগে। অনেকেই মনে করেন, মেঘনা- গোমতী সেতুতে যানজট লাগে অব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল ভুলের কারণে। তার ওপর টোল প্লাজায় ওজন পরিমাপক যন্ত্র। এখন শুধু মালবাহী ট্রাক নয়, কোন গাড়িই এখন ওজন পরিমাপক মেশিনের প্রক্রিয়া শেষ না করে টোল প্লাজা পার হতে পারে না। ভুক্তভোগিরা মনে করেন, যানজটের জন্য প্রধানত দায়ী টোল বুথের অব্যবস্থাপনা। চালুর পর মেঘনা সেতুতে টোল বুথ ছিল চারটি। গত বছর টোল বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও যানজট কমে নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোটি টাকা খরচ করে টোল বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে সুফল মিলবে না, কারণ সেতু দুটি দুই লেনের। আগে সেতুর ভিতরে যানজট হতো। বুথের সংখ্যা বাড়ানোতে এখন টোল প্লাজা পার হয়ে সেতুতে ওঠার আগেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিপুলভাবে সম্পদের অপচয় হচ্ছে। জ্বালানি পুড়ছে, বাড়ছে পরিবহন ব্যয়ও। এটি বাড়িয়ে দিচ্ছে পণ্য মূল্য ও জীবন যাত্রার ব্যয়। আমদানি-রপ্তানি ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে যানজটের কারণে।

ভুক্তভোগিদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন কিংবা ৮ লেনের মহাসড়কে যানজট এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বন্ধে সরকারের কার্যকর কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে মহাসড়কটি চার লেন এবং আট লেনে উন্নীতকরণের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারণ। হাইওয়ে পুলিশের ভাষ্যমতে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় আরো একটি সেতু নির্মাণের আগে যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ভুক্তভোগিদের প্রশ্ন মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার সময়েই কেন বিষয়টি কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য করলো না?
ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যানজটের অন্যতম কারন সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বিভাগের উদাসীনতা। টোল প্লাজার বুথ খোলা রাখার সাথে যানজটের সম্পর্ক আছে। সবগুলো বুথ খোলা থাকলে গাড়ির চাপ বেশি থাকলেও তেমন একটা যানজট হয় না। গত দুই সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে তা স্পষ্ট হয়েছে। এটি দেখার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টোল প্লাজা পরিদর্শন করেছেন এমন নজির কেউ দেখাতে পারে নি। আবার সেতু বিভাগ মাঝে মধ্যে রাস্তা বন্ধ করে সেতু মেরামতের কাজ করে। আগে থেকে তারা কোনো নোটিশও দেয় না। এতে করে হঠাৎ করে রাস্তা বন্ধ করে সংস্কারের কাজ করার সময় গাড়ির চাপে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেতু বিভাগের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সংস্কারের কাজ শুরু হলে সব চাপ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপর। তখন যানজটের ধকল সামলাতে গিয়ে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে সংস্কারের কাজ করলে পুলিশ বিকল্প পথে যানবাহন পার করার সুযোগ পেতো। এতে করে যানজটও কম হতো।

অন্যদিকে, রাতে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চাপ বেশি থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। কোনো কারনে একবার গাড়ির দীর্ঘ সারি হলে তা সহজে মুক্ত করার জন্য পুলিশের তৎপরতা লাগে। কিন্তু রাত ১০টার পর মহাসড়কে পুলিশ থাকে না বললেই চলে। ভুক্তভোগি চালকরা জানান, রাত ১০টার পর মহাসড়কের উপরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা কোনো গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে রেকার আসতে আসতে ৩/৪ ঘণ্টা লাগে। অনেক সময় মহাসড়কের উপর ৪/৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হওয়ার পরও পুলিশ খুঁজে পাওয়া যায় না। কন্ট্রোল রুমে জানানোর পর মহাসড়কে দায়িত্বরত পুলিশ খুঁজতে খুঁজতে কেটে যায় এক ঘণ্টা। এ সব কারনে যাত্রী ও চালকদেরকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/113738