২২ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৮:৩৯

ছয় দিনেও ধরা পড়েনি সেই অস্ত্রধারী

নারায়ণগঞ্জ ফুটপাথে হকার বসানোকে কেন্দ্র কের এমপি শামীম ওসমান ও নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় অস্ত্র প্রদর্শনকারীদের কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি গত ৬ দিনেও
। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। এই অস্ত্র প্রদর্শনের কারণে নাসিক মেয়রসহ অনেকেরই জীবন বিপন্ন হতে পারতো। প্রকাশ্য জনসম্মুখে প্রদর্শিত এই সকল অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় না আনলে আগামীতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। এমন আশংকাও করছেন নগরবাসী। তবে পুলিশ শনিবার রাতে শহরের গলাচিপা এলাকায় সুমন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তারের অভিযান চালিয়েছে।
পুলিশের অভিযোগ, সে ১৬ই জানুয়ারির সংঘর্ষে অস্ত্র প্রদর্শন করেছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে আলোচিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়াজুলের কোনো হদিস পাচ্ছে না পুলিশ। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রমতে, থলের বিড়াল বের হবার আশংকায় সন্ত্রাসী নিয়াজুলকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিবার ও একান্ত ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কেউ তার অবস্থান জানেন না।
এদিকে সংঘর্ষের সময় ১২ জন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের গত ৬ দিনেও আইনের আওতায় না আনায় এবং অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষুব্ধ নারায়ণগঞ্জের পেশাদার সাংবাদিকরা। অস্ত্র প্রদর্শণকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন।

অপরদিকে শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক (বিবি রোড) হকার মুক্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসন সর্ব শক্তি প্রয়োগ করছে যাতে এই সড়কে কোনো হকার বসতে না পারে। ১৬ই জানুয়ারি বিকালে সংঘর্ষের পর থেকে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। কোনোভাবেই তারা বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসতে দিচ্ছেন না। তবে জেলা কোর কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরের ৪টি সড়কে হকার বসতে পারছে। নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল নগরবাসীর দুর্ভোগ সৃষ্টি করে শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসতে দেয়া হবে না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) মো. শরফুদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও ঘটনার দিন অস্ত্র প্রদর্শনকারীদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারাই অস্ত্র প্রদর্শন করেছে সেগুলো ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিসিকে স্মারকলিপি
এদিকে রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়াকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ১৬ই জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল চারটায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ১২ জন সাংবাদিক। তাদের মধ্যে শরীফ উদ্দিন সবুজ এখনো নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। কিন্তু ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, মঙ্গলবারের এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনকারী সন্ত্রাসী নিয়াজুল ইসলাম এবং শাহ নিজামসহ আরো অনেকে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় নারায়ণগঞ্জের পেশাদার সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ। এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসী হামলার সংবাদ প্রকাশের কারণে বিভিন্নভাবে হুমকিও প্রদান করা হচ্ছে, যা সাংবাদিক সমাজের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার। এক্ষেত্রে আমরা অবিলম্বে অস্ত্র প্রদর্শনকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমরা জাতীয় সাংবাদিক সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ঘোষিত “জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের সকল সংবাদ প্রচার বর্জন” কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হব।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=101596