২২ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৮:২৪

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে না

শিক্ষকদের অভিমত

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকপর্যায়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলে সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা খচর হবে না বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা। তাদের মতে, যদি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যৌক্তিক পরিমাণ বেতন আদায় করে তাহলে তা দিয়েই শিক্ষকদের বেতন প্রদান করা সম্ভব। শিক্ষকেরা বলেন, সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী মূল বেতনের শতভাগ প্রদান করে, সরকার বেসরকারি এসব স্কুল কলেজের আয় থেকে একটি টাকাও পায় না। অথচ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র বেতন, ভর্তি ফি, সেশন চার্জবাবদ বিপুল অর্থ আদায় করে থাকে।
শিক্ষকদের দাবি, জাতীয়করণ করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে সাধারণ মানুষ, যাদের এখন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে শহরে লেখাপড়ার পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়। জাতীয়করণের ফলে শিক্ষায় বিরাজমান বৈষম্য, বিশৃঙ্খলা দূর হবে। শিক্ষা নিয়ে একশ্রেণীর মানুষের বাণিজ্য বন্ধ হবে। মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবে এবং নিশ্চিত হবে শিক্ষার মান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় অবস্থিত গোপীনাথপুর আলহাজ শাহ আলম কলেজের সহকারী অধ্যাপক কাজী আশরাফুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, এমপিও ছাড়াও বর্তমানে নন-এমপিও যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকপর্যায়ে তাও যদি জাতীয়করণ করা হয় এবং সরকার সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারণ করে তাহলে সরকারের কোষাগার থেকে তেমন অতিরিক্ত কোনো টাকা খরচ হবে না এ খাতে।
শিক্ষক নেতারা বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের মাসিক বরাদ্দ সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা। জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন সর্বসাকুল্যে আরো ৫০ ভাগ বাড়বে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা মিলিয়ে। ফলে বেতন খাতে বর্তমান এক হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে। এর সাথে যোগ হবে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের মাসিক পেনশন এবং এককালীন অবসর ভাতা। কিন্তু জাতীয়করণ হলে এক কোটি ৬২ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে যদি যৌক্তিক পরিমাণ বেতন ও ভর্তি ফি আদায় করা যায় তাহলে সরকারের ব্যয় ও আয়ের মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান থাকবে না বলে দাবি করেন শিক্ষকদের অনেকে।

তাহলে সরকার কেন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করছে না জানতে চাইলে অনেক শিক্ষক বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না বলে তাদের বিশ্বাস। তা ছাড়া সরকার সবসময় বিপুল ব্যয়ের কথাই সামনে রাখে। কিন্তু আয়ের বিষয়টি বা আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিষয়টি বিবেচনা করে না। তা ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী একটি শ্রেণী রয়েছে যারা জাতীয়করণের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা, প্রতিষ্ঠা এবং নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় রয়েছেন, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ভাগবাটোয়ারা করে, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করেন তাদের অনেকেই জাতীয়করণের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া বেসরকরি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে থাকা অনেকেও এর বিরুদ্ধে তাদের সুবিধা খর্ব হওয়ার ভয়ে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের লক্ষ্যে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হচ্ছে যেখানে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছে। এর পাশপাশি জাতীয়করণ করা হলে অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য শিক্ষার্থীদের বেতনের একটি প্রস্তাব করা হয়েছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার বছরে কী পরিমাণ আয় করতে পারবে সেটি তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী বেতন ১২ টাকা, নবম থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত ১৮ টাকা আর একাদশ থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ২৫ টাকা। গড় বেতন ১৫ টাকা।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে জাতীয়করণ করা হলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন হবে ৫০ টাকা। নবম থেকে দশম পর্যন্ত বেতন ৭৫ টাকা। একাদশ থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত বেতন ১০০ টাকা। শিক্ষার্থী প্রতি গড় বেতন দাঁড়ায় মাসে ৭৫ টাকা।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ, ৬৩ হাজার ৭২৪ জন। তাদের সবার কাছ থেকে যদি গড়ে ৭৫ টাকা করে বেতন আদায় করা হয় তাহলে মাসে ১২২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে যোগ হবে। এর সাথে আরো যোগ হবে ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সম্পত্তি থেকে বার্ষিক আয়। লিফলেটে বলা হয় বর্তমানে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০২ কোটি ৪৯ লাখ ৩০০ টাকা রিজার্ভ রয়েছে, যা সরকারের কোষাগারে যাবে জাতীয়করণ করা হলে। তা ছাড়া এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছরে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা আয় করে নিজস্ব সম্পত্তি থেকে। এটাও পাবে সরকার।

অনেক শিক্ষক বলেন, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বেতন দেয় সরকার। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো আয় পায় না সরকার। সে আয় নানাভাবে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় পরিচালনা পরিষদের লোকজন। ছাত্র বেতনসহ প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে কোনো বরাদ্দ পায় না শিক্ষকেরা। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে কিছু বরাদ্দ দেয় শিক্ষকদের।
লিফলেটে বলা হয়েছে, বর্তমানে বেরসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এটি কার্যকর করা হলেও জাতীয়করণ করা হলে সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত টাকা লাগবে না।
তবে অনেক শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেবে বছরে ৫ হাজার টাকা আদায়ের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, গ্রামের একজন নি¤œ আয়ের অভিভাবকের জন্য এটা অতিরিক্ত হবে। রাজধানীসহ বড় শহরের অধিবাসীদের জন্য এটি রাখা যেতে পারে বা আরো বাড়ানোও যেতে পারে। আর গ্রামের জন্য আলাদা ফি নির্ধারণ করা যেতে পারে। মোট কথা একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে যদি বছরে আরো কম অর্থও আদায় করা হয় তবুও সরকারের অতিরিক্ত টাকা লাগার কথা নয়।

অনেক শিক্ষক বলেন, বর্তমানে অভিভাবকেরা শিক্ষার জন্য সন্তানের পেছনে টাকা খরচ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। বিশেষ করে শহরে বেসরকারি স্কুলে পড়–য়া একেকজন শিক্ষার্থীর পেছনে মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকাও খরচ করেন অনেকে। কিন্তু তারপরও তাদের অনেকে মানসম্মত শিক্ষা পান না সন্তানের জন্য।
আন্দোলনত শিক্ষকেরা বলেন, জাতীয়করণ করা হলে মেধাবীরা আসবে শিক্ষকতা পেশায়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও মান রক্ষার একটি বিষয় থাকবে। শিক্ষার মান নিয়ে সর্বমহলে যে ক্ষোভ অভিযোগ রয়েছে সেটি অনেকটা লাঘব হবে। দূর হবে শিক্ষায় বৈষম্য।
কাজী আশরাফুজ্জামান বলেন, আমাদের এ আন্দোলন শুধু আমাদের ব্যক্তি স্বার্থে নয়; বরং জাতীয় স্বার্থে। জাতীয়করণ করা হলে লাভবান হবে সাধারণ গরিব মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষ। বর্তমানে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে বাধ্য হচ্ছে এবং অভিভাবকদের শিক্ষার পেছনে বিপুল অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। অর্থের অভাবে অনেকে মাঝপথে পড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, আমরা চাই শিক্ষা ক্ষেত্রে সব বৈষম্য দূর হোক।

গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক শিক্ষক বলেন, আমরা তাদের কাছে জিম্মি। তারা প্রভুর মতো আমাদের ওপর চেপে আছে। সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া আমাদের বিল হয় না। তাদের সাথে কোনো শিক্ষকের সমস্যা দেখা দিলে তারা বিল আটকে দেয়। অথচ আমাদের বেতন দেয় সরকার। অপর দিকে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় তারা নানাভাবে এদিক সেদিক করে লুটপাট করে। শিক্ষা বিস্তার নয়, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে অনেকে আখের গোছানোয় ব্যস্ত। জাতীয়করণ হলে এ সমস্যারও অনেকটা সমাধান হবে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।
অনশনরত শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষার্থীদের বেতন দিয়ে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো যায় তার অনেক নজির রয়েছে। রাজধানীসহ বড় বড় শহরে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের কোনো শিক্ষক এমপিওভুক্ত নয়। কিন্তু তারপরও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করে অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ লাভও করছে। সে ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চহারে বেতন, ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, ডোনেশন আদায় করে। আবার অনেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন কিন্তু তারপরও সেসব প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামত ভর্তি ফি ও বেতন আদায় করে। আমরা এর কোনোটারই পক্ষে নই। আমরা চাই এসব নৈরাজ্য বন্ধ হোক। সরকার যৌক্তিক পর্যায়ে সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেতন আদায় করুক জাতীয়করণের পর। তা দিয়েই সরকার শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে পারবে।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত আর জি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম জাতীয়করণ আন্দোলন বিষয়ে বলেন, এর একদিকে রয়েছে আমাদের পেশাগত বিষয়। আরেক দিকে রয়েছে জাতীয় স্বার্থ। তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে আমি সব মিলিয়ে বেতন পাছি ১৩ হাজার ২৫০ টাকা। ২০১৫ সালের বেতন স্কেলের ফলে আমাদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বছরে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি বা টাইম স্কেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পদোন্নতির সুযোগও। এর ফলে আমি যত দিন শিক্ষকতা করব ততদিনই আমাকে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা বেতনে চাকরি করতে হবে এবং এ বেতনেই অবসরে যেতে হবে। কলেজের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এই একই অবস্থা। বর্তমানে কলেজে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক বেতন পান ২২ হাজার টাকা। সারা জীবন তাকে এ বেতনেই চাকরি করতে হবে। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে যারা জীবনে অন্য কোনো ক্ষেত্রে ভালো কিছু করতে পারবে না কেবল তারাই বাধ্য হয়ে হয়তো শিক্ষকতায় আসবে। এতে শিক্ষার মান ধ্বংস হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতি।
রেজাউল করিম বলেন, জাতীয়করণ দাবির আরেকটি দিক হলো জাতীয় স্বার্থ। আমরা চাই সারা দেশে সব শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পাক। শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের হয়রানি বন্ধ হোক। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা দূর হোক। সামগ্রিকভাবে জাতি এগিয়ে যাক। দেশ ও জাতি উন্নত শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যাক। বিপুল অর্থের বিনিময়ে শুধু ধনিক ও সামর্থ্যবানরাই শিক্ষায় সফলতা লাভ নয় বরং সাধারণ ও গরিব মানুষও সমানভাবে যেন শিক্ষার অধিকার পায়। এটা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের যোগদান অনশনে
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল সপ্তম দিনের মতো অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকেরা। এ দিন সারা দেশ থেকে বিপুলস্যংখক শিক্ষক শিক্ষিকা যোগ দিয়েছেন অনশনে। জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল সারা দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেয় আন্দোলনরত শিক্ষকদের লিয়াজোঁ ফোরাম। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা ক্লাস বর্জন করে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনে যোগ দেন।
গত ১০ জানুয়ারি শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর ১৫ তারিখ থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া না পেলেও শিক্ষকেরা জাতীয়করণের দাবিতে অনড় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। শীত উপেক্ষা করে অনেক শিক্ষক দিন রাত অবস্থান করে অনশন করে যাচ্ছেন।
৬টি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের জোট ‘বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরাম’-এর নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরণ অনশনের সপ্তম দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই বেসরকারি শিক্ষক সমাজ বাধ্য হয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মঘট পালন করা হয়েছে রোববার।
এ দিকে গতকাল আরো ১৩ জন শিক্ষক অসুস্থ হন। এদের মধ্যে সুনামগঞ্জের সালমা আক্তার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মামুনুর রশিদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আমরণ অনশন কর্মসূচির বিভিন্ন পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন, জোটের আহবায়ক মো: আব্দুল খালেক, উপদেষ্টা মো: আবুল বাসার হাওলাদার, মো: জসিম উদ্দীন, মো: রফিকুল ইসলাম, মো: নজরুল ইসলাম রনি, মো: রফিকুল ইসলাম মন্টু, যুগ্ম আহবায়ক সাইদুল হাসান সেলিম, জি এম শাওন, মতিউর রহমান দুলাল, মোস্তফা ভূঁইয়া, আবুল হোসেন মিলন, জোটের প্রেস সচিব মো: এনামুল ইসলাম মাসুদ, বিপ্লব কান্তি দাস, (সহসভাপতি, বাবেশিকফো), আমিনুল ইসলাম (সভাপতি, বাবেশিকফো), হারুন-অর-রশিদ (সহসভাপতি, বাবেশিকফো), মো: জালাল উদ্দিন (সহসভাপতি, বাবেশিকফো), দেলোয়ার হোসেন খোকন (যুগ্ম মহাসচিব, বাবেশিকফো), রেহান উদ্দিন (যুগ্ম মহাসচিব, বাবেশিকফো), রবিউল ইসলাম, সোহেলী পারভিন (যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক বাবেশিকফো), মো: নুরুল ইসলাম (আইসিটি সম্পাদক বাবেশিকফো) শওকত হোসেন (সভাপতি মৌলভীবাজার), শাহনাজ পারভীন (প্রেসিডিয়াম সদস্য, শিক্ষক ইউনিয়ন), আ: হালিম (ঢাকা উত্তর), সুচিত্রা চৌধুরী, রতন কুমার দেবনাথ, জ্যোতিষ মজুমদার, কালিপদ দাস, আফরোজা খাতুন মিনু (সিরাজগঞ্জ), মজিবুর রহমান (টাঙ্গাইল) প্রমুখ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/287048