২১ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৫:০৯

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায় নেপাল

১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানির আগ্রহ

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারতের মতো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায় দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপাল। দেশটি ভারতের সড়কপথ ও রেলপথ ব্যবহার করে একদিকে বাংলাদেশে সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী পণ্যের বাজার, অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পাঠাতে চায় ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দেশটির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম সফরে এসে তাদের এ আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

এ উপলক্ষে শুক্রবার রাতে নগরীর র্যা ডিসন ব্ল– চিটাগং বে ভিউ হোটেলে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়া নেপাল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করতেও আগ্রহী বলে জানায় প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশস্থ নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ ধন বাহাদুর অলিও এতে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিল নেপাল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় তা মুখ থুবড়ে পড়ে। স্থলবেষ্টিত নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি জল কিংবা স্থল যোগাযোগ নেই। ভারতের রেল ও সড়কপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে পণ্য পরিবহন সম্ভব এবং সীমিত পরিসরে তা হয়েও আসছে। বাংলাদেশ কৃষিজাত পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক উপাদান, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং খাদ্য ও পানীয়সহ প্রকৌশল, প্লাস্টিক ও উৎপাদনশীল পণ্য, ওভেন গার্মেন্টস, হোমটেক্স ও চামড়াজাত পণ্য নেপালে রফতানি করে থাকে। এর মধ্যে কৃষিজাত পণ্যই বেশি রফতানি হয়।

অন্যদিক নেপাল থেকে সবজি, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রুনিক্স পণ্য, কোমল পানীয়, তামাকজাত পণ্য দেশে আমদানি করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ নেপালে এক কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ পণ্য রফতানি করেছে। এর বিপরীতে আমদানি করেছে ৯৪ লাখ ৩০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ পণ্য।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে নেপালে পণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানির পরিমাণ ছিল এক কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অবকাঠামো ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্ত ও বন্দরকেন্দ্রিক নানা সমস্যার কারণে নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য কমেছে।
নেপাল ভৌগোলিকভাবে ভারত ও চীনের সীমান্তঘেরা। তাদের কোনো নৌবন্দর নেই। ফলে পণ্য পরিবহনে একমাত্র ভরসা স্থলবন্দর। এ ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভর থাকতে হয়। বর্তমানে নেপালের আমদানি-রফতানির একটি বড় অংশ চলছে ভারতের হলদিয়া বন্দর দিয়ে। তবে তারা ভারতের বন্দরের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করতে আগ্রহী।

মতবিনিময় সভায় নেপালের রাষ্ট্রদূত প্রফেসর চোপ লাল ভুষাল বলেন, বাংলাদেশে ট্রেড ও ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায় নেপাল। আগে এ সুবিধা ছিল। এখন আবার নতুন করে গড়ে তোলার ব্যাপারে আমাদের ব্যবসায়ীরা আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের সাহায্যে নেপাল বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করতে চায়। নেপাল প্রচুর আদা, দারুচিনি, মসুর ডাল ও সবজি উৎপাদন করে। বাংলাদেশ প্রচুর ওষুধ উৎপাদন করে। এখানকার সামুদ্রিক মাছের চাহিদা আছে নেপালে। স্বাভাবিকভাবেই দ্বিপক্ষীয় আমদানি-রফতানি বাণিজ্য লাভজনক হবে। ট্রানজিটের জন্য আমাদের ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার দিকে ঝুঁকছে, এতে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা থাকে। নেপাল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আমরা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও রফতানির অফার দিয়েছি।’

‘১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে ট্রানজিট সুবিধা পেয়েছিল নেপাল। এরপর বাংলাদেশ হয়ে নেপাল কয়েক বছর ট্রানজিট সুবিধার আওতায় পণ্য আমদানি করেছে। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় ’৮২ সাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল ও রেল যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় এখন আমরা আবারও চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা কাজে লাগাতে চাই, বলেন নেপালের রাষ্ট্রদূত।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, নেপাল যদি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে, তাতে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তবে এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার বিষয়টিও দেখতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমনিতেই বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি পণ্য ঠিকমতো হ্যান্ডলিং করতে পারছে না চট্টগ্রাম বন্দর। জেটি সংকট, লাইটার জাহাজ সংকট, ইয়ার্ড সংকট, ইকুইপমেন্ট সংকটসহ নানা সংকটে পর্যুদস্ত এই বন্দর। তার ওপর ভারত কিংবা নেপালকে ট্রানজিট দিলে বা এই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিলে তা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দেবে। তাই বাইরের কোনো দেশকে পুরোদমে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার আগে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মত দেন তারা।
ব্যবসায়ী সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, ‘এক এগ্রিমেন্টে নেপাল ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে ট্রানজিট সুবিধা পেয়েছিল। ১৯৭৯ সাল থেকে তারা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনজ্যুমার আইটেম ও সিমেন্ট আমদানি শুরু করে। তবে কোনো রফতানি করেনি। কিন্তু ’৮২ সালের দিকে ভারতের স্থলপথ ব্যবহার জটিলতায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তাদের পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে আইনগত কোনো বাধা ছিল না। ’৭৬ সালের এগ্রিমেন্টের আলোকে তারা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারে।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/9210/