২১ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৫:০৯

পাল্টে যাচ্ছে সীমানা

উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড অখণ্ড থাকছে * জেলার বিদ্যমান আসন সংখ্যা কমবেশি হবে না * খসড়া তালিকা তৈরির দায়িত্বে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান


জাতীয় সংসদের অর্ধশতাধিক আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদ্যমান আসনগুলোয় সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ও উপজেলা এলাকার সীমানা অক্ষুণ্ণ রাখা হবে।

জেলার বিদ্যমান আসন সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। জেলার আসনগুলোর শুধু আয়তন বাড়বে বা কমবে। শনিবার নির্বাচন কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে সীমানা পুনর্নির্ধারণের তালিকা তৈরির জন্য এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কোন কোন আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন তা চূড়ান্ত করবে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ এগিয়ে এনেছি। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়া ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের কারণে কিছু আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসছে। এর প্রকৃত সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিন বলেন, কুমিল্লার একটি আসনের সীমানা নিয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কমিশন ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান সীমানা পর্যলোচনা করে দেখা গেছে, উপজেলা অখণ্ড রাখা হলে দেশের ৬৩টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সংসদীয় আসনের অখণ্ডতা ধরে রাখতে গিয়ে কমবেশি ১০টি আসনের উপজেলার অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সেগুলোর মধ্যে যশোর-৩ ও ৪, নড়াইল-১ ও ২ এবং চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২-সহ কয়েকটি আসন রয়েছে। কমিটি এসব আসনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে পরিবর্তন না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। আর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড অখণ্ড রাখতে গিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কয়েকটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের কয়েকটি আসনের সীমানাও পরিবর্তন আসবে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, উপজেলা অখণ্ড রাখার কারণে অর্ধশত সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন আসতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁও-২ ও ৩, নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-৩ ও ৪, কুড়িগ্রাম-৩ ও ৪, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২, ঝিনাইদহ-২ ও ৪, মাগুরা-১ ও ২ এবং খুলনা-৩ ও ৫। একই অবস্থা সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, জামালপুর-৪ ও ৫, মানিকগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ৩ ও ৫, নরসিংদী-১ ও ২, ফরিদপুর-২ ও ৪, গোপালগঞ্জ-১ ও ২, মাদারীপুর-২ ও ৩, সিলেট-২ ও ৩, মৌলভীবাজার-২ ও ৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ও ৬, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, এবং চট্টগ্রাম-৭, ৮, ১৪ ও ১৫। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, লক্ষ্মীপুরের একটি আসনের সঙ্গে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ যুক্ত হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ যুক্ত হবে। এসব ইউনিয়ন পরিষদগুলো লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে বেরিয়ে যাবে। এ জেলার জন্য এটি বড় পরিবর্তন। এবার সাভার উপজেলার ইউনিয়নগুলো একই আসনে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলেন, কুমিল্লার দুটি থেকে চারটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসতে পারে। এরই মধ্যে কুমিল্লার-১০ আসনের বর্তমান সীমানা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে কমিশন। আপিল বিভাগের রায়ের পর কতটি আসনের সীমানা পরিবর্তন আসবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

তারা আরও বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলা খণ্ডিত অবস্থায় দুটি আসনের মধ্যে ছিল। নতুন খসড়ায় একটি আসনে আনা হবে। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলাও বর্তমানে খণ্ডিত রয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী খণ্ডিত অবস্থায় দুটি আসনে থাকলেও এবার একত্রিত করা হচ্ছে। জামালপুর ৪ আসন থেকে দুটি ইউনিয়ন বের করে জামালপুর পাঁচ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। ইউনিয়ন দুটি হচ্ছে তিতপল্লা ও মেস্টা।
জানা গেছে, এবার সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে একটি গাইডলাইন অনুসরণ করছে এ সংক্রান্ত কমিটি। গাইডলাইনে রয়েছে- উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনে বিভাজন করা যাবে না। যেসব আসনে নতুন প্রশাসনিক এলাকা (উপজেলা) সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে, তা নিজ নিজ আসনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০১৩ সালের সীমানা নির্ধারণের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেসব ছিটমহল বিনিময় হয়েছে, তা অন্তর্ভুক্ত করা। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনা করা।
সীমানা পুনর্নির্ধারণে ইসির রোডম্যাপ অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইসির এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপে সীমানা নির্ধারণে বিদ্যামান আইন পরিবর্তন করে নতুন আইনে সীমানা বিন্যাসের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ইসি সেই ঘোষণা থেকে সরে এসে বিদ্যমান ‘ডিলিমিটেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬’র আওতায় সীমানা বিন্যাস করতে যাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যমান আইনে প্রশাসনিক অখণ্ডতার সঙ্গে জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নেয়ার কথা বলা হলেও তা পুরোপুরি সফল হয়নি। এবারের খসড়ায় প্রশাসনিক বিন্যাসকেই গুরুত্ব দেয়ায় উপেক্ষিত রয়ে গেছে জনসংখ্যার বিষয়টি। বর্তমানে গাজীপুরে সর্বোচ্চ একটি আসনে সাড়ে সাত লাখ ভোটার রয়েছে আবার সবচেয়ে কম পৌনে দুই লাখ ভোটার রয়েছে ঝালকাঠির একটি আসনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল বিদ্যমান সীমানা বহাল রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে। ওই দলগুলো ছোটখাটো পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে। অপরদিকে বিএনপি ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফেরত যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কয়েকটি দল জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন খসড়া অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রস্তাব রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/9198