২১ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৫:০৬

জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট আজ

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে সারা দেশে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ ধর্মঘট পালন করা হবে। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচি থেকে গতকাল এ ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে ১০ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকপর্যায়ের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষকেরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৫ তারিখ থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন তারা।
ছয়টি শিক্ষক কর্মচারী সংগঠনের জোট ‘বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের নেতৃত্বে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষকেরা সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষার বৈষম্য, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বঞ্চনাসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা তুলে ধরে বলেন, একমাত্র জাতীয়করণই এর সমাধান। জাতীয়করণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য এবং শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যের অবসান চান তারা। জাতীয়করণই পারে এ সমস্যার সমাধান করতে।

অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষক সাইদুল হাসান সেলিম, আবুল বাশার হাওলাদার, এস এম মোস্তফা কামাল, জালালউদ্দিন, সোহেলী পারভীন, মনিরউদ্দিন, রেজাউল করিম, মো: মুসা, আতিকুল ইসলাম খান, দেবাশীষ পাল, রফিকুল ইসলাম ও এসএএম রাজটিকা বলেন, বর্তমানে সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ বেতন দেয়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো আয় সরকারের কোষাগারে জমা হয় না। শহরকেন্দ্রিক অনেক বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি, সেশনচার্জ ও বেতন বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে কিন্তু সরকার তা থেকে কিছুই পায় না। সাধারণ শিক্ষকরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তেমন কিছু পায় না। সরকার জাতীয়করণের ক্ষেত্রে মনে করে থাকে তাদের ব্যয় বিপুল পরিমাণ বাড়বে কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের বেতন, ভর্তি ফিসহ আয়ের বিষয়টি তারা বিবেচনায় নেয় না। সরকারি যদি সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তাহলে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে অতিরিক্ত কোনো টাকা খরচ হবে না বরং সরকার লাভবান হবে। সারা দেশের এসব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ডে বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্ছিত রয়েছে তাও সরকারের হস্তগত হবে।
শিক্ষকেরা বলেন, জাতীয়করণ হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান পাহাড়সম বৈষম্য দূর হবে। সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে জাতি বিশেষ করে সাধারণ মানুষ। কারণ এক শ্রেণীর মানুষ বর্তমানে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসায় করছে। বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উচ্চ হারে ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও বেতন আদায় করে, যা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসায় বন্ধ করা সম্ভব। এর ফলে হতাশা ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত হতে পারবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা। তা ছাড়া বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ও বোর্ডের অধীনতা থেকেও প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্ত হতে পারবে।

শিক্ষকেরা হতাশা প্রকাশ বলেন, সরকারি প্রাইমরি স্কুলের একজন অষ্টম শ্রেণী পাস দফতরিও শুরুতে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন পান আর অনার্সসহ এমএ পাস একজন হাইস্কুলের এমপিওভুক্ত শিক্ষক চাকরির শুরুতে বেতন পান মাত্র ১৩ হাজার ২৫০ টাকা। অপর দিকে ২০১৫ সালের নতুন পে-স্কেলের মাধ্যমে প্রমোশন এবং বেতন বৃদ্ধি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সারা জীবন ওই ১৩ হাজার ২৫০ টাকা বেতন নিয়েই চাকরি করতে হবে এবং এভাবেই অবসরে যেতে হবে। এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এমমপিওভুক্ত একজন কলেজশিক্ষক শুরুতে বেতন পান ২২ হাজার টাকা এবং সারা জীবন তাকে এই একই বেতনেই চাকরি করতে হবে।
শিক্ষকেরা বলেন, এ কারণে মেধাবীরা আসতে চান না শিক্ষকতায়। জাতীয়করণ হলে মেধাবীরা আসবেন শিক্ষকতায়।
বর্তমানে সারা দেশে ৩৮ হাজার ৪৭৮টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকপর্যায়ে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/286774