২১ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৫:০৫

বেপরোয়া ডাকাত বাহিনী

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ডাকাত বাহিনী। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। ডাকাতদের নির্মমতার শিকার হচ্ছেন অনেক মানুষ। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। তাই ডাকাতি প্রতিরোধে গ্রামে গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ডাকাত প্রতিরোধ কমিটি’। কমিটির সদস্যরা রাত জেগে পালা করে পাহারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় এ ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও ডাকাত গ্রেফতার এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের ঘটনা নেই বললেই চলে। এ নিয়ে নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগ অসংখ্য। অনেক এলাকায় পাহারা দিয়েও মানুষ দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। কোথাও কোথাও ডাকাতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের সম্পৃক্ততা ও রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তার খবরও পাওয়া গেছে। সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত ও গ্রামবাসী উভয় পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে ভয়ানক কিছু তথ্য। দিনদুপুরেও মানুষের বাড়িতে হানা দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার ভিটাবাড়িয়া গ্রামের এক বাড়িতে বোরকা পরা এক ব্যক্তি প্রবেশ করে। এ সময় গৃহকর্ত্রী ঘরের বাইরে ছিলেন। গৃহকর্ত্রী ঘরে প্রবেশের পরই তাকে ধাক্কা মেরে চেয়ারের ওপর ফেলে দিয়ে ওই দুর্বৃত্ত চলে যায়। চেয়ারের ওপর পড়ে গৃহকর্ত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। কিছু সময় পড়ে হুঁশ ফিরে এলে তিনি প্রতিবেশীদের এ কথা জানান। কিন্তু ততক্ষণে দুর্বৃত্ত লাপাত্তা।
গত ১৪ জানুয়ারি রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ব্রাহ্মহ্মন্দীর বড় ফাউসা গ্রামের খলিলুর রহমান ভূঁইয়ার বাড়িতে একদল ডাকাত প্রবেশ করে। এ সময় বাড়ির লোকজন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি ককটেল নিক্ষেপ শুরু করে। ডাকাতদের প্রতিহত করতে লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা টেঁটা নিক্ষেপ করে। তাতে দুইজন আহত হয়। ডাকাতরা ওই বাড়ি থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন এক ডাকাতকে ধরে ফেলে। গণপিটুনিতে সে নিহত হয়।
সাভারের আমিনবাজার সালেহপুর এলাকায় গত ১২ জানুয়ারি একটি কারখানায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই এলাকায় প্রায়ই দুর্বৃত্তরা হানা দেয়। দুর্বৃত্তরা সেখান থেকে ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি ঝালকাঠির রাজাপুর থানার গোরস্থান রোডে এক প্রবাসীর বাড়িতে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা ওই বাড়ি থেকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। অথচ ওই বাড়িটি থানা থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরত্বে। স্থানীয় কয়েকজন বয়স্ক লোক জানান, তাদের বয়সে ওই এলাকায় ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার বেশ
কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন, তাদের এলাকায় কোনো দিনও রাত জেগে পাহারা দিতে হয়নি। এখন রাত জেগে পালাক্রমে পাহারা দিতে হয়। ওই রাতেই আশপাশের আরো ১০টি গ্রামে ডাকাত প্রবেশ করে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতনতার কারণে ডাকাতরা কোনো বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলাতেও ওই রাতে বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতরা হানা দেয়।

এভাবেই গ্রামগঞ্জে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডাকাতির পর লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার হয়েছে এবং ডাকাতরা গ্রেফতার হয়েছে এমন নজির খুবই কম। তবে কোনো কোনো এলাকায় ডাকাতির পর সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সদরের তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৩৬টি। দস্যুতার ঘটনা ৬৫৭। আর চুরির ঘটনা রেকর্ডভুক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৮৩৩ টি। তবে অভিযোগ রয়েছে কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তা ডাকাতি হিসেবে রেকর্ড করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীকে চুরির মামলা দায়েরে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠপর্যায়ের সদস্যদের দায়িত্বে শৈথিল্যের কারণে দুর্বৃত্তরা এভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি, দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটিয়েও দুর্বৃত্তরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/286776