২০ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ১০:০২

পিয়াজের কেজি এখনো ৬৫-৭০ টাকা

ঢাকার বাজারে নতুন পিয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এতে কেজিপ্রতি প্রায় ৫-১০ টাকা করে কমেছে। তবে দাম কমলেও এখনো পিয়াজের কেজি ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দর এখনো স্বাভাবিক হয়নি বলে মনে করেন ক্রেতা সাধারণ। কারণ গত বছরের এই সময়ে পিয়াজের কেজি ছিল ২০-২৫ টাকা।

সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, বছরের ব্যবধানে এখনো পণ্যটির কেজি ১৯৩.৪৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি
হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দেশি পিয়াজের কেজি ৬০ টাকা। আর খুচরা বাজারে এই পিয়াজের কেজি ৭০ টাকা। পাইকারি বাজারে ভারতীয় পিয়াজও একই দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারে দেশি ও ভারতীয় পিয়াজের দাম প্রায় সমান। এদিকে পিয়াজের মতো সবজি, কাঁচামরিচ ও চালের বাজারও বেশ খানিকটা কমে স্থির অবস্থায় রয়েছে।
গতকাল কাওরানবাজার, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত নভেম্বরে টানা বৃষ্টিতে পিয়াজের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে পিয়াজের আবাদ নষ্ট হয়। এতে উৎপাদন কমে যায়। ফলে বাংলাদেশের বাজারে দেশি পিয়াজ কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা এবং ভারতীয় পিয়াজ ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সেই হিসেবে বর্তমানে পণ্যটির দর অনেক কম বলে জানান তারা। গত সপ্তাহে দেশি নতুন পিয়াজ কেজিপ্রতি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। এখন তা ৬০-৭০ টাকা। তাদের মতে, প্রতিবছর জানুয়ারিতে বাজারে নতুন পিয়াজের সরবরাহ বাড়ে। পাশাপাশি ভারত থেকেও নতুন মৌসুমের পিয়াজ আমদানি হয়। এতে দাম বেশ কমে যায়। কিন্তু এবার খুব বেশি কমেনি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছরের জানুয়ারি মাসের এই সময়ে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। শতাংশের হিসাবে এখনো ১৯৩.৪৮ ভাগ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত সোমবার জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সরকারের উদ্যোগ ও দেশে নতুন পিয়াজের উৎপাদন শুরু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চাল ও পিয়াজের মূল্য কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতি কেজি পিয়াজের দাম এখন ৫৫-৬০ টাকায় নেমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে টিসিবি হিসাবে, গত এক মাসে দেশি পিয়াজের দাম কমেছে মাত্র ৩৮.১২ শতাংশ।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পিয়াজ বিক্রেতা নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, দাম না কমার কারণ ভারতে দাম বেশি এবং দেশি পিয়াজের সরবরাহ প্রযাপ্ত নয়। তবে ধীরে ধীরে দাম কমে আসবে বলে জানান তিনি।
কাওরানবাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী আতিক বলেন, বাজারে দেশি পিয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। দামও কমছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ৫-১০ টাকা। না কমার কোনো কারণ নেই বলে তিনি মনে করেন।
টিসিবির বাজার তালিকা অনুযায়ী, গতকাল প্রতিকেজি দেশি ও আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭৫ টাকায়।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের দোকানি শরীফ আলী অভিযোগ করে বলেন, রাজধানীর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বেশকিছু সিডিকেন্ট। তারাই মূলত বাজারের দাম নির্ধারণ করে। মূলত এদের জন্যই পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারের পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
রিকশাচালক আল-আমিন বলেন, আমরাতো দিন আনি দিন খাই। কয় টাকা আর ইনকাম করি। যা আয় করি তা দিয়ে যদি চাল-পিয়াজ কিনতেই খরচ হয়ে যায় তাহলে অন্য কিছু আর কি করে কিনবো।
সিএনজি চালক মজিদ মিয়া বলেন, এখন ১ কেজি মোটা চাল কিনতে গেলেও ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। আর ৩০ টাকার পিয়াজ তো কেনা লাগছে ডাবল দামে।
পিয়াজ ও চালের বাজার নিয়ে বেসরকারি ব্যংক কর্মচারী তানভির হোসেন বলেন, পিয়াজ ও চালের বাজার এখনো সম্পূর্ণভাবে সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে আসে নাই। কেজি প্রতি ৬০-৭০ টাকা বেড়ে, কমেছে মাত্র কমেছে ৩০-৪০ টাকা। তিনি বলেন, বছরের এই সময়ে নতুন পিয়াজ ওঠার পর মূল্য একেবাড়েই কমে আসে। কিন্তু পিয়াজের বাজার এখনো চড়া।

বাস ড্রাইভার রফিক বলেন, পিয়াজ আর চাল এমন একটা জিনিস, যা মানুষের প্রতিদিনেই লাগে। আর এই জন্যই এইসব মাল স্টক করে বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয় বিক্রেতারা।
তিতুমীর কলেজ ছাত্র সৌরভ বলেন, আমরা ব্যাচেলর স্টুডেন্ট। ঢাকা শহরে অনেক কষ্ট করে করে চলতে হয় আমাদের। পড়ালেখা করার জন্য বাড়ি থেকে গুনে গুনে টাকা পাঠায় বাবা-মা। এর মধ্যে বেশি টাকা খরচ হলেই মাসের শেষের দিকে বাজেটে টান পড়ে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে পিয়াজ বিক্রেতা আনিস বলেন, বাজারে পিয়াজের চাহিদা থাকলেও এখনো পুরোপুরি সরবরাহ নেই। তবে সপ্তাহখানিকের ব্যবধানে অনেক কমে এসেছে পিয়াজের দাম। একই বাজারের আরেক বিক্রেতা বলেন, বাইরের পিয়াজ আসতে যেই সমস্যা ছিল, এখন আর সেই সমস্যা নাই। বাইরের প্রচুর পিয়াজ ঢুকছে দেশের। এ ছাড়া দেশীয় পিয়াজেরও উৎপাদন ভালো। ফলে পিয়াজের দাম আগের তুলনায় বেশ কমে এসেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখনো প্রতি কেজি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা দরে। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা দরে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল দোকানি আকাশ জানান, আগের তুলনায় প্রতিটি চালেই কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা কমেছে। তিনি বলেন, আমরা প্রতি কেজি মিনিকেট (সুপার) চাল ক্রয় করি ৫৮ টাকা দরে, বিক্রি করি কেজি প্রতি ৬০-৬২ দামে। লতা চাল কেনা ৪৫ টাকায় বিক্রি করি ৪৬-৪৮ টাকায়। আঠাশ (নতুন) কেনা ৪৪ টাকায় বিক্রি করি ৪৬-৪৮টাকায়। স্বর্ণা কেনা ৩৭ টাকা, বিক্রি করি ৪০-৪২ টাকায়। নাজিরশাইল কেনা ৬০ টাকায়, বিক্রি করি ৬৫-৭০ টাকায়।
টিসিবির দর অনুযায়ী, বাজারে এখনো গত বছরের চেয়ে সরু চালের কেজি ২৬ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২৩ শতাংশ বেশি দরে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=101284