২০ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৩

লাইটারেজ জাহাজ সঙ্কটে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে বেহাল অবস্থা

লাইটারেজ জাহাজ সঙ্কটে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাসে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কয়েক মাস ধরে এই সঙ্কট প্রকট রূপ নিলেও এখন পর্যন্ত সমাধান হয়নি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যে হারে আমদানি বেড়েছে, সে তুলনায় বাড়েনি লাইটার জাহাজ। ফলে পণ্য খালাস করতে না পেরে দীর্ঘ সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে অলস সময় কাটাতে হয় মাদার ভেসেলগুলোকে। এতে দৈনিক জাহাজপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার মাসুল গুনতে হয় আমদানিকারকদের, যা সরাসরি ভোগ্যপণ্যের সাথে যোগ হয়ে দেশে পণ্যমূল্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বন্দরসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় অর্ধেকই চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে কর্ণফুলীর ১৬টি ঘাট ও নৌপথে দেশের নানা গন্তব্যে পৌঁছে। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে লাইটারেজ জাহাজের সঙ্কট তীব্র রূপ নিয়েছে। এ জন্য অবশ্য আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি লাইটার জাহাজের সংখ্যা না বাড়া ছাড়াও কিছু কিছু আমদানিকারক লাইটারেজ জাহাজকে ভাসমান গুদাম বানিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে তিন শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ মংলা চলে যাওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে লাইটার জাহাজের সঙ্কট প্রকট হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বছরখানেক আগেও ৫০-৬০ হাজার টনের একটি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করতে ২০-২৫ দিন সময় লাগত। কিন্তু বর্তমানে এই পরিমাণ পণ্যবাহী মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসে দুই মাসেরও বেশি সময় লাগছে। অতিরিক্ত সময় অবস্থানের জন্য জাহাজভেদে দৈনিক ১০-১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। সঙ্গত কারণেই আমদানিকারকরা বাড়তি ব্যয় পণ্য বিক্রিকালে ভোক্তাদের কাছ থেকেই আদায় করছেন। এতে দেশে হু হু করে পণ্যমূল্য বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে আসা মাদার ভেসেলগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হওয়ায় দেশের প্রধান এই বন্দরে মাদার ভেসেল পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন বিদেশী জাহাজ মালিকরা, নয়তো অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৫ সালে যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌনে তিন কোটি টন পণ্য খালাস হয়েছে, সেখানে গত বছর তা তিন কোটি টন ছাড়িয়েছে। কিন্তু বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের পরিমাণ অনুযায়ী বাড়েনি লাইটারেজ জাহাজ।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, লাইটার জাহাজের সঙ্কটের কারণে ব্রেক বাল্ক জাহাজের অপেক্ষার সময় এতে বেশি বেড়ে গেছে যে, চট্টগ্রাম বন্দরমুখী কনটেইনারবিহীন পণ্যবাহী জাহাজ ভাড়া পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া জাহাজের চার্টার কস্ট বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একেকটি জাহাজ অতিরিক্ত সময় অপেক্ষার কারণে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে পণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে এবং চূড়ান্তভাবে তা ভোক্তাপর্যায়ে প্রভাব ফেলছে। তিনি সঙ্কট উত্তরণে নতুন লাইটার জাহাজ আমদানি সহজতর করতে সহজ শুল্ক সুবিধা দেয়া এবং বন্দরের জেটি সুবিধা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
আমদানিকৃত খাদ্যশস্য, চিনি, সার, সিমেন্ট কিংকার, পাথর, কয়লাসহ প্রায় চার কোটি টন পণ্য লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১২০০ লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করে। এর বাইরে বিভিন্ন শিল্প গ্র“পের নিজস্ব লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/286523