১৯ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫১

এখনও আসছে রোহিঙ্গারা

টেকনাফে পৌঁছেছে আরও ৩০০

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে ঢাকার চুক্তি হলেও নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর আসা থামছে না। গত কয়েক দিনে রোহিঙ্গাদের আগমন ফের বেড়েছে। গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত নাফ নদ ও সমুদ্র উপকূল পেরিয়ে টেকনাফ উপজেলার হাঁরিয়াখালী ও বাহারছড়া পয়েন্ট দিয়ে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তাদের মধ্যে দুই শতাধিকই নারী ও শিশু। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে হাঁরিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ নিয়ে টেকনাফ পৌঁছান সাব্বির আহমেদ (৫৫)। এ সময় তিনি জানান, নাফ নদ পেরিয়ে ট্রলারে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের হাঁরিয়াখালী পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন তিনি। তার বাড়ি মিয়ানমারের বুচিডং (বুথেডং) টাউনশিপের টাইম্ম্যাখালী গ্রামে। সাব্বির জানান, ১০ দিন হেঁটে পাহাড় ডিঙিয়ে মিয়ানমারের মংডুর সীমান্তে চরে ডংখালী নামক এলাকায় পৌঁছান। আসার পথে কোনো গ্রামে লোকজনের দেখা মেলেনি। সবগুলো গ্রাম ছিল নির্জন, মনে হয়েছে যেন মরুভূমি। শুধু ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। তিনি জানান, ডংখালী চরে এসে আরও হাজারখানেক রোহিঙ্গার দেখা মেলে। তারাও বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিল। তাদের মধ্যে ৫০ জনের মতো লোক ট্রলারে এপারে এসেছে। মিয়ানমারে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে রেখেছে সেনাবাহিনী। তাদের কোথাও বের হতে দিচ্ছে না। অবরুদ্ধ শিশুদের অবস্থা গুরুতর, তারা শীতে কাঁপছিল।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টেকনাফের সাবরাং হাঁরিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও টেকনাফ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাঝখানে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কমে গেলেও আবারও গত বুধবার থেকে রোহিঙ্গা প্রবেশ বেড়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ২৩ জানুয়ারি থেকে রাখাইনে ফেরার কথা রয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বহির্বিশ্বকে পাশে থাকার আহ্বান : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে

বাংলাদেশের চুক্তি হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে খুশির জোয়ার। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত উখিয়া বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বহির্বিশ্বকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া বঙ্গমাতা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভারে নুয়ে পড়া জনপদ উখিয়া-টেকনাফের মানুষ সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত। তবু প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতার আহ্বানে এখানকার জনগণ এখনও রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধু তার ইউনিয়ন পালংখালীতে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখনও ক্যাম্পে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের কারণে এখানকার রাজনীতি, সামাজিক প্রেক্ষাপট, গ্রামীণ আদালত, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের ইউনিয়নভিত্তিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহামুদুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক আদিল উদ্দিন চৌধুরী, আবুল মনছুর চৌধুরী, কমিটির সহ-সভাপতি রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম, জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী ও রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী। বৈঠকে ২৩ জানুয়ারি উখিয়ায় একটি বিশাল জনসভার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

http://samakal.com/todays-print-edition/tp-khobor/article/18014000