১৯ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৫

জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকার ভোট অনিশ্চিত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে আপিল করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এমনকি তফসিল ঘোষণার আগেই বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের সুপারিশ করা হলেও আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি) বা স্থানীয় সরকার বিভাগ।

তখন আরও বলা হয়েছিল, এ জটিলতা রেখে তফসিল ঘোষণা করা হলে রিট হতে পারে, স্থগিত হয়ে যেতে পারে নির্বাচনও। শুধু তাই নয়, কমিশনের এক সভার কার্যপত্রে আইনগত জটিলতার বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। উল্টো ইসির পক্ষ থেকে ‘রহস্যজনকভাবে’ বারবার বলা হচ্ছে কোনো জটিলতা তারা দেখছেন না। এমন পরিস্থিতিতে এ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ইসি ও সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ- জাতীয় সংসদ নিবাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীনরা পরাজয়ের কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। কোনো কারণে এ নির্বাচনের ফল নেতিবাচক হলে, তার প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনেও। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আন্তরিক নন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তাদের বক্তব্য এটি আদালতের বিষয়। এখানে সরকারের কোনো যোগসাজশ নেই।
এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ৬টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের ভোট গ্রহণ চার মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এর আগের দিন বুধবার ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন, ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ৬টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রুটি রেখে তফসিল ঘোষণা করায় উচ্চ আদালতের রিট আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এবং একই কারণে নির্বাচনও স্থগিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি এম হাফিজ উদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘যেসব আইনগত জটিলতার কারণে আদালত নির্বাচন স্থগিত করেছেন, সরকার চাইলে সেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আগেই দূর করতে পারত। কিন্তু সরকার কেন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিল না, সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। নতুন ওয়ার্ড সংক্রান্ত, সীমানা ও ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে সরকার সমাধান করতে পারত। কিন্তু সরকার কেন তা করল না। আবার নির্বাচন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করবে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে যে, নির্বাচনের বিষয়ে সরকার আন্তরিক কিনা। এ সমস্ত সন্দেহ রয়েই গেছে। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি সরকারের আইন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ বুঝবে না কেন? যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে। এসবের কোনো জবাব নেই। এসব বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগও দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর চলমান কাজের গতি হারিয়েছে। আমার বাসার পাশে যেসব কাজ হচ্ছিল তা স্থগিত হয়েছে। একজন ভোটার হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত।
জটিলতা রেখে তফসিল ঘোষণা করায় অসন্তোষ প্রকাশ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের অনেক জটিলতা রেখেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারত। আর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মেয়াদ নির্ধারণ করতে পারত। কিন্তু কোনো সংস্থাই সে কাজগুলো করেনি। তবে আমি আশাবাদী। অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন নিয়ে কী হয়।
জটিলতা রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রমাণ করেছে সরকার জাতীয় সংসদের আগে এ নির্বাচন চায় না, এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার তিনি টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশেই স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনে ভরাডুবি জেনেই আইনি জটিলতা দূর না করে সরকারের পরামর্শে ইসি তফসিল ঘোষণা করেছে। আদালতের স্থগিতাদেশের মাধ্যমে সরকারের পরাজয়ের প্রতিফলন হয়েছে। পরাজয়ের ভয়ে ক্ষমতাসীন দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা সিটি নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে বলে মনে করি না।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে পড়েছিল। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থী হেরে গেলে সমস্যা আর কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হলে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না তা প্রমাণিত হতো। তাই সরকারি দলের জন্য সুবিধা আইনগত জটিলতা জিইয়ে রেখে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া, যা রিট আবেদনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সুতরাং আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার নির্বাচন সরকার করবে না বলেই আশঙ্কা করছি।

তিনি বলেন, আমরা দাবি জানাই দ্রুত এ নির্বাচন হোক। ইসি এ নির্বাচনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করুক।
বিরোধী মতের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যারা বিরোধী দলে থাকেন তারা অনেক কথাই বলেন। আদালতের রায় তাদের পক্ষে গেলে বলেন রায় সঠিক হয়েছে, আর বিপক্ষে গেলে বলেন এতে সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করার জন্য মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থী পর্যন্ত ঠিক করেছিল। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু আদালতের রায়ে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় আমরা হতাশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন স্থগিত হলেও তা প্রত্যাহারে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ইসির দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো নির্দেশনা নেই। আর এ মুহূর্তে আমাদেরও এ ব্যাপারে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই।
ইসি সূত্র জানায়, রায়ের পরই তারা আইনজীবীর সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করেছেন। এখন রায়ের কপির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন। রায়ের কপি পেলে এ বিষয়ে করণীয় কী হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
ঢাকা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার কমিশন সভা শেষে ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দুই সিটির নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পর বুঝতে পারব কেন এ নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুর মালেক বৃহস্পতিবার নিজ দফতরে যুগান্তরকে বলেন, ‘বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যথাযথভাবেই ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়েছে। এখানে ৭৫ শতাংশ বা ৬০/৬১ শতাংশের কোনো বিষয় নেই। শতভাগ প্রতিনিধির সমন্বয়ে দুই সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়েছে। এর সঙ্গে নতুন কোনো এলাকা অন্তর্ভুক্ত হলেও তা বিদ্যমান সিটির আইন অনুযায়ী চলবে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। নতুন ওয়ার্ড যুক্ত করার পর নির্বাচন কমিশনকে আমরা এসব ওয়ার্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। এখন এ নিয়ে মামলা হয়েছে। আদালত যেভাবে আদেশ দেন, সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বলেন, ‘যেসব ইউনিয়ন আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সরকার সে বিষয়ে গেজেট জারি করেছে, এরপর ওইসব ইউনিয়নের আর আইনগত বৈধতা নেই। এরপর কেন প্রশ্ন উঠছে পরিষদের মেয়াদ নিয়ে। গেজেট জারির পর ইউনিয়ন পরিষদই বিলুপ্ত হয়েছে, তাহলে মেয়াদ থাকার প্রশ্ন আসে কেন। নতুন ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচনের মাধ্যমে যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন তাদের মেয়াদ কতদিন হবে- জানতে চাইলে আবদুল মালেক বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ যতদিন তাদের মেয়াদও ততদিন হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘এটি মূলত ইসির বিষয়। এখনও তারা আপিলের বিষয়ে কিছু বলেনি।’ আর নির্বাচন কমিশনের প্যানেল আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
এদিকে দক্ষিণের নির্বাচন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম যুগান্তরকে বলেন, ‘আদেশের বিষয়ে চেম্বারে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
আদালতের রুলের জবাব দেয়ার মধ্য দিয়ে ইসি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের এ নির্বাচন আয়োজনে আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আদালত। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হাইকোর্টের রুলের কী ধরনের জবাব দেয়। ওই জবাবেই বোঝা যাবে তাদের আন্তরিকতা কতটুকু।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন এ মুহূর্তে ঝুলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা জানান, সারা বছর ধরেই কোনো না কোনো নির্বাচনে ব্যস্ত থাকতে হবে তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হবে। সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সারা দেশে একযোগে নির্বাচন আয়োজনের বিশাল কর্মযজ্ঞ ইসিকে শেষ করতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং আরপিওসহ অন্যান্য আইন ও বিধিমালা সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও কমিশনের কর্মকর্তাদের করতে হচ্ছে।
তারা আরও জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণের আয়োজন ইসিকেই করতে হবে। বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময়সীমা মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে এসব নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১২টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের নির্বাচন আয়োজন নতুন ঝামেলার সৃষ্টি করবে। নাম গোপন রাখার শর্তে একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনেকেই জটিলতা দূর করে নির্বাচন আয়োজনের ‘মেসেজ’ নানাভাবে কমিশনকে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি কমিশনের সভার কার্যপত্রেও এসব তোলা হয়। কিন্তু তাদের ওই মতামত আমলে নেয়া হয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮ ওয়ার্ড নির্বাচন চার মাসের জন্য স্থগিত : দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ড এবং সংরক্ষিত ৬ ওয়ার্ডের নির্বাচনও চার মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি এম ফারুকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী পার্থ সারথি মণ্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জায়েদি হাসান খান।
ভোটার তালিকা প্রস্তুত না হওয়া, কাউন্সিলরদের মেয়াদকাল উল্লেখ না থাকা, ইউপি চেয়ারম্যানের অব্যাহতি সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ না হওয়া- এমন আইনি যুক্তি তুলে ধরে ডেমরার ভোটার মোজাম্মেল মিয়া বুধবার বিকালে রিটটি করেন, যা বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আইনজীবী পার্থ সারথি সাংবাদিকদের বলেন, আদালত দক্ষিণের ১৮টি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ৬টি কাউন্সিলর পদের নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করে রুল জারি করেছেন। কারণ তফসিল অনুযায়ী কাউন্সিলর প্রার্থীদের আজ (বৃহস্পতিবার) মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে যারা প্রার্থী হবেন তারা কিন্তু জানেন না তারা ভোটার কি না। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর ২৬ বিধি অনুযায়ী মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একই সঙ্গে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে।
প্রসঙ্গত ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং একই সঙ্গে ঢাকার দুই সিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এসব পদে ভোট হওয়ার কথা ছিল।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/8459