১৯ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৩

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত নাগরিকসমাজ আক্রমণের শিকার

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্র, উগ্রপন্থীসহ অন্যান্য বিরাষ্ট্রীয় দ্বিমুখী চাপের মুখে নাগরিকসমাজ। তাদের হত্যা ও হামলার হুমকি দিচ্ছে উগ্রপন্থী গ্রুপগুলো। নিরাপত্তা বাহিনী ক্রমবর্ধমান হারে হয়রানি ও তাদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। করছে আইনের অপব্যবহার। কর্তৃপ ভিন্ন মতাবলম্বী অথবা সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে অতিমাত্রায় আইন প্রয়োগ করছে। সমালোচকদের শাস্তি দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) ব্যবহার করছে। গতকাল সারা বিশ্বের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শুধু ুণœই হচ্ছে না, সিভিল সোসাইটি পর্যন্ত হামলার শিকার হচ্ছে।
৫৭ ধারার স্থানে ডিজিটাল সিকিউরিটিজ অ্যাক্টের খসড়া করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনে আরো কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা, মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়াকে এতে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের ওপর ভিত্তি করে এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এতে বাংলাদেশ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছেÑ রোহিঙ্গা সঙ্কট, নিরাপত্তা রাকারীদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ, তাদের দায়মুক্তি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের অধিকার, শ্রম অধিকার, নারী অধিকার, বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার বিষয়। রিপোর্টে বলা হয়, নাগরিকসমাজের প্রতি রয়েছে উগ্রপন্থীদের হত্যা ও হামলার হুমকি। নিরাপত্তা রাকারীরা ক্রমবর্ধমান হারে তাদের হয়রানি করছে এবং নজরদারি চালাচ্ছে।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে ফেব্রুয়ারিতে ও মার্চে এর নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস এবং হিউম্যান রাইটস কমিশন। এসব েেত্র অনুসন্ধান ও জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে এ বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার। একই সাথে বাংলাদেশ সফরের জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল র্যা পোর্টিউর এবং অফিস অব দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস। তাতেও কোনো সাড়া মেলেনি। এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা রাকারী বাহিনীগুলোর দায়মুক্তির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তারা ভয়াবহভাবে আইন লঙ্ঘন করছে। এর মধ্যে রয়েছে খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এই ধারা থেকে তারা ২০১৭ সালেও বেরিয়ে আসেনি। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সন্দেহজনক উগ্রপন্থীদের গ্রেফতার অব্যাহত রাখে বিগত বছরেও। তাদের আদালতে হাজির করার আগে দীর্ঘ সময় গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়। নিরাপত্তা রাকারীদের মতে, তাদের অনেককে গান-ফাইটে হত্যা করা হয়েছে। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। প্রতিবেদনে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী লাখ লাখ শ্রমিকের অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব শ্রমিক প্রতি বছর দেশে শত শত কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ২০১৭ সালে এক লাখ নারী পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। তাদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়েছেন গৃহকর্মী হিসেবে। অনেক বাংলাদেশী অভিবাসী অভিযোগ করেছেন তারা খাদ্য স্বল্পতায় ভুগছেন, মানসিক কষ্টে আছেন, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। কোনো কোনো েেত্র সেটা জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করানো অথবা পাচারের সমতুল্য।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/286308