১৯ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪০

৬ মাসে রেকর্ড ২৩ লাখ টন চাল আমদানি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) চাল আমদানি হয়েছে রেকর্ড প্রায় ২৩ লাখ টন। যেখানে আগের তিন অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৩ লাখ টন। এ ছাড়া পাইপলাইনে আরো প্রায় ১০ লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়ায় রাখছে। ব্যাপক ভিত্তিতে চাল আমদানি হলেও দাম কমছে না, আর এ কারণে এর সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা। বাড়তি মূল্যেই মোটা চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সরু ও মোট চাল মিলে গত তিন অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ টন। এর মধ্যে গত অর্থবছরে ছিল ৫৫ হাজার ৫৮৫ টন। কিন্তু কয়েক দফা বন্যার কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই চাল আমদানি হয়েছে তিন বছরের সমান অর্থাৎ ২২ লাখ ৬৪ হাজার ২২৫ টন। চাল আমদানি পরিমাণের দিক থেকে সমান হলেও টাকার অঙ্কে অনেক বেশি।

যেমন- তিন অর্থবছরে চাল আমদানির জন্য ব্যয় হয়েছিল ৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাপক ভিত্তিতে চাল আমদানি হলেও স্থানীয় বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রতি কেজি চাল আমদানির জন্য ব্যয় হয়েছে ৩৩ টাকা, অথচ বাজারে মোটা চাল ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নানা কারণে দেশীয় বাজারে চালের দাম চড়া রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কম। এ কারণে অধিক মুনাফার জন্য ব্যবসায়ীরা এখন বেশি পরিমাণ চাল আমদানি করছেন।
তবে, প্রকৃত অবস্থা হলো চালের দাম ছয় মাস আগেও যা ছিল, এখন তার চেয়ে কেজিপ্রতি তিন চার টাকা বেড়ে গেছে। আগে মোটা চাল ৩৪ টাকায় পাওয়া যেতো। এখন কেজি প্রতি ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর সরু চাল এখন কেজি প্রতি ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণের দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই চাল আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এক দিকে আমদানি করা হচ্ছে বেশি পরিমাণ, তেমনিভাবে আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন (এলসি খোলা) করা হচ্ছে ব্যাপক হারে। গত ৬ মাসে প্রায় ৩৩ লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। এ সময়ে চাল আমদানি হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ টন। বাকি প্রায় ১০ লাখ টন পাইপলাইনে রয়েছে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধু চাল আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক আমদানি ব্যয়ের ওপর প্রভাব পড়েছে। নভেম্বরে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার হার বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তবে চাল আমদানির পাশাপাশি নভেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের। এ কারণেই সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলার সঙ্কট দেখা দেয়। এ সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করে, যা আজো অব্যাহত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাপক ভিত্তিতে চাল আমদানি করা হলেও এর সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমে গেছে। এতে মোটা চাল প্রতি কেজি আমদানিতে ৩৩ টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকার ওপরে। এ বিষয়ে চালের মজুদদার ভাঙতে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে চাল আমদানির সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না, শুধু এর বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রাই চলে যাবে। এতে এক দিকে, যেমন বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাবে, সেই সাথে আপদকালীন ব্যয় মেটানোর জন্য ডলারে টান পড়বে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই আমদানির ওপর তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন বলে ওই কর্মকর্তা মনে করছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/286311