১৮ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৩৭

রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট

চুলা জ্বলছে না অনেক বাসায়

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাটে ছয় বান্ধবী নিয়ে থাকেন শান্তা রহমান পিংকি। সবাই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরিও করেন তারা। ক্লাস-কাজ সামলিয়ে বাসায় পড়াশোনার সময় এমনিতেই তাদের কম। সেই কম সময়ও এখন হাতছাড়া। সারাদিন এবং সন্ধ্যায় বাসায় গ্যাস থাকে না। মৃদু গ্যাস আসে রাত ১টার দিকে ঘুমের সময়। এরপর মিটমিট আগুনে রান্নাবান্নায় পেরিয়ে যায় রাত চারটা। সকাল ৯টা থেকে সেই ক্লাস-অফিস সামলাতে অনেকটা দিশেহারা তারা। মান্ডার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হারুনুর রশিদ বাদশা। তার ওয়ার্ডে (দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবগঠিত ৭১নং ওয়ার্ড) বাস করে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। সম্প্রতি তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে তারা গ্যাস সংকট ও ভোগান্তির কথা জানান। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি নয় বরং অবনতিই হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকায় রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পাইপলাইনে গ্যাস থাকে। বাকি সময়ে চলে গ্যাসের জন্য হাহাকার। নির্ঘুম রাত কাটছে গৃহিণীদের-এলাকাবাসীদের।

গ্যাস সংকটে এমন ভোগান্তির ঘটনা রাজধানীতে এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে দক্ষিণ ঢাকা হোক কিংবা উত্তর। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সংকটের তীব্রতাও বাড়ছে। ফলে বেড়েছে হয়রানি, নেমেছে অতিরিক্ত খরচের খড়গ।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, মুগদা, মান্ডা, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মগবাজার, মালিবাগ, মধুবাগ, শাহজাদপুর, মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, আদাবর, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কাফরুল, পল্লবী, বংশাল, লালবাগ, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষ দিনের সিংহভাগে গ্যাস পাচ্ছেন না। গ্যাস পেলেও তার সরবরাহ খুবই কম। ফলে চুলা জ্বলে টিমটিম। আবার অনেক এলাকায় সারাদিনেও গ্যাস থাকে না। রাত ১২টা-১টার দিকে গ্যাস আসে, ৫টা-৬টায় চলে যায়। রাত জেগে রান্নাবান্না ছাড়া বিকল্প নেই অধিকাংশের হাতে। সংকট সামলাতে সামর্থ্য অনুযায়ী কারো রান্না ঘরে জায়গা করে নিয়েছে কেরোসিনের চুলা কিংবা মাটির চুলা, কারো রান্নাঘরে ইলেক্ট্রিক চুলা। অনেকে বাড়িয়েছেন রাইস কুকার, কারি কুকার এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহার। কিছু পরিবারের রান্নাঘরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার।

শীতকালে গ্যাসের মৌসুমী চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে সরবরাহে ঘাটতি বাড়ায় এবং পুরনো-ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিতরণকারী সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। গ্যাস না পাওয়ায় প্রতিদিনই তিতাস গ্যাসের জরুরি ফোন নম্বরে কল করে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। গ্যাস সংকটের তথ্য জানিয়ে দৈনিক অন্তত ৫০টি অভিযোগ আসছে তিতাসে।

পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাসের সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ আবাসিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে। আবাসিক ছাড়াও বিদ্যুেকন্দ্র, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সিএনজি স্টেশনগুলো গ্যাস সংকটের ভুক্তভোগী। দেশে এমনিতেই চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি প্রায় ৭০ কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে শীতকালীন চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ঘাটতি আরো বেড়েছে।

 

http://www.ittefaq.com.bd/capital/2018/01/17/143864.html