১৭ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১০:১৭

বিতর্কের মধ্যেই ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস

মন্ত্রিসভার প্রস্তাব অপরিবর্তিত রেখে জাতীয় সংসদে ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হয়েছে। সংশোধিত আইনের বিধান অনুযায়ী বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে একই পরিবারে চার সদস্য থাকার সুযোগ ও একটানা নয় বছর পরিচালক পদে থাকার বিধান যুক্ত হয়েছে। ওই বিধানের

কঠোর সমালোচনা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা প্রস্তাবিত আইনকে ব্যাংক-খাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন। তারা বিল পাসের আগে তুমুল হট্টগোল করে অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করেন। গতকাল রাতে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

বিলের ওপর বিরোধীদলীয় সদস্য মো. ফখরুল ইমাম, নূরুল ইসলাম ওমর, নূরুল ইসলাম মিলন, বেগম রওশন আরা মান্নান ও স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর অর্থমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণে আপত্তি জানান। এ সময় বিরোধীদলীয় সদস্যরা বিলের ওপর আলোচনার জন্য আরো সময় চান। কিন্তু স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার সময় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিল পাসের এই প্রক্রিয়ায় সময় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এনিয়ে হৈ-হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীদলীয় সদস্যরা। স্পিকার তাদেরকে সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান। কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তারা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় সদস্যরা বেরিয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিলটি পাস হয়। এর আগে স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বিলের সমালোচনা করে বলেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে ছিলেন। পাকিস্তানের ২২ পরিবারের হাত থেকে অর্থ উদ্ধারে তিনি লড়াই করেছেন। কিন্তু সেই চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে এই আইনটি করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

একটি পরিবারকে ব্যাংকের মালিক করা হচ্ছে দাবি করে মো. ফখরুল ইমাম বলেন, আইনটি পাস না করে প্রত্যাহার করা হলে আমরা খুশি হবো। আর একই দলের নূরুল ইসলাম ওমর জনগণের স্বার্থে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন। বিশেষ মহলের চাপে আইন পাসের মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে ধ্বংসের চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানান নূরুল ইসলাম মিলন। অবশ্য তাদের ওই আশঙ্কা সঠিক নয় বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি তাদের জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এদিকে পাস হওয়া আইনে একটানা নয় বছর পরিচালক পদে থাকার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন সদস্য একটি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারতেন। আর তিন বছর করে পরপর দুই মেয়াদে মোট ছয় বছর একই ব্যক্তি পরিচালক হতে পারেন। এরপর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারো পরিচালক হতে পারেন। এ বিষয়ে সংশোধিত আইনে পরিচালকের মেয়াদ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার পরে কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে একাধিক্রমে নয় বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। নয় বছর পদে থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে তিনি পরিচালক পদে পুনঃনিযুক্তির জন্য যোগ্য হবেন না। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ পাস হওয়ার পর থেকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের মেয়াদ-সম্পর্কিত ধারাটি পাঁচবার সংশোধন করা হয়েছে। এই ধারায় ব্যাংকের পর্ষদে একজন পরিচালক কত বছর পরিচালক থাকতে পারবেন, সে কথা বলা রয়েছে। সর্বশেষ ধারাটি সংশোধন করা হয় ২০১৩ সালে। উল্লেখ্য, গত ১২ই সেপ্টেম্বর সংসদে উত্থাপনের পর বিলটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর পর ২৯শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত কমিটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান উপস্থিত থাকলেও অর্থমন্ত্রী ছিলেন না। যে কারণে আলোচনা হয়নি। তবে প্রতিমন্ত্রীসহ কমিটির সব সদস্য মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই বিলের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সর্বশেষ মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতেই বিলটি অপরিবর্তিত রেখে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি। এর আগে গত বছরের ৮ই মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদনের পর থেকে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা প্রস্তাবিত আইনের সমালোচনা করে আসছেন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=100876