১৭ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১০:১৩

কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনের প্রস্তুত্তি নিচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

জাতীয়করণের দাবিতে প্রথম দিনের অনশনে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ৬০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়েছে। এদিকে আন্দোলনরত অবস্থায় এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।
অনশনের প্রথমদিন শেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, শিগগিরই তাদের দাবি মানা না হলে কাফনের কাপড় পরে লক্ষাধিক শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন।

গত পাঁচ দিন ধরে লাগাতার ধর্মঘটের পরও সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সোমবারও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রামী ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়কারী মো. নজরুল ইসলাম রনি এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মো. রবিউল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন-শিগগিরই দাবি না মানা হলে কাফনের কাপড় পরে লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নেয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো প্রকার প্রাণহানি ঘটার আগেই এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
শিক্ষকরা জনান, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পাঁচটি সংগঠনের সমন্বয়ে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরাম’ গঠন করা হয়েছে। এ ব্যানারে ১০ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সুধীসমাজ শিক্ষকদের এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে ক্যান্সার শরীরে বাসা বাঁধলেও লড়াই করেই টিকে ছিলেন কলেজ শিক্ষক মো. আকরামুজ্জামান। কিন্তু হঠাৎ একটি দুঃসংবাদের শুনে আর শেষ রক্ষা হয়নি। গত বছরের ১০ অক্টোবর হঠাৎ মারা যান তিনি। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ সরকারি হওয়া গোপালগঞ্জের মকসুদপুর কলেজে আত্তীকরণ বঞ্চিত ইসলামী শিক্ষা বিভাগের এই প্রভাষকের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।
বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও খিলগাঁও মডেল স্কুলের সহকারী শিক্ষক মতিউর রহমান দুলাল এ তথ্য জানিয়ে বলেন, গতকাল সকাল থেকেই আমাদের আমরণ অনশন শুরু হয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন করে যাবো। আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনবেন এবং শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণা দেবেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য এবং শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের বিকল্প নেই। ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের এই যৌক্তিক দাবি আদায়ে আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (নজরুল), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (শাহ আলম-জসিম) , জাতীয় শিক্ষক পরিষদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন মিলে গঠন করা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরাম। শিক্ষকদের দাবি গত ৫০ বছর ধরে জাতীয়করণের বিষয়টি ঝুলে আছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিতে চাইলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানে তাদের বসতে দেওয়া হয়নি। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন তারা।
লিয়াজোঁ ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব জানান, শিক্ষা ব্যবস্থায় দুই নীতি থাকা জরুরি নয়। এটাকে জাতীয়করণ করতেই হবে। না হলে শিক্ষার মান এবং পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
বেতন ভাতা, ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা, ঈদ বোনাস নিয়ে চরম বৈষম্যের শিকার বলে দাবি করেন শিক্ষকরা। তাদের এই অবস্থা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

http://www.dailysangram.com/post/315540