১৬ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৬:০৭

শেয়ার বাজারে কারসাজির নায়করা সক্রিয় হচ্ছে?

ব্যাংক ঋণের লাগাম টানার সংবাদ চাউর করে কারা লাভবান হচ্ছে? শেয়ার বাজারে কারসাজির নায়করা কি তবে সক্রিয় হয়ে উঠছে? এমন প্রশ্ন এখন পুঁজিবাজারে। আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে বাজারে আরেক দফা পতন ঘটিয়ে সরকারকে বিব্রত করার অপচেষ্টা চলছে বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বশেষ ২০১০ সালের কেলেঙ্কারির পর বিগত সময়ে বাজারের গতি নানা মাত্রা পায়। বাজার সংশোধন ও দামের সীমিত উল্লম্ফণের মধ্যে মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল শিল্পে অর্থায়নের বিকল্প উত্স এই বাজার। কিন্তু হঠাত্ করেই ব্যাংকের ঋণ প্রসঙ্গ টেনে বাজার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং সূচকের নিম্নগামিতা তা প্রমাণ করছে। এ অবস্থায় খুদে বিনিয়োগকারীরাও শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

আগের কেলেঙ্কারির সময়েও ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ কমিয়ে আনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এবারে বলা হচ্ছে- ব্যাংকের ঋণ ও আমানত রেশিও কমিয়ে আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কমাতে হতে পারে। মার্জিন লোনও কমে যাবে। এই গুজব ছড়ানোর পর পুঁজি হারানোর ভয়ে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং যারা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত তারাও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও বাজারে সূচক কমেছে।

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু এডি রেশিও যাকে ঋণ ও আমানতের আনুপাতিক হার বলে তা কিছুটা কমানো যায় কি না— সে চিন্তা করছে। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয় এবং বলা হচ্ছে- ৫ শতাংশ কমানো হবে তাও সঠিক তথ্য নয়।

তারপরও শেয়ার বাজার যে হারে কমছে তা অস্বাভাবিক বলেছেন অনেকেই। ক্ষুদে বিনিয়োগকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে আছি। এই বাজারে বিনিয়োগ করে পুঁজি খোয়ানো সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মাহুতিও দিয়েছেন। সবার আশঙ্কা আবারো নতুন কারসাজির দিকে যাচ্ছে কি না।’

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুজব ছড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করা এ বাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সিদ্ধান্ত আসার আগেই একটি গোষ্ঠী অতি মুনাফা করতেই এধরনের হীন প্রচেষ্টা চালায়। বিনিয়োগকারীদের হুজুগে কান না দেয়াই উচিত। তাদের মতে, এটা ঠিক যে ব্যাংকের ঋণ প্রদানের সক্ষমতা কমানো হলে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষমতা কমে যাবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত আসার আগেই বাজারকে ফেলে দেওয়া রহস্যজনক।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরেই শেয়ার বাজারে চাউর হয়েছে যে, ‘প্রথাগত ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে। আর ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮৮ শতাংশ করা হতে পারে। অনুত্পাদনশীল খাতে ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোকে চাপে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।’

এই প্রচারণার পর বিনিয়োগকারীদের অনেকেই শেয়ার ক্রয়ে বিরত থাকছেন যা সূচক ও লেনদেন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, এডিআর কমানোর ফলে বাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ অনেক কমে যাবে বলে যে কথা বাজারে উঠেছে তা আসলে ঠিক নয়। কারণ ব্যাংকগুলোর মোট ঋণে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ খুব কম। তাই এডিআর কমানো নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

এদিকে, চলতি বছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সহায়ক উদ্যোগ রয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। সে ক্ষেত্রে আরেক দফা কারসাজির ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর সে কারণে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই বাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে চেষ্টা শুরু করেছেন। বিভিন্ন স্থানে টেলিফোনে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বাজারকে গতিশীল রাখতে গতকালও দু’একজন মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

 

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2018/01/16/250583.html