১৬ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৬:০৪

সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বে অবহেলায় যানজট

নূরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় যানজটের ভোগান্তি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। যানজট হবে কি হবে না, নাকি ভয়াবহ হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে টোল প্লাজার উপর। ভুক্তভোগিদের মতে, টোল প্লাজার সবগুলো বুথ খোলা থাকলে যানজট খুব একটা হয় না। গাড়ির চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের শেষ দিনে উভয় দিকে গাড়ির চাপ বেশি থাকলেও সবগুলো টোল বুথ খোলা থাকলে যানজট খুব বেশি ভয়াবহ হয় না। আবার ছুটির দিনে যানজট দীর্ঘ হওয়ার কারন টোল বুথ বন্ধ থাকা।
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মতে, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজার ওজন পরিমাপক যন্ত্রে ধীরগতি, সেতু এলাকার নদী বন্দরে বালুবাহী ট্রাকের উল্টো পথে চলাচল ও মালবাহী কাভার্ড ভ্যানের ইচ্ছেমতো চলাচলের কারনে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়। আর গাড়ির চালকরা জানান, টোল প্লাজায় দায়িত্বরতরা একেবারে আনাড়ি হওয়ায় এমনিতেই দুই মিনিটের স্থলে ৪/৫ মিনিট সময় লাগে। এভাবে একটা গাড়িতে ৫ মিনিট করে লাগলে শত শত গাড়ি টোল দিতে গিয়ে দীর্ঘ লাইন হয়ে যায়। দুরপাল্লার বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় ৮টি বুথের মধ্যে চারটি খোলা থাকে বেশিরভাগ সময়। পিকআওয়ারে খোলা হয় আরও দুটি। বাকী দুটো বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। যেদিন ওই দুটো বুথ খোলা থাকে সেদিন যানজট খুব একটা দীর্ঘ হয় না। গাড়ির ধীরগতির কারনে কিছুটা সময় বেশি লাগে। দুই সপ্তাহ আগেও এর প্রমান মিলেছে। এনা ট্রান্সপোর্টের এক চালক জানান, দু’সপ্তাহ আগে সবগুলো বুথ খোলা থাকায় সপ্তাহের প্রথম দিনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতেও যেমন যানজটে পড়তে হয়নি। পরদিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথেও যানজট ছিল না।

জানা গেছে, গত বছরের ২২ জুলাই মেঘনা-গোমতী সেতুতে কম্পিউটারাইজড ডিজিটাল টোল আদায় পদ্ধতি উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। যানজট কমাতে ঐ দিনই অতিরিক্ত বুথ বসানোর ঘোষণা দেন তিনি। এরপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হয় আরো চারটি বুথ। সেপ্টেম্বরে চালু হয় এসব বুথ। অনেকের মতে, অতিরিক্ত চারটি বুথ বসানো হলেও দক্ষ জনবল নিয়োগ না দেয়ায় কোটি টাকা বিনিয়োগের খুব একটা সুফল মেলেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে টোল আদায়কারীদের বেশিরভাগই অদক্ষ। তাদের কম্পিউটারের উপর একাডেমিক কোনো ডিগ্রী নেই। সবাই দেখে দেখে প্রাকটিস করে শিখেছে, কেউ কেউ এখনও শিখছে। এর মধ্যে কয়েকজন দক্ষ হলেও বেশিরভাগ আনাড়ি রয়ে গেছে। আবার ৮টি বুথে তিন শিফটে কাজ করার জন্য যে পরিমান লোকবল থাকার কথা তাও নেই। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব নারায়ণগঞ্জ জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর। তিনি কোনোদিন টোল প্লাজায় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন এমন নজিরও নেই। অনেকের মতে, নির্বাহী প্রকৌশলী রহস্যজনক কারনে টোল প্লাজার ধারেকাছেও যান না। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে তিনি কথাও বলতে চান না বলে নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগিরা জানান, পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াত দ্রুত ও সহজ করতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু সে উদ্দেশ্য পূরণ হয় নি। বরং উল্টো কয়েক কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে এবং যাতায়াতের সময় না কমে বেড়েছে। যানজট পরিস্থিতি দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে।

হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মহাসড়কটি চারলেনের। কিন্তু মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা সেতু দুই লেনের। এতে করে সব গাড়ি দ্রুতগতিতে এসে স্বাভাবিকভাবেই সেতুর টোল প্লাজার সামনে গতি কমিয়ে দেয়। আবার টোল আদায়ে ধীর গতির কারণে একটি গাড়ি সেতুতে উঠতে উঠতে পেছনে লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়। এ সারি দীর্ঘ হতে হতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তা অসহনীয় অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। তবে প্রাইভেট কার ও বাস চালকদের মতে, মহাসড়কে দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব এবং উভয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় টোল দিতে সময় বেশি লাগে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, এই দুই সেতুতে যানজট লাগে অব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল ভুলের কারণে। তার ওপর টোল প্লাজায় ট্রাক ওয়ে মেশিন। শুধু ট্রাক নয়, কোন গাড়িই এখন ওয়ে মেশিনের প্রক্রিয়া শেষ না করে টোল প্লাজা পার হতে পারছে না। এ কারনে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চালকসহ সাধারণ যাত্রীরা।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/112860