১৬ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৬:০২

রাজধানীতে চুলা জ্বলে না অনেক এলাকায়

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও ভোর ৭টার আগেই গ্যাস চলে যায়, আসে রাত ১২টার দিকে। নগরীর কোথাও গ্যাসের দেখা মিললেও দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে আবার চলে যায়। কিছু এলাকায় চুলা জ্বলে নিবু নিবু। ফলে এক বেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে অনেক পরিবারকেই। অনেক গৃহিণী আবার গভীর রাতে রান্নার কাজ শেষ করে রাখেন।

কেউ কেউ সিলিন্ডারের গ্যাসে রান্না-বান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। তীব্র গ্যাস সংকটে পাড়া-মহল্লার খাবারের দোকানে ভিড় করছে মানুষ। গ্যাস সংকটের কারণে গাড়ির গ্যাস নিতে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেকের ঘরে সপ্তাহ ধরে গ্যাস নাই। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে মিরপুরের মাজার রোড, বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, শেখেরটেক, বিশিল, টোলারবাগ, কলওয়েল পাড়া, রাইনখোলা, গুদারাঘাট, শাহ্ আলী থানার ডি ব্লক, এফ ব্লক, সি ব্লক, রূপনগর আবাসিক এলাকা, শিয়ালবাড়ী, বেড়িবাঁধ, দারুসসালাম থানার বিভিন্ন ব্লকে গ্যাসের সংকট চলছে। এর বাইরেও মিরপুর ১২, কালসী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলার কিছু কিছু ব্লকে গ্যাসের সমস্যার কথা জানান এলাকার বাসিন্দারা। তাদের বেশির ভাগের বাড়িতে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এর মধ্যে কয়েকটি এলাকায় এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। দুপুরের পর যেসব বাড়িতে গ্যাস আসে তা আবার রাত ৮টার পরেই চলে যায়। গ্যাস সংকটে পরে অনেকের গৃহস্থালির কাজ করতে হয় ভিন্ন উপায়ে। কিছু কিছু বাসা সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেছে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষের সে সুযোগ নেই। টানা গ্যাস সংকটে পরে অনেকের আবার হোটেলের খাবারের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। পাইপলাইনে গ্যাস কম থাকায় সব চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন চাকরিজীবী মানুষ। এসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষের অবস্থাও একই রকম। তাদেরকে রান্নার জন্য উঠতে হয় খুব ভোরে। ৬টার আগেই আবার গ্যাস চলে যায় বলে সব রান্নাবান্না এর আগেই সারতে হয়। এদিকে গ্যাস সংকটের কবলে পরে সিএনজি ফিলিং স্টেশন দেখা যায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন। মিরপুরের গুদারাগাটের বাসিন্দা নাদিরা বেগম বলেন, গত ১০/১২ দিন ধরে গ্যাসের সমস্যায় পড়ছেন। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার আগেই গ্যাস চলে যায়। বিকালে গ্যাস আসলেও দুই তিন ঘণ্টা পরে পুনরায় চলে যায়। অনেকদিন ধরে রান্না করে তার বেগ পেতে হচ্ছে। আবার এক বেলা রান্না করেও তাকে তিন বেলা খেতে হয়। তিনি আরো বলেন, শীত আসার আগেই প্রতিবছর এমন সমস্যা দেখা দেয়। তবে কর্তৃপক্ষর এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। দুই ছেলে নিয়ে পরিবারের খাওয়া-দাওয়া ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শাহ-আলী থানার ডি ব্লকের বাসিন্দা শাহিদা বেগম বলেন, আমি অন্যের বাসায় কাজ করি। তিনটা বাসায় কাজ করতে হয়। গ্যাস সংকট দেখা দেয়ার পরে প্রায় দুই একটি বাসার রান্না বাকি রেখে চলে আসতে হয়। নিজের বাসার রান্না করতে যেয়ে দেখি গ্যাস নাই। গ্যাস আসার জন্য অপেক্ষা করতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত। মাঝেমধ্যে দুপুরে রান্নার সুযোগ হয় তবে সব রান্না শেষ করতে পারি না। মিরপুর শেওড়াপাড়ার জুবায়ের জানান, আমাদের বাসায় গ্যাস থাকে তবে একেবারেই কম। শুধু ভাত রান্না করতেই এক ঘণ্টার উপরে লেগে যায়। এদিকে মিরপুরের কয়েকটি সিএনজি স্টেশন-এর কর্মকর্তারা জানান, গত তিন চার দিন ধরে তাদের গ্যাস সরবারহ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে গ্যাস নিতে যেয়ে সিএনজি ড্রাইভারদের বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখা যায়।
আরেক গৃহিণী মোহাম্মদপুরের রেহেনা। গ্যাস সংকটের কারণে তার পরিবারের সদস্যরাও বাসার খাবার খেতে পারছে না বেশ কয়েকদিন ধরে। রেহেনা বলেন, গ্যাস বিলতো মাস শেষে ঠিকই নিচ্ছে। এক টাকাও কম রাখে না কোনো মাসে। কিন্তু রান্না করার সময় আমরা লাইনে কোনো গ্যাসই পাই না। এটা রীতিমতো আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে বেহাল অবস্থা বনশ্রী কল্যাণ সমিতি আবাসনের সি-ব্লকের মিতা বিশ্বাসেরও। তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, আগে গ্যাসের ঘাটতি ছিল ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তীব্র শীতের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, গত শনিবার গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ২৬৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এই দিন সরকারি ছুটি থাকলেও চাহিদা ছিল ৩৩৯৯ মিলিয়ন ঘনফুট। শীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানাগুলো চালু থাকায় সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সংকট তীব্র হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ। এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান বলেন, শীতের কারণে রাজধানীর বেশির ভাগ বাসাবাড়ির লোক ঘর গরম রাখার জন্য প্রায় ২৪ ঘণ্টা চুলা জ্বালিয়ে রাখে। সে কারণেই ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বেশি গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, এমনিতেই ৫০০ মিলিয়ন সরবরাহ কম থাকায় তাদের হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর এখন আবার চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সারকারখানা বন্ধ না করা গেলে রাজধানীর এ সংকট কখনোই কমানো সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি। অবৈধ সংযোগের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের অজান্তেই অনেক সময় বিভিন্ন বস্তি এলাকার মানুষ চুরি করে গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আমরা নিয়মিত এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। যেখানেই অবৈধ সংযোগের খবর পাই, সেখানেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। শীতের প্রকোপ কমলে গ্যাসের এই সমস্যা থাকবে না বলেও জানান তিনি।


 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=100757