১৬ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৫:৫৯

প্রকল্প ব্যয়ের সঙ্গে বাড়ছে মেয়াদও

ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন * লক্ষ্য জাহাজ ও সমুদ্রতীরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ

সমুদ্র নিরাপত্তায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমুদ্রে নজরদারি বাড়ানো, নৌ-পরিবহন সহায়তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সমুদ্র তীরভিত্তিক সুবিধাদি স্থাপন ও পরিচালনা এবং সামুদ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজ করা হবে। গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম (জিএমডিএসএস) এবং ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম স্থাপন নামে প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কনভেনশন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা পূরণ হবে। তবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে মেয়াদও।

সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এ মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
এটি বাস্তবায়নে ৪৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৯১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সেখানে ৮৫ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। তবে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

একনেকের জন্য তৈরি কার্যপত্রে কমিশনের পক্ষে মতামত দেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ। এতে তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমুদ্রে জাহাজের নিরাপত্তা, নজরদারি, নৌ-পরিবহন সহায়তা ও ২৪ ঘণ্টা নেভিগেশনাল যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সমুদ্র তীরভিত্তিক অন্য সুবিধাদি স্থাপন ও পরিচালনা করা সম্ভব হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এবং এক্সিম ব্যাংক অব কোরিয়া থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। ২০১৩ সালের ২ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা উল্লেখ করে তা সংশোধনের কারণ আরও সুস্পষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে। এর ব্যাখাও দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এছাড়া সিকিউরিটি গার্ড রুম, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কার্যক্রম, অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম, গ্যাসলাইন স্থাপনে কার্যক্রমসহ বিভিন্ন নতুন অঙ্গের অন্তর্ভুক্তির সুস্পষ্ট যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এসব অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে বলা হয়েছে। ভূমি উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ও পরিমাণ পুনঃপরীক্ষা করে যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (ইউএনসিএলওএস) এবং সেফটি অব লাইফ অ্যাট সি (এসওএলএস) কনভেনশনের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌ-নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক শর্তগুলো কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করতে দায়বদ্ধ। গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেমসহ (জিএমডিএসএস) বেতার যোগাযোগের জন্য সমুদ্র উপকূলীয় স্থাপনা, ভেসেল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, জাহাজের তথ্য প্রদান পদ্ধতি, নৌ-চলাচলে সহায়তা, জাহাজের নিরাপত্তা সতর্কীকরণ পদ্ধতি, দূরবর্তী জাহাজ চিহ্নিতকরণ এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণ বিষয়ে লং রেঞ্জ আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাকিং অব শিপস (এলআরআইটি) কার্যক্রমগুলো এসওএলএস অনুযায়ী করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) মাধ্যমে পরিচালিত মোংলা এবং ছিলিমপুর রেডিও স্টেশনে জিএমডিএসএসের যন্ত্রপাতি বা জনবল নেই। সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার এবং কুতুবদিয়াতে তিনটি লাইট হাউস (বাতিঘর) রয়েছে। এগুলো অনেক পুরনো এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না পাওয়ার ফলে লাইট হাউসগুলো যথাযথ কার্যকর নয়। এছাড়া কুয়াকাটা, নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর এবং দুবলার চরে আরও ৪টি লাইট হাউস স্থাপন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় স্থলভিত্তিক অবকাঠামো এবং অন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদিও দেয়া প্রয়োজন। এজন্য ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ১১ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ৪৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। গত বছরের ২৬ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ প্রস্তাব করা হয়। ওই সভার পর পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) প্রকল্পের ব্যয় ৪৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হল- ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৯ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৩ হাজার ৪৫০ মিটার বাউন্ডারি এবং রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, সিকিউরিটি গার্ড রুম নির্মাণ, ইন্টারনাল অ্যাপ্রোচ রোড, ৭৫ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট ৬টি উপকূল রেডিও স্টেশনের জন্য ৪৫০ মিটার স্টিল টাওয়ার নির্মাণ, ইন্টারনাল ইলেক্ট্রিক ওয়ার্কস, ফাইয়ার ফাইটিং ওয়ার্কস, সিভিল ওয়ার্কস, দুটি যানবাহন ক্রয়, তিনটি কেবিন টাইপ পেট্রুল বোট ক্রয় এবং ৫৮ জনের স্থানীয় ও ২৫ জনের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দেয়া।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/7321