গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ৭ম দিনের মতো চলছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির আমরণ অনশন
১৬ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৪

তীব্র ঠাণ্ডায় গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনশনে থাকা ইবতেদায়ী শিক্ষকরা

তীব্র ঠাণ্ডায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনে থাকা ইবতেদায়ী শিক্ষকরা গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় এই সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যা ১৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, অনশনে থাকলেও তারা কোন চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এজন্য সরকারের কাছে আবেদন করেও চিকিৎসক পাননি। গত ১০ তারিখে মেডিকেল টিম চেয়ে আবেদন করা হয় সরকারের কাছে।
শিক্ষকরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেও তারা কোন রকম সহায়তা পাচ্ছেন না। এজন্য তারা কেবল রাস্তায় শুয়ে আছেন। যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন হচ্ছে তাদেরকে নিজেদের মধ্যে থাকা পল্লী চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। স্যালাইন টানিয়ে দিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায় স্যালাইনের কেনোলা হাতে নিয়ে শিক্ষকরা রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর ওষুধ দেওয়া হচ্ছে একটি জায়গা থেকে। স্বেচ্ছাসেবক মো: আবু সাঈদ দৈনিক সংগ্রামকে জানান, গতকালও ১৯ জনকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে যারা পল্লী চিকিৎক রয়েছেন তারাই অসুস্থ সহকর্মীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া কিছুই করার নেই।

এদিকে শিক্ষকরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও দাবি থেকে নড়ছেন না শিক্ষকরা। তারা বলছেন প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রী জাতীয় করণের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচী পালন করা হবে। দাবি থেকে একচুলও নড়া হবে না।
প্রসঙ্গত, রোববার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগে ২৫ জন শিক্ষক নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুই মন্ত্রী। ইবতেদায়ী শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে জানানোর আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙার অনুরোধও করেন তারা। কিন্তু শিক্ষকরা তাতে রাজি হননি।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলেই আমরা বিশ্বাস করবো। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ইবতেদায়ী মাদরাসার সংখ্যা ১০ হাজার। ৪৪ হাজার শিক্ষক। কেউ এক টাকাও বেতন পান না। শুধুমাত্র একবার কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করেছিল, তখন দেড় হাজার মাদরাসাও সেই আওতায় নিয়েছিল। কিন্তু বাকিরা অনাহারে থাকে। আমরা জাতীয়করণ ছাড়া প্রেসক্লাব থেকে এক চুলও নড়বো না।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বর্তমান মহাজোট সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করে। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো সরকারি একই সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারের সব কাজে অংশগ্রহণ করে। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পায়। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা তেমন কোনও বেতন ভাতা পান না। তবুও তারা শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ১৫১৯টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ২৫০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ২৩০০ টাকা ভাতা পান।

http://www.dailysangram.com/post/315391