জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির আমরণ অনশন চলছে। ছবিটি গতকাল শনিবার তোলা
১৪ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৮:৪১

পাঁচ দিনের অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১৪৭ মাদরাসা শিক্ষক

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে রাজপথে অনড় শিক্ষকরা। বেতন বৈষম্যের শিকার মানুষ গড়ার এই কারিগরদের এখন দাবি একটাই-জাতীয়করণ। শিক্ষার মান ও পরিবেশ বজায় রাখতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা। আর সেই দাবিতেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা পঞ্চম দিনের মতো আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা। আর বেসরকারি শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবিতে ১০ জানুয়ারি থেকে অবস্থান নিয়েছেন বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজ রোববারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে আগামিকাল সোমবার থেকে তারাও অনশন শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ৯ দিনের অবস্থান ধর্মঘটের পরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আশ্বাস পাননি ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা। পরে ৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা আমরণ অনশন শুরু করেন। তাদের একমাত্র দাবি, ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন গতকাল সন্ধ্যায় দৈনিক সংগ্রামকে জানান, সন্ধ্য পর্যন্ত তাদের ১৪৭ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মাদরাসা শিক্ষকদের অনশনে একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারকে শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির আ স ম রব এবং গণফোরাম সেক্রেটারি মোস্তফা মহসিন মন্টু। গতকাল মাগরিবের পর শিক্ষকদের অনশনস্থলে আসেন মাহমুদুর রহমান মান্না। এর আগে বিকেল ৪টায় আসেন আ স ম রব এবং সকাল ১১ টায় আসেন মোস্তফা মহসিন মন্টু।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সাল থেকে একই পরিপত্রে রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাইমারি ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা করা হয়। পরে ধাপে ধাপে ২০১৩ সালে ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করে সরকার। কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
অনশনরত শিক্ষকরা বলছেন, ইবতেদায়ী মাদরাসার সব কার্যক্রম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতোই। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেলেও ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা তেমন কিছুই পান না। এই দুর্মূল্যের বাজারে ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা অমানবিকতার শিকার বলে মন্তব্য তাদের।

রুহুল আমিন বলেন, অনশনরত শিক্ষকদের মনোবল আমাদের থেকেও শক্তিশালী। জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা কোনও অবস্থাতেই রাজপথ ছেড়ে যাবেন না।
ইবতেদায়ী শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, অনশনের পঞ্চম দিন পর্যন্ত অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাত জন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা কিছুটা আশঙ্কাজনক।
অন্যদিকে, বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে গত ১০ জানুয়ারি থেকে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরাম। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে শিক্ষকরা এতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন। বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের নেতৃত্বে প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকরা
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (নজরুল), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (শাহ আলম-জসিম), জাতীয় শিক্ষক পরিষদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন মিলে গঠন করা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরাম।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা আমাদের একমাত্র দাবি। গত ৫০ বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে আছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। রনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমাদের অবস্থান নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানে আমাদের বসতে দেয়া হয়নি। তাই আমরা এখানে চলে এসেছি। ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকবেন জানিয়ে লিয়াজোঁ ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় দুই নীতি থাকা চলবে না। একে জাতীয়করণ করতেই হবে। তা না হলে শিক্ষার মান ও পরিবেশ ধরে রাখা সম্ভব নয়।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, বেতন-ভাতা, ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা, ঈদ বোনাস নিয়ে চরম বৈষম্যের শিকার তারা। তাদের এই অবস্থা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

 

http://www.dailysangram.com/post/315212