১৪ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৮:৩৮

নানা অযুহাতে ঢালাওভাবে বন্ধ হচ্ছে শিল্প

* সাড়ে চারশ’ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিকে আছে মাত্র ৬২টি
* নতুন করে আর কোন শিল্পও গড়ে উঠছে না

শিল্প সহায়ক নীতি গ্রহণ না করায় দেশে এখন সরকারিভাবেই ঢালাওভাবে বন্ধ হচেছ শিল্প। অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, দীর্ঘ একযুগেও অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদানে আশানুরূপ কোন পরিবর্তন হয়নি। বেসরকারি পর্যায়ের একমাত্র তৈরি পোশাক খাত শিল্পটিই জিডিপি’তে একক অবস্থান ধরে রেখেছে। এর বাইরে সরকারিভাবে বৃহৎ এবং মাঝারি শিল্প উল্লেখেেযাগ্য কোন অবস্থান রাখতে পারছে না। গত অর্থ বছরে (২০১৬-২০১৭) শিল্প খাতের অবদান ছিল ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, অথচ এর আগের অর্থ বছরেই (২০১৫-২০১৬) এই হার ছিল ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরেই জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান কমেছে প্রায় এক শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সেক্টর আছে ৬টি। এর মধ্যে বিসিআইসি, বিএসএফআইসি, বিএসইসি, বিজেএমসি, বিটিএমসি ও বিএফসিআইসি। আর এই ৬ সেক্টরের প্রতিষ্ঠান আছে ৬০/৬২ টির মতো। এক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল প্রায় সাড়ে ৪ শত। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ঢালাওভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে শুধু বন্ধই করে গেছে, নতুন করে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেনি।
বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার লোভে তাদের পরামর্শে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পখাতকে ধংস করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের শাসনকালে (১৯৭৫-৮১) মোট ২৫৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করা হয়। যার মধ্যে ১১০টি ছিল বৃহৎ আকারের পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশান এর অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮২ সালের নতুন শিল্পনীতিতে বেসরকারিকরণের ওপর আরো জোর দেওয়া হয়, মাত্র ৬টি সেক্টর ছাড়া আর সমস্ত সেক্টরে বেসরকারি বিনিয়োগ অবাধ করে দেওয়া হয়। দেশীয় পুঁজিপতি ও বিদেশী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের আস্থায় আসার জন্য অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে বেসরকারিকরণ শুরু হয়। এক বছরের মাথায় ২৭টি টেক্সটাইল মিল ও ৩৩টি পাট কল পানির দরে বিক্রি করে দেয়া হয়। এছাড়া ১৬ মাসের মাথায় ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী ২১টি মাঝারি শিল্প বিক্রি করে দেয়া হয়। যার ৭৮ শতাংশই ছিল লাভজনক এবং বিক্রি করার কিছুদিনের মধ্যেই যার ৮০ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের এক জরিপে দেখা গেছে, একটি শিল্পের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৫/৩০ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। কাজেই ৮০ বা ৮৪ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন ক্ষমতা যেহেতু বহু আগেই সেগুলোর স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে বসে আছে। বিএমআর করে কোনোমতে সেগুলো ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে চলছে। এসব প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন করা না হলে হয়তো আর টিকিয়ে রাখাও সম্ভব হবে কি-না, সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে আরো দেখা যাচেছ, অর্থনীতিতেও শিল্প খাত তার আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। গেলো অর্থবছরে শিল্পখাতে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ছিল (বৃহৎ ও মাঝারি) ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা পূর্ববতী অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ছিল ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এখন থেকে প্রায় একযুগ আগে, অর্থাৎ ২০০৪-০৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছির ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকেই বুঝা যাচ্ছে আমাদের শিল্পখাত খুব একটা ভাল অবস্থানে যাচ্ছে, তা বলা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে শিল্পায়ন হচ্ছে না। বরং রাষ্ট্রীয় খাতে বৃহৎ শিল্পগুলোকে বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে ঢালাওভাবে শুধু বন্ধই করা হয়েছে, গড়ে তোলা হয়নি। আর বর্তমানে যেসব বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প আছে সেগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। কারণ-কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছর অতিক্রম করেছে। সেগুলো এখন খুঁড়িয়ে চলছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/315152