১৪ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৮:৩৭

নির্বাচনের কারচুপির প্রতিকার-প্রতিবিধানের দায়িত্ব ইসির

গত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জালিয়াতির কয়েকটি নমুনা। বাম থেকে : (১) একটি ব্যালট বইয়ের প্রতিটি পাতায় আ’লীগ মেয়র প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা হয়েছে, (২) নির্বাচন কর্মকর্তা নিজেই ব্যালটে সিল মারলে তা প্রতিপক্ষের লোকেরা ধরে ফেলে, (৩) একজন যুবক অবিরাম ব্যালট পেপারের পাতা ছিঁড়ছেন আর আরেকজন সিল মেরে বাক্সে ঢোকাচ্ছেন, ভোটার নম্বর দেখে ব্যালটের পাতায় পাতায় সিল দিচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তা ও দলীয় কর্মীরা -ফাইল ফটো
বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় ‘ভোট কারচুপি’ একটা স্থায়ী রোগের রূপ নিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এযাবত সংঘটিত নির্বাচনী কারচুপির ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অন্তত ২৫টি তরিকায় এই অপকৌশল অবলম্বন করা হয়।

এসব অপকৌশল থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মুক্ত করার এবং এর প্রতিকারের দায়িত্ব সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এখানে এই কারচুপি-তরিকার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। বিভিন্ন সময় নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
১. দলীয় প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসার : নির্বাচনে কারচুপি করার জন্য পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করা হয়। কারচুপির পরিকল্পনা সফল করতে দলীয় অনুগত অথবা সুবিধাভোগী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়ার জন্য সবরকম কলাকৌশল অবলম্বন করা হয়। কেননা এরা হলেন ভোট নিয়ন্ত্রণ ও গণনার মূল ব্যক্তি। এরাই হতে পারেন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিপরীতে কারচুপিরও প্রধান ক্রীড়নক।
২. ভোটার তালিকার প্রতি নজর : ভোটের দিন প্রথমেই নজর দেয়া হয় ভোটার তালিকার প্রতি। এতে নাম থাকা মৃত ব্যক্তি, বিবাহ হওয়ায় অন্য স্থানে গমনকারি মহিলাগণ, প্রবাসীগণ, অন্যত্র চাকরিরত ব্যক্তিগণ, ভোটকেন্দ্রে যেতে অক্ষম রোগী বা পঙ্গু ব্যক্তি প্রভৃতিদের চিহ্নিত করা হয়। ভোট শুরু হওয়ার সূচনা লগ্নেই কারচুপির জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে এসব ভোট কাস্ট করে ফেলা হয়।

৩. মামলা-জেলের ভয় : কথিত ‘প্রতিপক্ষে’র নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানো বা জেলে ঢোকানোর ভয় দেখানো হয়। এদেরকে ভয় দেখিয়ে বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে ভোট সংগ্রহ করতে বাধ্য করা হয়, নয়তো তাদেরকে ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকতে হুমকি দেয়া হয়। এর ফলে ‘প্রতিপক্ষে’র ভোট বৃদ্ধির হার কমে যায়।
৪. উদ্দেশ্যমূলক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি : নির্বাচনী এলাকার যেসকল স্থানে ‘প্রতিপক্ষ’ শক্তিশালী সেসব এলাকায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়। এতে কখনো দলীয় ক্যাডার এবং ক্ষেত্রবিশেষে আইনপ্রয়োগে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এর ফলে সেসব স্থানের ভোটারগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে সাহস পায় না। ভোটের দিন কেন্দ্রে আসার পথেও ভীতি সৃষ্টি করা হয়।
৫. প্রচারণায় বাধা-হুমকি : বিরোধীপক্ষের প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদান করা হয়ে থাকে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়, প্রচার মাইক কেড়ে নেয়া হয়, সভা-সমাবেশ ও প্রচার মিছিল পণ্ড করে দেয়া হয়। পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ‘বিরোধী’ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুঁশিয়ারি-হুমকি দেয়া হয়।

৬. ভোট কেনা-বেচা : নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোট কেনা-বেচা করা হয়। এই অপকৌশল বাংলাদেশে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যেসব এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বেশি সাধারণত সেসব এলাকায় ভোটের আগের রাতে চলে ‘টাকার খেলা’। দরিদ্রদের মধ্যে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করেও ভোট কেনা-বেচা চলে। এজন্য ‘দালাল’ নিয়োগ করা হয়। পাড়া-মহল্লার রাস্তা মেরামত করা, টিউবওয়েল বসিয়ে দেয়া, বিদ্যুৎ লাইন দেয়া প্রভৃতির মাধ্যমেও ভোটারদেরকে প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে ফেলা হয়।
৭. প্রার্থীর দেয়া ভোজে অংশগ্রহণ : ভোটের দায়িত্বে সম্ভাব্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পিকনিক-মিলাদের নামে বিশেষ ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। ভোটের দিন সকালে-দুপুরে কোনো বিশেষ প্রার্থীর বা তার লোকের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করানো হয়। এসময় ‘বিশেষ উপহার’ প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মীদের প্রভাবিত করা হয়।
৮. প্রার্থীর বাড়ির কাছে কেন্দ্র : বিশেষ প্রার্থী পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে অনেক সময় তার বাড়ির কাছে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে সক্ষম হন। এর ফলে সেই প্রার্থীর গায়ের জোর বেড়ে যায়। তিনি সেই কেন্দ্রের ভোট প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেন। কেন্দ্রটি তার একান্ত ‘নিজের’ হয়ে যায়।

৯. পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়া : মহল্লার ভোটারদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়া হয়। বিশেষ প্রার্থীর ক্যাডাররা ভোটারদের বলে যায়, ‘তোমাদের ভোট পেয়ে গেছি, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই।’
১০. এজেন্টদের বের করে দেয়া : ভোট গণনা অবশ্যই প্রার্থী বা তার প্রতিনিধির সামনে হওয়ার বিধান আছে। কিন্তু কারচুপি করার সুবিধার জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়- যাতে প্রার্থী বা তার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হতে বা থাকতে না পারে। প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টদেরকে বুথ থেকে বের করে দেয়া অতি সাধারণ ঘটনা। এর ফলে বিশেষ প্রার্থীর লোকেরা ইচ্ছেমত ভোট কাস্ট ও গণনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
১১. ডামি এজেন্ট ও ভোটার : ভোটে কারচুপি করার লক্ষ্যে বিশেষ দল বা পক্ষের ‘ডামি’ এজেন্ট ও ভোটার ব্যবহার করার অভিযোগও পাওয়া যায়। বুথে হয়তো দেখা যাবে সব প্রার্থীরই এজেন্ট রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বেশির ভাগই বিশেষ একটি পক্ষের লোক। এরা ভুয়া পরিচয় নিয়ে পোলিং এজেন্ট সেজে ভোট পাহারা দেয়। আবার, বিরোধী পক্ষের ভোটারদের কেন্দ্রে আসতেই দেয়া হয়নি। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক, দেশী-বিদেশী সাংবাদিকসহ গণমাধ্যমের লোকজন আসলে তাদের দেখে ‘নিজেদের’ লোকজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং ভোটার উপস্থিতির পরিমাণ জানান দেয়া হয়।

১২. ভোটকেন্দ্রে শক্তিমত্তা প্রদর্শন : ভোটের দিন ‘প্রতাপশালী’ প্রার্থীর ক্যাডাররা কেন্দ্রের আশেপাশে সদর্পে মিছিল করে স্লোগান দেয়, অহেতুক ‘হুই’ তোলে। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের ‘শক্তিমত্তা’ প্রদর্শণ করে। এতে একদিকে সাধারণ ভোটাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়, অন্যদিকে নির্বাচনকর্মীরা আতঙ্কিত হয়। এই অবৈধ কর্মকা- ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের প্রায়ই অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায়।
১৩. অন্ধকার ও সংকীর্ণ পরিসর : কারচুপি করার লক্ষ্য নিয়ে কোন কোন স্থানে ভোট কেন্দ্র রাখা হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও সংকীর্ণ পরিসর। ভোট গণনাকালে পর্যাপ্ত আলো-বাতির ব্যবস্থা থাকে না। ভোট গণনায় অহেতুক সময় ক্ষেপণ করা হয়, ফলাফল প্রকাশে দেখা যায় ধীরগতি।
১৪. একজনের ১০ আঙ্গুলের টিপ : ভোট দিতে গিয়ে ব্যালট পেপার গ্রহণ করার জন্য একেকজন হাতের ১০টি আঙ্গুলের টিপ দিয়ে একসঙ্গে ১০টি ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে পারে। ভোট গ্রহণকারী ব্যক্তি বিশেষ কোন প্রার্থীর পক্ষের লোক হলে তিনি এতে সহায়তা দিয়ে থাকেন।

১৫. সাংবাদিক-পর্যবেক্ষদের বাধা প্রদান : নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিচয়পত্র প্রদানেও নানা কারসাজির আশ্রয় নেয়া হয়। সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। জাল ভোটের দৃশ্য ধারণ করলে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়। ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি-ভিডিও নষ্ট করে ফেলা হয়।
১৬. ব্যালট বান্ডিলে কারচুপি : ভোট গণনার জন্য প্রতীকে দেয়া সিল অনুযায়ী ব্যালট পৃথক পৃথকভাবে সাজানো হয়। এটি কোন বিধান নয়- প্রথা। এভাবে ১০০টি করে বান্ডিল করা হয়। এক্ষেত্রে কারচুপি করার মনোবৃত্তি থাকলে (প্রিজাইডিং/পোলিং অফিসারের জ্ঞাতসারে) এক পছন্দের প্রতীকের বান্ডিলের ভেতর বিপক্ষীয় প্রার্থীর ব্যালট ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এতে কাঙ্খিত প্রার্থীর ব্যালটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং বিপক্ষীয় প্রার্থীর ব্যালটের সংখ্যা কমে যায়। বিশেষ বিশেষ কেন্দ্র বেছে নিয়ে এটা করা হয়। এসময় প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টরা যাতে বিষয়টি ধরতে না পারে অথবা বুঝলেও ফাঁস না করে দেয়- কারচুপিকারিরা তার ‘যথাযথ’ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রয়োজনে এসব এজেন্টকে কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়।

১৭. ব্যালট বাক্স ছিনতাই : যে কেন্দ্রে কোন প্রার্থীর বেশী ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নির্বাচন বাঞ্চাল করে দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এই ঘটনা এক ‘ঐতিহাসিক’ প্রথায় পরিণত হয়ে গেছে।
১৮. ব্যালট পেপার ছিনতাই : অবৈধভাবে কেন্দ্র দখল করে কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সেগুলো নিজের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা হয়। এটি বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
১৯. স্বাক্ষর ছাড়াই রেজাল্ট শিট : ভোটের রেজাল্ট শিট চূড়ান্ত করতে কেন্দ্রে উপস্থিত প্রার্থী অথবা তার প্রতিনিধি তথা প্রার্থীর এজেন্টদের স্বাক্ষর গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু কারচুপি করার লক্ষ্যে এমন স্বাক্ষর গ্রহণ ছাড়াই রেজাল্ট শিট চূড়ান্ত করা হয়। এর ফলে ভোটের সংখ্যা পরিবর্তন করে একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে বিজয়ী করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

২০. ভোট দেয়া হয়ে গেছে : সাধারণ ভোটাদের কেন্দ্রে প্রবেশের পর হাতে কালি লাগিয়ে দিয়ে বলা হয় তাদের ‘ভোট দেয়া হয়ে গেছে’। ফলে ভোট না দিয়েই ওই ভোটারদের কেন্দ্র থেকে ফিরে আসতে হয়। বিগত সময়ে দলের একেকজন কর্মী ১শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ পর্যন্ত ভোট দেবার ‘গৌরব’ অর্জনের রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়। কোন কোন স্থানে পুরো একটি পরিবারের ভোট অন্যরা দিয়ে দেয়।
২১. পুরো বই মেরে দেয়া : ভোট শুরুর প্রাক্কালে ব্যালট বই নিয়ে বিশেষ প্রার্থীর প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কোন কোন স্থানে পুরো বইটাই একটি প্রতীকের সিলে ভরা থাকে। ফলে অনেক ভোটারকেই ব্যালট না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। ভোটগ্রহণকারী ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় কিংবা ভীতির মুখে পড়ে একাজে সহযোগিতা করে থাকেন।
২২. ভীতি ও চাপের মধ্যে রাখা : বিভিন্নভাবে নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মীসহ অন্যান্যদেরকে ভীতি ও চাপের মধ্যে রাখা হয়। চাকুরিতে সমস্যা সৃষ্টি করা, পারিবারের ক্ষতি করার হুমকি প্রদান, জানমালের ক্ষতির হুমকি প্রদানও চলে কোন কোন ক্ষেত্রে।

২৩. শতকরা হার বেশি দেখানো : পূর্বেই ছক কষে দেয়া হয় কোথায় কী মাত্রায় কারচুপি করা হবে। দায়িত্বশীল অফিসারকে ব্যবহার করে কাস্টিং ভোটের শতকরা হার বৃদ্ধি করে পছন্দের প্রার্থীর হিসাবে বেশি ভোট দেখিয়ে বিজয়ী করার ব্যবস্থাও করা হয়। এজন্য ‘সাজানো’ রেজাল্ট দ্রুত ঘোষণা করে দেয়ার আয়োজন করা হয়।
২৪. অসহায় পোলিং এজেন্ট : ভোটকেন্দ্রে বিশেষ পক্ষ কোন কোন ক্ষেত্রে এতোটাই প্রতাপ বিস্তার করে যে সেখানে পোলিং এজেন্টদের কোন আপত্তিই আমলে নেয়া হয় না। কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা ‘প্রতিপক্ষে’র পোলিং এজেন্টদের সাক্ষরও গ্রহণ করেন না। কোন কোন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ফলাফল সিটও সরবরাহ করা হয় না। কোন পোলিং এজেন্ট কথা বললে তাদেরকে প্রশাসনের ভয় দেখানো হয়। ফলে তারা একপ্রকার অসহায় অবস্থায় পতিত হয়।
২৫. শেষ সময়ে চাপ সৃষ্টি : ভোট গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার পরেও বিশেষ প্রার্থীর চাপে কেন্দ্রে ভোটারের নামে দলীয় লোক ঢুকিয়ে ব্যালট গ্রহণ ও সিল মারার মহড়া চলে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা দৃঢ়তা প্রদর্শণ করলেই তবে এই চাপ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।

অভিজ্ঞদের বক্তব্য : ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে আইন-বিধান যথেষ্ট থাকলেও বিশেষ পক্ষের প্রভাব-প্রতাপ এবং চাপ-হুমকির কাছে এসব আইন-বিধান অকেজো হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে কারচুপির প্রধান অস্ত্র ‘জোর খাটানো’। কেন্দ্রের বাইরে এবং ভেতরে এই অবৈধ কর্মকা- বন্ধ এবং জোর-জবরদস্তি ঠেকানো গেলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব। পুলিশের একজন সাবেক কর্মকর্তা জানান, সবপর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপরেই প্রধানত নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ নির্ভর করে। তারা বিশেষ কোন ‘পক্ষ’ নিয়ে নিলে আর কোনভাবেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না- উল্লেখ করে তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা জানান। এসব অপকৌশল থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মুক্ত করার এবং এর প্রতিকারের দায়িত্ব সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ সেই অপকৌশলের দিনে আর ফিরে যেতে চায় না দেশবাসী। তছনছ হয়ে পড়া নির্বাচন ব্যবস্থার নিরাময়ই ইসি’র কাছে জাতির একমাত্র প্রত্যাশা বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

http://www.dailysangram.com/post/315151