১৩ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৪১

প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০০ কোটি টাকা যাবে পরামর্শক খাতে

নির্দেশনার চার বছরেও আধুনিক বিজ্ঞান জাদুঘর হয়নি

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিলেও প্রায় চার বছরেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি অত্যাধুনিক ও বিশ^মানের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি জাদুঘর প্রকল্পটি। এখনো জাদুঘর ভবনের নকশাই চূড়ান্ত করা হয়নি। অথচ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শককে দিতে হবে এক শ’ কোটি টাকার বেশি। সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রস্তাবনা নিয়ে পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। তখন তিনি জাদুঘরের বর্তমান স্থাপনা ভেঙে একটি বিশ^মানের অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনার প্রায় চার বছর পর পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির খ্যাতনামা বিজ্ঞান জাদুঘর ঘুরে এসে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। আর ডবি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে।
প্রকল্প বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তারা জানান, নানা প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়ার কারণে এই বিলম্ব। তবে এই ব্যাখ্যা পরিকল্পনা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি এখনো প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়নি। প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের পর প্রকল্পে স্থাপিতব্য প্রদর্শনীবস্তুর সাথে প্রস্তাবিত ভবনের কক্ষগুলোর আকার উচ্চতা ইত্যাদি চূড়ান্ত হলে প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে নেয়া হবে। তবে স্থাপনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোরিয়ান ও জার্মান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হলে ভালো হতো। সার্বিক বিষয়ে অধিকতর ভালো ফলের জন্য কোরিয়ান ও জার্মান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেলে ভালো হতো। তবে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তার বিনিময়ে তারা জাদুঘর নির্মাণকাজ তাদের দিয়ে করাতে হবে বলে পূর্বশর্ত আরোপ করে। তাই তাদের সহায়তা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় বিভাজনে বলা হয়েছে : ১ শ’ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৫০ জন মানের পরামর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরামর্শকের মাসিক সম্মানী ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখানে ১২ জনের বেশি পরামর্শক থাকবেন। প্রকল্পটির কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বা প্রকল্পের সমুদয় কাজ বুঝে নেয়া পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত থাকবে। পরিকল্পনা কমিশন এই ব্যয়ের ব্যাপারে আপত্তি তুলে এটাকে যৌক্তিক করার জন্য সুপারিশ করেছে।

প্রকল্পের নির্মাণকাজের দায়িত্ব থাকবে গণপূর্ত অধিদফতরের। আর এই নির্মাণকাজের ব্যয় হবে প্রায় ৪১৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ দিকে প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি নয় সদস্যের দল বিদেশ সফর করে এসেছে। তারপরও প্রায় আড়াই কোটি টাকা রাখা হয়েছে বৈদেশিক সফরের জন্য। পরিকল্পনা কমিশন এই খাতের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

এ দিকে প্রকল্পে এক হাজার ৫ শ’ কোটি টাকা রাখা হয়েছে প্রদর্শনীবস্তু বা শিক্ষামূলক যন্ত্রপাতির জন্য। প্রস্তাবিত পরামর্শক এসবের তালিকা তৈরি করবেন। এখানে বাংলাদেশের কোনো বিশেষজ্ঞ থাকার তথ্য নেই। এ ক্ষেত্রে এসবের আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের পরই সব মূল্য চূড়ান্ত হবে। এখানে প্রকল্পের ব্যয় অনেকটাই ধারণাগত বলে পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, গ্যালারি বা বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনীবস্তু বা শিক্ষামূলক যন্ত্রপাতির বিস্তারিত তালিকা সংযোজন করে বিস্তারিত বিভাজনসহ এ খাতের ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে যতদূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক করে খসড়া প্রকল্প প্রস্তাবনাতে সংযোজন করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/284497