ফের হকারদের দখলে গুলিস্তানের সড়ক
১৩ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৯

ফুটপাথের পর রাস্তাও হকারদের দখলে

স্টেডিয়াম ও মহানগর নাট্যমঞ্চ হয়ে যে রাস্তাটি গোলাপশাহ মাজারের দিকে চলে গেছে তাতে তীল ধারণের ঠাঁই নেই। রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরে থাক সাধারণ মানুষে চলার পথটুকুও নেই। আছে ফল-ফলাদি, জুতা-স্যান্ডেল, জামা-কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দোকান। রাস্তার দুই ধারে বেরিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাহারায় রাখা হয় দুইজন আনসার সদস্যকে। তারা যানবাহন ভিন্ন পথে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এই রাস্তাটুকুতে দুই শতাধিক হকার বসানো হয়েছে। পথচারীদের ব্যবহৃত রাস্তা বন্ধ করে সেখান থেকে প্রায় অর্ধলাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। এভাবেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা দখল করে হকার বসানো হয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব আয়োজন ভেস্তে গেছে। ফুটপাথের চেহারা সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। ফুটপাথ দখল শেষে এখন কোনো কোনো এলাকার রাস্তাও দখলে চলে গেছে হকারদের। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ফুটপাথে একজন মানুষের হাঁটারও রাস্তা নেই। বেশ কিছু দিন ধরেই ফুটপাথের হকার উচ্ছেদের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন। বিভিন্ন স্থান থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়। বিকেল ৪টার আগে হকাররা যাতে যত্রতত্র না বসতে পারে সেজন্য সিটি করপোরেশন থেকেই কর্মী মোতায়েন করা হয়। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাথে গড়ে ওঠা পাকা ঘর ভেঙে ফেলা হয়। ফুটপাথে যে স্থায়ী দোকানগুলো গড়ে উঠেছিল সেগুলোও উচ্ছেদ করা হয়। সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগের কিছু দিন সুফলও পাওয়া যায়। মানুষ অন্তত হাঁটার সুযোগ পেয়েছিলেন কয়েক দিন। এখন রাজধানীর ফুটপাথজুড়ে কেবল হকার আর হকার। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাথ দিয়ে মানুষ হেঁটে যাবেন নেই সুযোগও নেই। আর এখন পুরোটাই নির্বিকার ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এমনকি তারা ফিরেও তাকাচ্ছেন না ফুটপাথের দিকে।
রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, ক্রীড়া ভবন, দৈনিক বাংলা, স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, কাপ্তান বাজার, দিলকুশা, মতিঝিল, ফকিরাপুল, টিকাটুলি, সদরঘাট, বঙ্গবাজার, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজ, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, জুরাইন, শাহবাগ, মালিবাগ-মৌচাক, ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর ১০ নম্বর, শ্যামলী, গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হকার উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ওই সব এলাকা এখন আবার কানায় কানায় পূর্ণ। তীল ধারণের ঠাঁই নেই ফুটপাথে। হকারদের বক্তব্য, ফুটপাথ যত দিন আছে তারাও তত দিন আছেন। কেউ তাদের উচ্ছেদ করতে পারবে না। আর উচ্ছেদ করলেও যারা লাভবান তারাই তাদের আবারো ফুটপাথে বসাবে। হকারদের অভিযোগ তারা ঠিকই টাকা দিয়ে ফুটপাথে ব্যবসায় করছেন। এই টাকার ভাগ নিচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য, সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক কিছু নেতাকর্মী এবং লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা। হকার বসাতে পারলেই টাকা আর টাকা। এই টাকার ভাগতো সবাই পায়। একাধিক হকার ও হকার নেতা বলেছেন, রাজধানীর প্রতিটি ফুটপাথে একজন করে লাইনম্যান আছে। এই লাইনম্যানরাই নিয়ন্ত্রণ করে হকারদের। তারাই ফুটপাথ ভাড়া দেয়। তারাই হকারদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে সবাইকে পৌঁছে দেয়। এই লাইনম্যানরা বছরের পর বছর একই কাজ করছে। তাদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সখ্য থাকায় ফুটপাথের অলিখিত ইজারাদার তারাই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁদাবাজ ও লাইনম্যানরাই তাদের ফুটপাথে বসায়। উচ্ছেদের পর স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতেও আবার হকার বসেছে। বঙ্গভবনের পাশে দিলকুশাজুড়ে হকার বসেছে। এখানে রাস্তাও এখন আর বাকি নেই। রাস্তার ওপরে হকার বসছে। এমনকি, মাছ-গোশত সবই বিক্রি হচ্ছে এই রাস্তার ওপর। একই অবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের সামনেও। যেখানে মাছ-গোশতসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনেও বিশাল কাঁচাবাজার বসছে। দৈনিক বাংলা পার হয়ে পল্টন পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে তীল ধারণের ঠাঁই নেই। এখন চৌকি বসিয়েছে রাস্তার একাংশ দখল করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথ থেকে যারা নিয়মিত অর্থ আদায় করছে তারা বরাবরই বহাল তবিয়তে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের সাথে পুলিশের কিছু সদস্যের সখ্য থাকায় ওই সব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু ওই মামলার আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/284498